রথযাত্রা মানেই তারকাখচিত পালার বায়না পেতে চিৎপুরের যাত্রাপাড়া সকাল-সন্ধে সরগরম। এ বার সেই রথযাত্রার দিনেই চিৎপুরের এক অন্য যাত্রার সূচনা হল।
এ মরসুমের রকমারি যাত্রার খুঁটিনাটি খবর গ্রামে-গ্রামে পৌঁছে দিতে বুধবার একটি যাত্রা ডিরেক্টরি প্রকাশ করল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যাত্রা অ্যাকাডেমি। বাগবাজারে ফণিভূষণ বিদ্যাবিনোদ যাত্রামঞ্চে বইটি প্রকাশের পরে অ্যাকাডেমির সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানিয়ে দিলেন, “জেলাস্তরে প্রতি মহকুমা অফিসে এই বইটি রাখা থাকবে।” ‘যাত্রা-দর্পণ’ নামের এই বইয়ে এক-একটি পালার সচিত্র বিজ্ঞাপন, তারকাদের তালিকা থেকে শুরু করে দলের ফোন নম্বরও লেখা আছে। টিভি-ভিডিওর সঙ্গে রেষারেষিতে বেশ কয়েক বছর ধরেই গ্রামের বিনোদনের ক্ষেত্রে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে যাত্রা। চটুল নাচ-গানের অর্কেস্ট্রাও গ্রামে-গ্রামে ঢুকছে পুরোদমে। এ বছর গোদের উপরে বিষফোড়া হয়ে দেখা দিয়েছিল পঞ্চায়েত ভোট সংক্রান্ত টালবাহানা। যাত্রার বায়না করতে যাঁরা গ্রাম থেকে শহরে আসেন, সেই নায়েকরা অনেকেই কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মী। মাসের পর মাস ধরে ভোট নিয়ে অচলাবস্থায় এ বার তাঁদের চিৎপুরে আসা মাথায় উঠেছে। ফলে অনেক পালারই সে ভাবে বায়না জমেনি এ বার।
এই পটভূমিতে চিৎপুরের দলগুলোর পালার ফিরিস্তি সম্বলিত বইটি যাত্রাশিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনের কাছে নতুন ভরসার জায়গা হয়ে উঠতে চলেছে। পোড় খাওয়া অভিনেত্রী-পরিচালক রুমা দাশগুপ্ত কিংবা প্রয়োজক-লেখক মেঘদূত গঙ্গোপাধ্যায়েরা রাজ্য সরকারের সহায়তায় এই উদ্যোগটিকে অকুণ্ঠ স্বাগত জানিয়েছেন।
ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়ের পুত্র মেঘদূতবাবু বলছিলেন, “তখন রথের দিনে যাত্রাপাড়ার ভিড়ে চিৎপুরে গাড়িঘোড়া আটকে যেত। আগেভাগে বায়না পেতে রাত থেকে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতেন নায়েকরা। সে দিন আর ফিরবে না। তবে যাত্রা-দর্পণ বইটি ঠিক জায়গায় পৌঁছলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগে গ্রামের লোকের সুবিধে হবে।” যাত্রা অ্যাকাডেমির সভাপতি অরূপবাবুর কথায়, “এ এক ধরনের উলটপুরাণ। গ্রামের লোকে জেলায় বসেই বইটা উল্টে-পাল্টে পছন্দের পালাটি বেছে নিতে পারবেন। দালাল ধরে কলকাতার দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে না।”
যাত্রা-দর্পণে বিভিন্ন পালার খবরাখবর ছাড়াও রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছা-বার্তা। সঙ্গে অরূপ বিশ্বাসের বয়ানে, যাত্রাশিল্পের প্রসারে রাজ্য সরকারের কাজের ফিরিস্তি। কলকাতার বাগবাজারে যাত্রা অ্যাকাডেমির এই অনুষ্ঠানটি হলেও পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্-মুহূর্তে এই উদ্যোগ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনীতির কলাকুশলীরা। সরাসরি রাজনীতির প্রসঙ্গ অনুষ্ঠানে না-এলেও অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান মনে করিয়ে দিয়েছেন, “কিছু দিন আগে দুঃস্থ যাত্রাশিল্পীদের অর্থসাহায্যের অনুষ্ঠানেই আমরা বুঝতে পারি, ৩৪ বছর ধরে ওঁরা কষ্টে রয়েছেন। অনেকটা পথ এখনও যেতে হবে।” বাগবাজারের যাত্রামঞ্চটি সংস্কার করা ছাড়াও সেখানে যাত্রা অ্যাকাডেমির ভবনটি ঢেলে সাজা হয়েছে।
রথযাত্রার দিনে তাড়াহুড়ো করে ‘যাত্রা-দর্পণ’ প্রকাশ করতে গিয়ে অবশ্য বেশ কয়েকটি দলের নাম বাদ পড়েছে। তা নিয়ে ক্ষোভও রয়েছে। তবে অরূপবাবু বা যাত্রার প্রযোজকদের গোষ্ঠী পশ্চিমবঙ্গ যাত্রা সম্মেলনের কর্তা কনক ভট্টাচার্য জানিয়ে দেন, খুব শীঘ্রই বাকি দলগুলির পালার খবরও যাত্রা-দর্পণে অন্তর্ভুক্ত করে জেলায় পাঠানো হবে। শুধু চিৎপুরের দল নয়, পূর্ব মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ বা উত্তরবঙ্গের কয়েকটি দলের খুঁটিনাটিও ছাপার অক্ষরে প্রকাশের জন্য অ্যাকাডেমির তরফে তথ্য সংগ্রহ করা চলছে। যাত্রা অ্যাকাডেমির সদস্য ৬০টি দলের পালা, মূল অভিনেতাদের নাম, যোগাযোগের নম্বর সম্বলিত বড় ব্যানারও তৈরি করা হয়েছে।
|
বই প্রকাশ
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
স্বামী বিবেকানন্দের নিজের হাতের লেখার সংকলন ‘আ বোকে অফ বিবেকানন্দস রাইটিং’ বইটি প্রকাশ করলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী আত্মস্থানন্দ। বুধবার বেলুড় মঠের সংগ্রহশালায় এই অনুষ্ঠান হয়। বইটিতে রয়েছে স্বামীজির লেখা চিঠি, কবিতা, গদ্য প্রভৃতি। বই প্রকাশের পাশাপাশি স্বামীজির সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে তাঁর ব্যবহৃত সামগ্রী নিয়ে একটি প্রদর্শনীরও সূচনা হয় এ দিন।
|