দীর্ঘ সময় ধরে সন্ত্রাস দেখতে দেখতে এলাকাবাসী ক্লান্ত। তাই এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে মানুষকে শান্তি ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দিয়ে ভোটের ময়দানে বর্ধমান জেলা পরিষদের ৪৬ নম্বর আসনের (কেতুগ্রাম ১ ব্লকের কান্দরা, রাজুর, পালিটা, পান্ডুগ্রাম) তৃণমূল প্রার্থী অমল সাহা।
অমলবাবুর এলাকা কার্যত সন্ত্রাসের আঁতুরঘর। তাঁর এলাকার পাশেই রয়েছে নানুরের বাসাপাড়া-পাঁপুড়ি এলাকা। অমলবাবুর কাছে অজানা নয়, যে কেতুগ্রাম খ্যাত সন্ত্রাসের জন্য, সেখানে মানুষের জীবনে শান্তি এনে দেওয়াটাই তাঁর কাছে প্রধান লক্ষ্য। তাই সিপিএম প্রার্থী অমর মাঝি বা কংগ্রেস প্রার্থী চায়না সাহার সঙ্গে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা সন্ত্রাসের সঙ্গে, এমনটাই মনে করেন অমলবাবু। তাঁর কথায়, “দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এখানকার মানুষ সন্ত্রাসের শিকার। মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। তাঁদের মুক্তি দরকার।” সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা পড়ে কান্দরার পঞ্চায়েত দফতরের সামনে একটি চায়ের দোকানের সামনে বসে অমলবাবু বলছিলেন, “সন্ত্রাস এক দিনেই বন্ধ হয়ে যাবে এমনটা আশা করা ঠিক নয়। দীর্ঘদিনের মানুষের ক্ষোভ-রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। তবে শিক্ষার প্রসার ঘটলে এই সন্ত্রাস নির্মূল করা যাবে। আর এই শিক্ষার প্রসার করানোটাই হবে আমার আমার প্রথম কাজ।” |
পেশায় কর্মশিক্ষার শিক্ষক অমলবাবুর বাড়ি রাজুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় খাসপুর গ্রামে। এখন থাকেন বোলপুর শহরে। সারা জীবন দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে পড়াশোনা করেছেন তিনি। অমলবাবুর দাবি, সিপিএম কার্যত ‘বয়কট’ করে রেখেছিল। সিপিএমের দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে ছাত্রাবস্থাতেই বোলপুরে ঠাঁই নিয়েছিলেন। উচ্চমাধ্যমিকের পর হাওড়া-রামরাজাতলা রুটে বাসে হেল্পারের কাজ করতে হয়েছে তাঁকে। সামান্য পয়সার জন্য কয়েক মাস খড়দার পুরনো পোস্ট অফিসের পাশে একটি মিষ্টির দোকানে কাজ করেছেন। এ ভাবেই বেশ কিছু দিন কাটানোর পর বোলপুর কলেজে অ্যাকাউন্টেন্সি নিয়ে ভর্তি হন। স্নাতক হওয়ার পর বিশ্বভারতীতে গ্রামীণ উন্নয়ন নিয়ে স্নাতোকোত্তর করেন। আর্ট অ্যান্ড ক্রাফ্ট নিয়েও বিশ্বভারতীতে পড়েছেন। স্কুলে ড্রপ আউট কী ভাবে আটকানো যায় তা নিয়ে বর্তমানে গবেষণা করছেন অমলবাবু। তাঁর আক্ষেপ, “স্কুলে কোনও দিন গণিতে দ্বিতীয় হইনি। তবু আর্থিক কারণে গণিত নিয়ে গবেষণা করতে পারলাম না।”
জীবনের বেশির ভাগটাই যিনি পড়াশোনার মধ্যে কাটিয়েছেন, তিনি শিক্ষক হিসেবেই এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে পারতেন। রজনীতিতে আসার কী প্রয়োজন ছিল? অমলবাবুর কথায়, “আমার একার দ্বারা যুদ্ধ জেতা সম্ভব নয়। সৈন্য দরকার। রাজনীতির আঙিনা ছাড়া এত মানুষ মিলবে কী করে? সেখান থেকেই সৈন্য যোগাড় করে যুদ্ধে নামব।” অমলবাবু বলেন, “বাড়ির ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের যদি শিক্ষা দেওয়া যায় তাহলে অভিভাবকরা অন্যায় কাজ থেকে দূরে সরে যাবেন - এ প্রমাণ আমি নিজে পেয়েছি।”
ভোটে জেতা নিয়ে কী আশাবাদী তিনি? অমলবাবুর কথায়, “আমি জীবনে অনেক পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষক হয়েছি। আট বছর শিক্ষকতা করার পর পড়ুয়াদের কাছে বিশ্বাস পেয়েছি। ভোটের লড়াইতে জিততে পারলে বাকি পাঁচ বছর ধরে পরীক্ষা দেব।” তিনি বলেন “পরীক্ষায় ফেল করলে আবার শিক্ষকতায় ফিরে যাব। আর সফল হলে প্রজেক্ট বানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে দিতে চাই।” |