দমদম স্টেশন-চত্বরে ফুচকা খাচ্ছিলেন মা। পাশে দাঁড়িয়ে ছিল সাড়ে তিন বছরের ছেলে। হঠাৎ শিশুটি উধাও। কান্নাকাটি, খোঁজাখুঁজির মধ্যেই পুলিশের তৎপরতায় শিশুটিকে ফিরে পেলেন মা। মঙ্গলবার রাত ৮টার এই ঘটনায় রহস্য দানা বেঁধেছে এক ব্যক্তিকে নিয়ে। শিশুটি যাকে ‘কাকু’ বলছে এবং জানিয়েছে, তার হাত ধরেই সে চলে গিয়েছিল। কাকু-রহস্য ভেদ হয়নি। তবে শত সমালোচনার মধ্যেও শিশুকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে নায়ক হয়ে উঠেছে পুলিশ।
ঠিক কী ঘটেছিল? পুলিশ জানায়, সঞ্চিতা দেবনাথ নামে কাশীপুর থানা এলাকার রানি দেবেন্দ্র বাজার রোডের এক মহিলা রাত ৮টা নাগাদ কয়েক জন আত্মীয়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন। সঙ্গে ছিল তাঁর সাড়ে তিন বছরের ছেলে গৌরব। সঞ্চিতাদেবী বলেন, “মেট্রো থেকে নেমে আমরা স্টেশনের বাইরের চত্বরে ফুচকা খাচ্ছিলাম। ছেলে পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। খেয়াল হতে ঘুরে দেখি, গৌরব নেই।” শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। সঙ্গে সঙ্গে হাজির হন স্টেশন-চত্বরে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা। জড়ো হয়ে যান সেখানকার দোকানদারেরাও। কয়েক মিনিটের মধ্যে স্টেশনের মাইকেও শিশুটির হারিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করা হতে থাকে। সঞ্চিতাদেবী বলেন, “পাগলের মতো খোঁজাখুঁজি করছি। কিন্তু পাচ্ছি না। হঠাৎই এক দোকানদার এসে বললেন, ‘পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মে একটি শিশুকে পেয়েছে পুলিশ। আপনারা দেখে আসুন’।” সকলেই ছোটেন পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ওই প্ল্যাটফর্মের একেবারে শেষে একটা জটলা। তার মধ্যে এক পুলিশকর্মীর কোলে গৌরব। পুলিশকর্মীর কাছ থেকে ছেলেকে কোলে নিয়ে কেঁদে ফেলেন সঞ্চিতাদেবী।
কিছুটা ধাতস্থ হওয়ার পরে সঞ্চিতাদেবী বলেন, “প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে ছেলেকে খুঁজেছি। আমি তো প্রায় আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। ধন্যবাদ দিচ্ছি স্টেশন-চত্বরে কর্তব্যরত পুলিশ ও দোকানদারদের। ওঁদের সাহায্য ছাড়া ছেলেকে ফিরে পেতাম না।”
কিন্তু এত ছোট একটি শিশু নীচের স্টেশন-চত্বর থেকে অনেক উঁচুতে একেবারে পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেষে চলে গেল কী ভাবে? শিশুটি যেখান থেকে হারিয়েছিল, সেখান থেকে পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যেতে হলে সাবওয়ে দিয়ে গিয়ে ওভারব্রিজ পার হতে হবে। সঞ্চিতাদেবী জানান, তাঁর ছেলে একটু চঞ্চল ঠিকই। কিন্তু ওর পক্ষে ওইটুকু সময়ের মধ্যে হেঁটে সাবওয়ে পেরিয়ে পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মে চলে যাওয়া সম্ভব নয়। তা হলে কী ভাবে ওখানে গেল তাঁর ছেলে? সঞ্চিতাদেবী বলেন, “ছেলেকে এই নিয়ে বারবার প্রশ্ন করেছি। ও এক বার বলল, একটা কাকুর হাত ধরে চলে গিয়েছিল।”
এই কাকুটি কে? উত্তর মেলেনি। |