রাত পোহালেই পঞ্চায়েতের প্রথম দফার ভোট। তার মুখে মঙ্গলবার সকালে নদিয়ার চাপড়ায় বোমা ছুড়ে, গুলি করে খুন করা হল তৃণমূল কর্মী মিঠু ঘোষকে (৩৭)। তার আগের দিন রাত দশটা নাগাদ পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরের খড়াই মোড়ে তৃণমূল কর্মী গঙ্গাধর মাইতির মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মারা হয়েছে। দুই ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির সিপিএমের দিকে। বর্ধমানের গলসির তাহেরপুরে এক সিপিএম কর্মীও বোমার আঘাতে আহত হয়েছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগণার পাথরপ্রতিমায় পঞ্চায়েতের এক সিপিএম প্রার্থীর স্বামীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
চাপড়ার হাতিশালায় পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হতেই উত্তেজনা শুরু হয়েছিল। সোমবার রাতে তৃণমূলের প্রচারে সিপিএম কর্মীরা বাধা দেন বলে অভিযোগ। দু’পক্ষের মধ্যে বোমা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। সকালবেলা পুলিশ এলাকা ছাড়তেই ফের
সংঘর্ষ শুরু হয়। এক সিপিএম কর্মীকে মারধর করা হয়। তারপরই সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা বোমা ছুড়তে ছুড়তে মাঠপাড়ায় ঢোকে। তৃণমূলের বিদায়ী পঞ্চায়েত সদস্য মান্নান শেখের বাড়িতে হামলা করা হয়। হামলা ও লুঠপাট হয়েছে আশপাশের বাড়িতেও। মহিলাদের নিগ্রহও করা হয় বলে অভিযোগ।
পাশেই ঘোষপাড়ায় মিঠুবাবুদের বাড়ি। ধানে জল দেওয়ার কাজ সেরে মাঠ থেকে ফিরে খাওয়াদাওয়া করে রাস্তার ধারে হাত ধুতে এসেছিলেন তিনি। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর অশীতিপর বাবা ভূপতি ঘোষ। আচমকা সিপিএমের লোকজন তাঁর দিকে বোমা ছোড়ে বলে অভিযোগ। |
ভূপতিবাবু বলেন, “আমার ছেলে বোমার আঘাতে পড়ে যায়। তখন ওরা তাকে গুলি করে খুন করে। আমাকেও মাটিতে ফেলে কোপাতে চেষ্টা করেছিল সিপিএমের লোকেরা। হাত জোড় করে প্রাণভিক্ষা চেয়ে রেহাই পেয়েছি।” মিঠুবাবুর মেয়ে হাতিশালা হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী রমা বলে, “ওদের আসতে দেখেই দরজা বন্ধ করে ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়েছিলাম। জানালার ফাঁক দিয়ে দেখি বাবাকে ওরা খুন করে চলে গেল।”
এই ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিঠুবাবুর স্ত্রী সুচিত্রাদেবী বলেন, “সিপিএমের কর্মীরা গ্রামে ঢুকছে দেখেই আমি ওকে ঘরে ঢুকে পড়তে বলেছিলাম। কিন্তু আমার স্বামী ভেবেছিলেন, তিনি সক্রিয় দলীয় কর্মী না হওয়ায় কেউ তাঁর গায়ে হাত দেবে না। তবু ওরা তাঁকে খুন করল।”
তখন বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়েছিলেন মিঠুবাবুর দাদা এলাকার পরিচিত তৃণমূল কর্মী অশোক ঘোষ। বিপদ আঁচ পেয়েই ছাদ থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যান তিনি। তাঁর কথায়, “আমাকেই খুন করতে চেয়েছিল ওরা। না পেয়ে ভাইকে খুন করেছে।” অশোকবাবুর কথায়, “জ্যাঠতুতো, খুড়তুতো ভাই-বোনদের ধরে আমাদের বাড়িতে ৫৪টা ভোট। আমরা যাতে ভয়ে ভোট দিতে না পারি, সে জন্যই এই হামলা।”
মিঠু, অশোক দুই ভাই-ই দলের কর্মী বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত। তাঁর দাবি, “এই ঘটনা প্রমাণ করল সিপিএমের হার্মাদ বাহিনী এখনও সক্রিয়। আমার কাছে খবর আছে হামলাকারীদের সিংহভাগই বহিরাগত।” বাড়ি ভাঙচুরে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের সামসুল ইসলাম মোল্লার বিরুদ্ধেও। সামসুল বলেন, “সব অভিযোগই মিথ্যা। তৃণমূল বোমা মজুত করছিল। সেই বোমা ফেটেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।” তবে তৃণমূল ও সিপিএম উভয় তরফই পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ। জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র জানান, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পটাশপুরের ঘটনায় তৃণমূল কর্মী গঙ্গাধরবাবুর তিন বছরের ছেলেও আহত হয়েছে। দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার সময়ে মোটরাবাইকে করে তিন জন এসে গঙ্গাধরবাবুর মুখে অ্যাসিড ভর্তি বোতল ছুড়ে পালায়। তৃণমূলের পটাশপুর ২ ব্লকের নেতা তাপস বেরার দাবি, “সিপিএম আতঙ্কিত হয়ে আমাদের কর্মীদের ভয় দেখাচ্ছে।” যদিও সিপিএমের প্রতাপদিঘি জোনাল কমিটির সম্পাদক কালিপদ দাস মহাপাত্র বলেন, “অন্তর্কলহের শিকার হয়েছেন গঙ্গাধরবাবু।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দফায় দফায় সংঘর্ষে তেতে ওঠে জয়পুরের কাশমুলি এবং ঘনশ্যামচক গ্রাম। তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। যদিও এই ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।
হুগলির গোঘাটের রতনপুরে সোমবার বিকাল থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত তৃণমূল-সিপিএমের মধ্যে দফায় দফায় মারপিট হয়েছে। শ্লীলতাহানির অভিযোগে সিপিএমের পঞ্চায়েত সমিতির দুই প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মারধরের পাল্টা অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূলের একজন। |