|
|
|
|
মুম্বই এক্সপ্রেস |
ভিটি স্টেশনে এখন নামছে দু’ধরনের অভিনেতা। দক্ষিণ ভারতের নায়ক।
আর টালিগঞ্জের কি না চরিত্রাভিনেতা। লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
মুম্বই এক্সপ্রেস যদি এখন বলিউডে এসে থেমে থাকে, তা হলে তাতে দু’টো কামরা দুই আঞ্চলিক ইন্ডাস্ট্রির অভিনেতাদের দখলে থাকবেই। কলকাতা থেকে বগি ভর্তি করে মুম্বই যাচ্ছেন চলচ্চিত্রাভিনেতারা। আর দক্ষিণ থেকে আসছেন নায়ক।
সদ্য মুক্তি পেয়েছে বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানের ‘লুটেরা’। সেখানে সোনাক্ষী সিংহ-র বাবার চরিত্রে রয়েছেন বরুণ চন্দ। অনেকেরই মতে, বরুণকে মাণিকপুরের জমিদার সৌমিত্র রায় চৌধুরীর ভূমিকায় মানিয়েছে বেশ। আর যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গেই তিনি অভিনয় করেছেন।
এর ঠিক আগে মুক্তি পেয়েছিল ‘ঘনচক্কর’। কয়েক মাস আগে মুক্তি পেয়েছিল ‘স্পেশাল ছাব্বিশ’। দু’টো ছবিতেই চরিত্রাভিনেতার ভূমিকায় বেশ জোরালো অভিনয় করেছেন রাজেশ শর্মা। তারও আগে রাজেশকে দেখা গিয়েছিল ‘দ্য ডার্টি পিকচার’ আর ‘নো ওয়ান কিলড্ জেসিকা’-তে।
এর পাশাপাশি রয়েছেন দক্ষিণী অভিনেতারা। যেমন ধনুষ বা রাম চরণ। এঁরা যদি শুধু দক্ষিণী ছবি করতেন, তা হলে হয়তো অনেক বাঙালি দর্শক এঁদের নাও চিনতে পারতেন। কিন্তু ধনুষ আজ চেন্নাইতে যতটা জনপ্রিয়, কলকাতাতে তার থেকে খুব একটা কম জনপ্রিয়তা তাঁর নয়। ‘কোলাভেরি-ডি’র গায়ক বলে মানুষ তাঁকে চিনেছেন ঠিকই। তবে এখন বাংলা তাঁকে চিনেছে ‘রাঞ্ঝনা’ ছবির কুমুদ হিসেবে। নাছোড়বান্দা এক প্রেমিকের চরিত্রে অনেকেরই তাঁকে ভাল লেগেছে।
রাম চরণ অবশ্য এখনও কলকাতাতে অতটা জনপ্রিয় হননি। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন যে, অপূর্ব লাখিয়ার ‘জঞ্জীর’ ছবির রিমেক দেখার পর হয়তো ভবানীপুর থেকে দুর্গাপুরের দর্শকও তাঁকে চিনে যাবেন। কারণ? অমিতাভ বচ্চনের ইন্সপেক্টর বিজয় মেহরার চরিত্রে কেমন মানিয়েছে রাম চরণকে? সেটা জানতে অনেকের আগ্রহ থাকবেই। |
|
‘কহানি’-র এক দৃশ্যে বিদ্যা বালন এবং পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় |
দু’টো আঞ্চলিক ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে এটাই ফারাক। যেখানে দক্ষিণ ভারত বলিউডকে লাগাতার স্টার ধার দিচ্ছে, টলিউড কিন্তু এই বিভাগে একেবারেই চুপ।
সেই মিঠুন চক্রবর্তীর পর বাংলার কোনও স্টার-ই কিন্তু বলিউডে সুপারস্টার হয়ে উঠতে পারেননি। তাই বলে কিন্তু টলিউড পিছিয়ে নেই। কলকাতার অনেক অভিনেতাকেই আজকাল বাণিজ্যিক হিন্দি ছবিতে দেখা যাচ্ছে। এবং এঁরা সবাই বাংলার বাইরে বেশ পরিচিত। দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সাংহাই’তে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়ের সুখ্যাতি হয়েছে। সুজয় ঘোষের ‘কহানি’ শাশ্বত, পরমব্রত এবং নিত্য গঙ্গোপাধ্যায়কে জাতীয় স্তরে পরিচিতি দিয়েছে। সতীশ কৌশিক করতে চলেছেন ‘ভুতের ভবিষ্যৎ’য়ের হিন্দি রিমেক। সেখানেও পরমব্রত রয়েছেন।
কেন তা হলে বলিউডের নায়কের আসনটা টালিগঞ্জের কাছে অধরাই রয়ে যাচ্ছে? মিঠুনের মতে তাঁর মতো জেদটাই হয়তো এখন নেই। “সে দিন ‘বিগ বস’-এর একটা পর্বে একজন প্রতিযোগী আমাকে বলেন তিনি স্বপ্ন দেখেন। আমি তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলাম তিনি তো শুধুমাত্র সংলাপ আওড়াচ্ছেন। স্বপ্ন যাকে বলে, সেটা আমি দেখেছিলাম। মুম্বইতে গিয়ে। চব্বিশ ঘণ্টা, তিনশো পঁয়ষট্টি দিন। এমন স্বপ্ন দেখেছিলাম যে তা আমাকে শুতে দেয়নি,” বলছেন মিঠুন। |
|
‘স্পেশাল ছাব্বিশ’ ছবির একটি দৃশ্যে অক্ষয় কুমার, রাজেশ শর্মা ও অনুপম খের |
বলিউডে নায়ক হতে গেলে নাকি ও ভাবেই স্বপ্ন দেখতে হয়। এবং সেটাই দেখে থাকেন দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির স্টারেরা। তাই তো বগি ভর্তি করে মাধবন, সিদ্ধার্থ, চিরঞ্জীবী, ভেঙ্কটেশ, নাগার্জুন, পৃথ্বীরাজ, সুদীপ, সুরিয়া, বিক্রম আর রানা ডগ্গুবট্টিরা ভিড় করেছেন স্টেশন বলিউডে। মিঠুুন আরও জানাচ্ছেন যে, আঁকড়ে পড়ে থাকতে হয় বলিউডে হিরো হতে গেলে। তাঁর মতে, “আমার পাঁচটা প্রতিবন্ধকতা ছিল মুম্বই গিয়ে। খাওয়া নিয়ে, থাকার জায়গা নিয়ে, বাড়িতে যোগাযোগ করা নিয়ে। মনে মনে মায়ের সঙ্গে কথা বলতাম। টেলিফোন তো আর ছিল না! আজকালকার ছেলেদের মধ্যে এই জেদটা কোথায়? আমার মনে হয় না জীবদ্দশায় বাংলা থেকে বলিউডে কোনও সুপারস্টার দেখে যেতে পারব। তবে এটা ঠিক যে, রাজেশ, খরাজ, শাশ্বত, পরমরা বেশ ভাল কাজ করছে।” ‘লুটেরা’-তে বরুণের কাস্টিংটা হয়েছিল বেশ অদ্ভুত ভাবে। “যে চরিত্রের জন্য আমাকে প্রথমে নির্বাচন করা হয়, পরে সেটা পাল্টে যায়। আমাকে বলা হয়, আমার কাজ দেখে মুম্বইতে সবাই মনে করেছিলেন যে, জমিদারের চরিত্রে আমাকে বেশি মানায়। অনেকেই আমাকে বলেছেন যে এই ছবিতে আমার অভিনয় সত্যজিৎ রায়ের ‘সীমাবদ্ধ’কেও ছাপিয়ে গিয়েছে। শু্যটিং শেষে যখন বিক্রমাদিত্যকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন মুম্বইয়ের কোনও অভিনেতাকে না নিয়ে আমাকে নিয়েছেন? বলেছিলেন উনি একজন বাঙালি অভিনেতাই চাইছেন,” বলছেন বরুণ।
তবে সবাই যে বাঙালি অভিনেতার প্রয়োজন বলেই কলকাতামুখী হচ্ছেন তা নয়। “কলকাতার ভাল অভিনেতা চাই। শুধু বাঙালি নয়,” বলছেন বরুণ। |
|
‘রাঞ্ঝনা’-র এক দৃশ্যে ধনুষ ও সোনম কপূর |
খরাজ মুখোপাধ্যায় অভিনয় করেছেন বেশ কয়েকটি হিন্দি ছবিতে। শেষবার তাঁকে দেখা গিয়েছিল ‘স্পেশাল ২৬’য়ে। কী কারণে টলিউডের হিরোদের কাছে হিন্দি ছবির নায়কের জায়গাটা ‘নো নেটওয়ার্ক জোন’ হয়ে যাচ্ছে?
খরাজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলছেন, “মিঠুন চক্রবর্তীকে আমরা দেখেছি দাঁতে-দাঁত চেপে মুম্বইতে কাজ করে যেতে। এবং তার পরই তিনি হয়েছেন সুপারস্টার। বহু ছেলেই হয়তো কলকাতা থেকে মুম্বইতে গিয়ে চেষ্টা করছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমন কিছুই করে উঠতে পারছে না। হয়তো লবিতে ঢুকতে পারছে না। বা অতটা স্ট্রাগল
|
‘কহানি’-র বব বিশ্বাস |
করতে প্রস্তুত নয় তারা। শাশ্বত, আমি, রাজেশ আমাদের কিন্তু আর নায়কের রোল করার বয়েস নেই। কিন্তু আমাকে যদি কেউ ক্যামিওর রোলে নেন, আমি তখন সেটাকে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে করি। সেখানে অভিনয়ের মুন্সিয়ানা দেখানোর জন্য আমি তৈরি।” ‘লাগা চুনরি মে দাগ’ ছবি শুরু হয়েছিল খরাজের চরিত্রের একটা দৃশ্য দিয়ে। “প্রথমে চিত্রনাট্যকার আমাকে দেখে একদম রাজি ছিলেন না। কিন্তু প্রদীপ সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমি শু্যটিং করার পরে অন্য চরিত্রাভিনেতারা বলেন যে তাঁরাও আমার ওই রোলটা করার জন্য উদ্গ্রীব ছিলেন। আমার মনে হয় এখন ভাল অভিনেতার খোঁজে বলিউড টলিউডের দিকে ঝুঁকছে বলিউড,” বলেন খরাজ।
একই মত রাজেশ শর্মার। কিছু দিন পরে সুধীর মিশ্রর ‘মেহেরুন্নিসা’ ছবিতে উনি অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে অভিনয় করবেন। বলেন, “এ কথা ঠিক যে, আজকাল অনেক ভাল ভাল ক্যারেক্টার রোল আসছে আমাদের কাছে। বলিউড বুঝতে পারছে যে কলকাতাতে ট্যালেন্ট আছে। হয়তো তাঁরা গাড়ি থেকে লাফ মারতে পারবেন না। বা গাছের আড়ালে গিয়ে গান গাইবেন না। কিন্তু অভিনয় করতে দিলে তাঁরা ফাটিয়ে দেবেন। আর্থিক দিকটাও একটা বড় ব্যাপার। কলকাতার ট্যালেন্ট আছে। আর বোম্বের তুলনায় তাঁরা সস্তা।”
এ নয় যে দক্ষিণ ভারত বা মরাঠি ইন্ডাস্ট্রি থেকে বলিউড চরিত্রাভিনেতা এক্সপোর্ট করছে না। “রাম গোপাল বর্মার অনেক ছবিতেই তো তামিল/তেলেগু ছবির অভিনেতাদের দেখা যায়। কিন্তু যেভাবে একটা বব বিশ্বাসকে গোটা ভারতের দর্শক মনে রেখেছে সেটা তাঁদের ক্ষেত্রে হয়তো সব সময় হচ্ছে না,” বলছেন রাজেশ। |
|
‘লুটেরা’ ছবির একটি দৃশ্যে বরুণ চন্দ ও সোনাক্ষী সিংহ |
বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে বলছেন, “জমিদারের ওই চরিত্রে বরুণ চন্দকে বেশ মানিয়েছে। আজকাল বলিউডে নানা ধরনের ছবি হচ্ছে। সেখানে দরকার দক্ষ অভিনেতার। আমরাও আজকাল অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রিতে কোন কোন অভিনেতা ভাল কাজ করছেন তার খবরাখবর রাখি। তাই হয়তো বলিউডে তাঁদের কাস্ট করা হচ্ছে।”
দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ওয়ে লাকি লাকি ওয়ে’ ছবিতে রাজেশকে নিয়েছিলেন। ‘সাংহাই’তে প্রসেনজিৎ। সামনে তাঁর ‘ব্যোমকেশ’। ওখানেও কি বাঙালি চরিত্রাভিনেতাদের সুযোগ দেবেন উনি? দিবাকর বলছেন, “রাজেশ বা প্রসেনজিৎকে আমি বাঙালি বলে কাস্ট করিনি। অভিনয়ের দক্ষতার জন্যই নিয়েছি। ইচ্ছে আছে ‘ব্যোমকেশ’য়েও কলকাতা থেকে অনেক অভিনেতাকে নেওয়ার।”
টলিউডের অভিনেতাদের আবার বোধহয় মেনস্ট্রিম বলিউডের পর্দায় নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করার আর একটা ভাল সুযোগ এল বলে।
|
পুব-দক্ষিণের বলি-কাহিনি |
বলিউড দৌড়ে টলিউড (মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি) |
দক্ষিণের বলিউডি দৌড় (মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি) |
• শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: ‘কহানি’
• রজতাভ দত্ত: ‘কামিনে’
• পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়: ‘কহানি’
• খরাজ মুখোপাধ্যায়: ‘লগা চুনরি মে দাগ’, ‘কহানি’, ‘স্পেশাল ছাব্বিশ’, ‘পরিণীতা’
• রাজেশ শর্মা: ‘খোসলা কা ঘোসলা’, ‘স্পেশাল ছাব্বিশ’, ‘দ্য ডার্টি পিকচার’, ‘নো ওয়ান কিলড্ জেসিকা’, ‘ঘনচক্কর’, ‘ইশকিয়া’, ‘চালিশ চুরাশি’, ‘পরিণীতা’, ‘লভ সভ তে চিকেন খুরানা’ |
• মাধবন: ‘রং দে বসন্তি’, ‘তনু ওয়েডস্ মনু’, ‘রহেনা হ্যায় তেরে দিল মে’
• সিদ্ধার্থ: ‘রং দে বসন্তি’, ‘চশমে বদ্দুর’
• পৃথ্বীরাজ: ‘আইয়া’ আর ‘আউরঙ্গজেব’
• সুদীপ: ‘ফুঁক’
• সুরিয়া: ‘রক্ত চরিত্র’
• বিক্রম: ‘রাবণ’, ‘ডেভিড’
• রানা ডগ্গুবটি: ‘দম মারো দম’ |
|
|
|
|
|
|