সম্পাদক সমীপেষু...
ভোটমাতা যা হইয়াছেন
পঞ্চায়েত ভোটের দেবতা আসিতেছেন। গ্রামে গ্রামে নিদ্রা টুটিয়াছে। দেবতার পূজার্চনার যথোপযুক্ত আয়োজন চাই। তাঁহার আগমন-বার্তা এযাবৎকাল ছিল নির্ধারিত। পঞ্চবর্ষ অন্তর গ্রীষ্মের দহনকালে প্রায়শই রবিঠাকুরের জন্মোৎসবের ক্রোড়ে-পৃষ্ঠে চড়িয়া পঞ্চায়েত ভোটের ঠাকুরটিরও আগমন ঘটিত গ্রামীণ জনপদগুলিতে। এই বার নানাবিধ কারণে কিঞ্চিৎ কালবিলম্ব হইল, তাহা বলিয়া তিনি সমুচিত সমাদর পাইবেন না, তাহা কীরূপে সম্ভব! আমরা গণতান্ত্রিক পূজা-পদ্ধতিতে তাঁহাকে বরণ করিয়া লইব।
কিছু কাল পূর্বেও উক্ত দেবতার পূজা উপলক্ষে এক দিবস ধার্য ছিল, এক্ষণে কাল বদলাইয়াছে, অষ্টাদশ বৎসর বয়সি মনুষ্যের সংখ্যা বৃদ্ধি পাইয়াছে, ভোট-দেবতার প্রসাদলোভী হরেকরকম্বা দল গজাইয়াছে, সর্বোপরি গ্রামীণ সভ্যতার বিপুল পরিবর্তন ঘটিয়াছে। পূর্বেকার ন্যায় আর কিছুই নাই, চণ্ডীমণ্ডপ উঠিয়া গিয়াছে, আটচালা উধাও, রোয়াক ক্রম-হ্রস্বমান পরিবর্তে পার্টি অফিসের গরিমা বৃদ্ধি পাইয়াছে।
কালেরও পরিবর্তন ঘটিয়াছে ন্যায়সংগতর দিন নাই বলিলেই চলে, সত্য কথা কিঞ্চিৎ শ্রুত হইয়া থাকে, প্রিয়ভাষ ক্রমশ পশ্চাদ্গামী দিকে দিকে অন্যায়ের জয়-জয়কার, মুহুর্মুহু মিথ্যা বক্তিমায় আকাশ-বাতাস আন্দোলিত, অশ্রাব্য ভাষ্য দিনে দিনে মান্যতা লাভ করিতেছে।
আর স্থান-কালের চেয়েও অধিক বদল ঘটিয়াছে পাত্রে। গ্রামীণ সুসম্পর্কগুলি আর নাই বয়স্যদের সম্মান নাই, শিক্ষিতজনের কদর নাই, জ্যেষ্ঠমহাশয়-খুড়ামহাশয় প্রভৃতি গালভরা সম্বোধন আজ অতীত। অদ্য যাহা বিচার্য কে কোন দলের সমর্থক, তাহার উপর নির্ভর করিবে তিনি (ছদ্ম) সম্মান পাইবেন না, প্রকৃত অভিসম্পাত ও গাল-মন্দই তাঁহার প্রাপ্য।
স্থান-কাল-পাত্রের পরিবর্তন মানিয়া পঞ্চায়েত ভোট-দেবতার পূজা-প্রকরণে কিঞ্চিৎ পরিবর্তন আসিয়াছে, এক-দিবসের স্থলে পঞ্চ-দিবস ধার্য হইয়াছে। পূজার দিনগুলিতে মত-দানের মন্দিরে মন্দিরে কড়া নজরদারি ও সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন থাকিবে, রাজনৈতিক পান্ডাদের দৌরাত্ম্য ঠেকাইতে এবং প্রতিটি ভক্তজনের নিজস্ব ভোট-নৈবেদ্য চড়াইতে যেন কোনও অন্তরায় সৃষ্টি না হয়, তাহার জন্য। কিছু কাল পূর্বেও কয়েকজনায় মিলিয়া সারা গ্রামের ভোট-নৈবেদ্য চড়াইয়া দিত, সুদিনের সেদিন গিয়াছে...
কিন্তু ইহা তো গণতান্ত্রিক পূজা-প্রকরণের বাহ্য-রূপ, ইহার আপাত অন্তরালে যে সব উপচার-উপকরণ অতীব প্রয়োজন, সেগুলির অনুল্লেখ হইলে সত্যের অপলাপ হইবে। প্রথমেই স্বীকার্য, উক্ত দেবতার পূজা বেশ কিছু কালাবধি ...তান্ত্রিক পদ্ধতিতেই হইতেছে। মাহাত্ম্য প্রচারে উদ্ধত দেওয়াল লিখন, কিম্ভূত সত্য-মিথ্যার মিশ্রণে উত্তেজক ভাষণ, গাড়ি-বাড়ি-পতাকার ছড়াছড়ি। উৎসবের ধুম মাচাইতে বংশ-তরুর খাদি তৈয়ার, আত্মরক্ষার নামে দেশীয় তির-ধনুক মজুত, ইষ্টক-প্রস্তরের স্তূপীকরণ, পেটো সংগ্রহ, বারুদ-বোমাগুলিকে রৌদ্র-স্নান ইত্যাদি, ইহা ব্যতীত ভক্তদের পূজা আদায়ে রক্তচক্ষু, প্রাণনাশের হুমকি। একদা উড়োচিঠি, উড়োফোনের চল ছিল, এক্ষণে তাহা অপ্রয়োজনীয়। ইহা ব্যতীত ভয়ংকর বাইক-বাহিনী, রাত-বিরেতে মত্ত-উন্মত্তদের হুংকার। পঞ্চায়েত দেবতার দুর্বল দেব-দাসের বরাতে তো অশেষ দুর্ভোগ ঘন ঘন হুমকি, অপহরণের আশংকা, সাদা থানের মাধ্যমে এত্তেলা পাঠাইয়া স্ত্রীর সম্ভাব্য পরিস্থিতির প্রতি ভয়ানক ব্যঞ্জনা। কোনও কোনও স্থলে ... তান্ত্রিক পদ্ধতি আরও প্রগাঢ় অস্ত্রমিছিল, শাণিত কুঠারের ঝলকানি, উন্মুক্ত ভোজালিতে তৈল-সিন্দুরের যুগলে অশনি সংকেত। আবার ঘোর ... তান্ত্রিকতায় সংঘর্ষ, প্রাণনাশ, রক্তের হোলিকা...
এবম্বিধ আয়োজনের পর ভক্তের ভোটার্ঘ্য নিবেদনের দিবস সমাগত হয়, শুরু হয় গণতান্ত্রিক পূজা-প্রকরণ, শুরু হয় গণতান্ত্রিক পূজা-পদ্ধতির ঢক্কানিনাদ। কিন্তু অন্তরালে ...আয়োজনের ...তান্ত্রিক পদ্ধতিটি অনস্বীকার্য ও অনতিক্রম্য। আশা করা অনুচিত হইবে না, যে উক্ত ...তান্ত্রিক পদ্ধতির মূল যে প্রকারে শক্তপোক্ত, সুবিস্তৃত হইয়া চলিতেছে, অনাগত ভবিষ্যতে হয়তো বিশুদ্ধ তান্ত্রিক মতেই ভোট-দেবের পূজার্চনা অনুষ্ঠিত হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.