লড়াইটা জমেছে!
বাঁকুড়া জেলা পরিষদের ২৫ নম্বর আসনের লড়াই। এক দিকে, খোদ শাসকদলের জেলা কো-চেয়ারম্যান অরূপ চক্রবর্তী। তাঁকে টক্কর দিতে সিপিএম মাঠে নামিয়েছে দলের বাঁকুড়া দক্ষিণ জোনাল কমিটির সদস্য তথা আন্ধারথোল লোকাল কমিটির সম্পাদক সমর মণ্ডলকে।
এলাকায় ডাকাবুকো নেতা হিসাবে পরিচিত, আন্ধারথোল পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য সমরবাবু যে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে কঠিন ঠাঁই, আড়ালে মানছেন তৃণমূল নেতারা। মানছেন, এটা তাঁদের ‘মর্যাদার লড়াই’। এই জেলার তিনটি ব্লকে ইতিমধ্যেই ৯০ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যাওয়ার পরেও এই আসনে জিততে তাই সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছে তৃণমূল। এই আসনের ফলের দিকে তাকিয়ে রয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলও।
অরূপবাবুর প্রচারে রঙিন। কখনও ছৌ নাচের দল, কখনও বা বাউল শিল্পীরা একতারা হাতে গান গাইতে গাইতে প্রচার সারছেন। গমগম করছে গোটা এলাকা। বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা হলেও অরূপবাবু নিজে সকাল থেকে রাত পড়ে থেকেছেন এলাকায়। জেতার এতটাই তাগিদ। হবে নাই বা কেন? জেলায় দল জিতলে তিনি-ই যে সম্ভাব্য সভাধিপতি! |
অরূপ চক্রবর্তী
তৃণমূল |
সমর মণ্ডল
সিপিএম |
• পেশা: ওকালতি।
• নেশা: রাজনীতি। আর ঘনঘন সিগারেট।
• প্লাস পয়েন্ট: সম্ভাব্য সভাধিপতি।
• মাইনাস পয়েন্ট: ভোট ময়দানে এই প্রথম।
এলাকায় তেমন পরিচিত নন।
• প্রতিদ্বন্দ্বী সম্পর্কে: বড্ড দুর্বল!
আমার যোগ্য একেবারেই নয়।
• লোকে বলে: বড্ড কেতায় ভরা! |
• পেশা: ছোট ব্যবসা।
• নেশা: রাজনীতি। সঙ্গে নাটকও।
• প্লাস পয়েন্ট: সঙ্গে আছেন অমিয় পাত্র।
• মাইনাস পয়েন্ট: সাদামাটা প্রচার।
তার উপরে বিপক্ষে হেভিওয়েট।
• প্রতিদ্বন্দ্বী সম্পর্কে: যোগ্য কে,
তা ঠিক করবেন ভোটার।
• লোকে বলে: গাঁয়ের ছেলে! |
|
প্রচারে তৃণমূল যতটাই সশব্দ, সিপিএম ততটাই নিঃশব্দ, অনেকটাই নিষ্প্রভ। সকাল বিকেল সাদামাটা ভাবে বাড়িবাড়ি গিয়ে প্রচার সেরেছে তারা। তবে, এই আসন যে তাদের কাছেও ‘স্পেশ্যাল’, তা স্পষ্ট, স্বয়ং দলের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের সক্রিয়তা দেখে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এই সদস্যই আসলে সমরবাবুর সমরকৌশলের নেপথ্যে।
দু’পক্ষের লড়াইটা তাই উপভোগ করছেন এই অঞ্চলের বাসিন্দারা। এমনিতে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীই রাজনীতির জগতে পোড় খাওয়া। জেলায় তৃণমূলের সংগঠন বাড়ানোর পিছনে অরূপবাবুর ভূমিকা অস্বীকার করেন না কেউই। তৃণমূল প্রার্থীদের ভোটের প্রচারেও এত দিন তিনি মুখ্য ভূমিকাও নিতেন। তবে, দলের প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়ছেন এই প্রথমবার। উল্টো দিকে, সমরবাবুও দীর্ঘদিন বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে আন্ধারথোল গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। পঞ্চায়েতের কাজকর্ম সম্পর্কে ধারণা রয়েছে বাঁকুড়া-১ ব্লকের এই বাসিন্দার। যে আসনে তিনি লড়ছেন, সেই এলাকায় তাঁর প্রভাবও কম নয়।
সমরবাবুর কথায়, “এলাকার মানুষ বিপদে-আপদে আগে আমার কাছেই ছুটে আসেন। আমি সব রকম ভাবে তাঁদের পাশে দাঁড়াই।” যা শুনে অরূপবাবু বলছেন, “আমিও গ্রামেরই ছেলে। বাঁকুড়া-১ ব্লকের মানুষদের সময়ে অসময়ে আমিও পাশে দাঁড়িয়েছি।” প্রতিদ্বন্দ্বীর উদ্দেশে তাঁর চ্যালেঞ্জ, “জেনে রাখুন আপনার আন্ধারথোল এলাকা থেকেই আমি সবচেয়ে বেশি ভোট পাব!” সমরবাবুর পাল্টা, “কে যোগ্য, তা নিয়ে মানুষই শেষ কথা বলবে।”
অরূপ-সমরের মহাসমর সত্যিই জমে গিয়েছে। |