সম্পাদকীয় ১...
বাইক বাহিনী
মোটরসাইকেলে সওয়ার হইয়া কপালে কিংবা মুখে ফেট্টি বাঁধিয়া দলীয় সমর্থকদের মিছিল করার ঐতিহ্য পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বামফ্রন্টের আমলেই সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। ফ্রন্টের প্রধান শরিক সি পি আই এমের সমর্থকরাই তাঁহাদের প্রভাবিত এলাকায় প্রভাব ধরিয়া রাখিতে কিংবা বিরোধী পক্ষ প্রভাবিত এলাকায় আপন প্রভাব বিস্তার করিতে এমন ‘রোড-শো’-র আয়োজন করিতেন। নির্বাচনের পূর্বাহ্ণে এ ধরনের বাইক-বাহিনীর প্রদর্শনী নিজের শক্তিপ্রদর্শন এবং প্রতিপক্ষকে তটস্থ করিতে ব্যবহৃত হইয়া থাকে। বামপন্থীরা দুই বছর আগে ক্ষমতাচ্যুত হইলেও তাঁহাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া অন্য সব ব্যাপারের মতো বাইক-মিছিলের আয়োজনেও শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস দ্রুত দড় হইয়া ওঠে। প্রাক্-নির্বাচনী সন্ত্রাস ও হিংসার ঘনায়মান প্রেক্ষাপটে বাইক-বাহিনীর মিছিলের নেতিবাচক প্রভাব লইয়া নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়ের হইলে কমিশন তাহা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সেই মর্মে জেলায় জেলায় নির্দেশনামাও পৌঁছাইয়া যায়। কিন্তু সংবাদপত্রে প্রকাশিত আলোকচিত্রমালা বলিতেছে, কমিশনের অভিপ্রায় ও নির্দেশ বানচাল করিতে সব রাজনৈতিক দলই কমবেশি তৎপর। এ ব্যাপারে তৃণমূল-সি পি আই এম-কংগ্রেস, কোনও ভেদ নাই।
আলোকচিত্র সহসা মিথ্যা বলে না, এই ‘সাজানো ঘটনা’র যুগেও না। প্রকাশিত চিত্রমালায় যে সারিবদ্ধ বাইক-সওয়ারিদের দেখা যাইতেছে, তাহাদের সকলের শরীরী ভাষাই যে সতত মারমুখী, এমনটা হয়তো নয়। বস্তুত, অন্তত একটি চিত্রে বাইক-আরোহীরা রীতিমত হাস্যোজ্জ্বল। কিন্তু গ্রামে-গঞ্জের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানেন, পাঁচ-ছয়শো কিংবা কয়েক হাজার মোটরবাইকে সওয়ার দলীয় সমর্থকরা যখন উচ্চ স্বরে স্লোগান দিতে-দিতে পাড়ামহল্লা পরিভ্রমণ করে, তখন কেমন যেন হাড়-হিম-করা এক সন্ত্রস্ত ভাব দর্শক-শ্রোতাদের আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে। অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারে তেমন আতঙ্কের বিলক্ষণ হেতুও আছে। এই প্রেক্ষিতেই এ ধরনের নির্বাচনী প্রচারকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের পরিপন্থী বলিয়া গণ্য করা হইতেছে। কিন্তু দেখা যাইতেছে, ‘আগে অনুমতি দেওয়া হইয়া গিয়াছিল’ কিংবা ‘আমাদের কাছে এ ধরনের মিছিলের খবর নাই’ জাতীয় মন্তব্য করিয়া প্রশাসনের তরফে দায় এড়াইবার চেষ্টা চলিতেছে। ইহা দুর্ভাগ্যজনক। প্রশাসন যদি নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ শিরোধার্য না-করে, তবে সেটা সংবিধান উল্লঙ্ঘনেরই শামিল। দুর্ভাগ্যবশত, পশ্চিমবঙ্গে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের স্তর হইতে কমিশনের বিরুদ্ধে নিয়ত যে বিষোদ্গার চলিয়াছে, তাহাই এক দিকে বিভিন্ন দল ও তাহার সমর্থকদের কমিশনকে অগ্রাহ্য করিতে উৎসাহিত করিতেছে, অন্য দিকে প্রশাসনকেও কমিশনের নির্দেশ না মানিতে প্ররোচিত করিতেছে।
রাজ্যের শাসক দলের ‘সর্বভারতীয় সভাপতি’র বক্তব্য: রাজ্যবাসীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের ফলেই এখন ঘরে-ঘরে সাইকেলের বদলে মোটরসাইকেল, তাই মিছিলেও তাহার প্রদর্শনী। তাঁহার বক্তব্য মানিয়া লইলে অবশ্য রাজ্যবাসীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের কৃতিত্ব প্রধানত ভূতপূর্ব বাম সরকারকেই দিতে হয়, কেননা বাইক-বাহিনীর আস্ফালন সে সময়েই তুঙ্গে উঠিয়াছিল, আর বাইকগুলি সবই নিশ্চয়ই বর্তমান জমানার জাতক নয়। সে ক্ষেত্রে রাজ্যের যাবতীয় দুর্যোগ ও দুর্ভোগের দায় প্রতিপক্ষ বামপন্থীদের উপর চাপাইবার রাজনীতিটাও কিঞ্চিৎ দুর্বল ও অন্তঃসারশূন্য হইয়া পড়ে। তবে এই সব সূক্ষ্ম তত্ত্ব সর্বভারতীয় সভাপতি হয়তো ভাল বুঝিবেন না, তাঁহার অনুগামীরা তো দূরস্থান। আপাতত নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ যাহাতে প্রশাসনিক অফিসাররা বিডিও, এসডিও, জেলাশাসক, পুলিশ সুপারগণঅক্ষরে-অক্ষরে পালন করেন, সেটা দেখাই কর্তব্য। বাইক-বাহিনীর মিছিল হইতেই কিন্তু প্রার্থীদের উপর, প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকদের উপর আক্রমণ হইতেছে এবং পুলিশ কার্যত নিধিরাম সর্দারের ন্যায় নিষ্ক্রিয় দাঁড়াইয়া রহিয়াছে। তাই নির্বাচনী হিংসা ও সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করিতেই এ ধরনের শক্তি-প্রদর্শনের শোভাযাত্রা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটি অন্যথায় আরও বেশি করিয়া প্রহসনে পরিণত হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.