কিশোরের মৃত্যু মাড়গ্রামের গ্রামে
পেটের রোগের প্রকোপ, আক্রান্ত ৩৭
হম্মদবাজারের পরে এ বার মাড়গ্রাম। পেটের রোগের প্রকোপে মাড়গ্রাম থানার বড় হাজারপুর গ্রামের ৩৭ জন বাসিন্দা আক্রান্ত হয়েছেন। ইতিমধ্যেই গ্রামের এক কিশোরের মৃত্যুও হয়েছে। যদিও রামপুরহাট ২ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক অভিজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, “ওই কিশোরের মৃত্যুর কারণ শুধু যে ডায়েরিয়া তা বলা যাবে না। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী মৃতের লিভার ও কিডনির অবস্থা ভাল ছিল না। তা ছাড়া রক্তের মধ্যে সুগারের মাত্রার তারতম্য ছিল।” তবে ওই গ্রামের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক বলে তিনি দাবি করেছেন।
বড় হাজারিপুর গ্রামে চলছে রক্তের নমুনা সংগ্রহ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার রাত থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত ওই গ্রামের প্রায় ৩৭ জন বাসিন্দা পেটের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। খবর পেয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা ওই গ্রামে পৌঁছে বাড়ি বাড়ি ঘুরে আক্রান্তদের খোঁজ নিয়েছেন। স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে গ্রামের পুকুর ও পানীয় জল পরিশোধনের ব্যবস্থা করেছেন। গ্রামের আশাকর্মী সাবিনা খাতুন বলেন, “ডায়েরিয়া হওয়ার খবর শনিবার রাতে জানতে পারি। রবিবার সকালে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে আক্রান্তদের খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া শুরু হয়।” সোমবার সকালেই ওই গ্রামে পৌঁছেছেন মহকুমার সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসেনজিৎ মজুমদার, ব্লকের মেডিক্যাল স্বাস্থ্য আধিকারিক অভিজিৎ রায়চৌধুরী, চিকিৎসক স্বরূপ সাহা। এ দিন দুপুরে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, স্বাস্থ্যকর্মীরা একটি ক্যাম্প গড়ে ট্যাবলেট, ওআরএস বিলি করছেন। পুকুরে ও পানীয় জলের নলকূপে ব্লিচিং পাউডার ছড়াতে দেখা গেল গ্রামেরই যুবকদের। গ্রামবাসী সুভাষ লেট, চন্দনা লেটদের অভিযোগ, “গ্রামে পানীয় জলের জন্য মাত্র চারটি সরকারি নলকূপ আছে। তার মধ্যে দু’টিই খারাপ।”
এ দিকে মৃতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রের, প্রথমে জ্বর, মাথা ব্যথা ও পাতলা পায়খানার উপসর্গ নিয়ে শনিবার সকালে গ্রামেরই এক হাতুড়ের শরণাপন্ন হয়েছিল নবীন লেট নামে ওই কিশোরের পরিবার। পরে একই উপসর্গ নিয়ে নবীন ও তার মা, দাদা, বোন রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে বাকিদের অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও নবীনের অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তিরত করানো হয়। কিন্তু তার পরিবারের অভিযোগ, ওই হাসপাতাল নবীনকে ভর্তি নেয়নি। ফলে তাঁরা বাধ্য হয়ে নবীনকে একটি বর্ধমানের একটি নার্সিংহোমে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় রবিবার দুপুরে কলকাতার পিজি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই নবীনের মৃত্যু হয়। মৃত কিশোরের বাবা বাদল লেটের আক্ষেপ, “একদিনের জ্বর ও ডায়েরিয়ায় ভুগে জ্বলজ্যান্ত ছেলেটা এ ভাবে মারা যাবে, ভাবতি পারিনি।”
আবর্জনার মধ্যেই পড়ে আছে বিকল নলকূপ।
অন্য দিকে, মহকুমার সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসেনজিৎ মজুমদার বলেন, “মূলত পুকুরের নোংরা জল ব্যবহার করার জন্য ডায়েরিয়া হতে পারে। তবুও ওই গ্রামের দিন কয়েক আগেই একটি বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে গ্রামবাসীরা নিমন্ত্রিত ছিলেন। সেখানকার খাবারে কোনও সমস্যা ছিল কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” শনিবার অনেকেই আক্রান্ত হলেও কেন স্বাস্থকর্মী বা আশাকর্মীরা তার খবর পাননি, সেটাও খতিয়ে দেখবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। যদিও গ্রামের স্বাস্থ্যকর্মী মতিনা খাতুনের দাবি, “শনিবার ফিল্ড ওয়ার্ক ছিল না। আর আশাকর্মীকে ওই গ্রাম ছাড়াও অন্য একটি গ্রামেও কাজ করতে হয়। তবুও ঘটনার কথা জানার পরে আমরা সব কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি।” আর গ্রামের বিকল নলকূপগুলি সারাতে লোক পাঠাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রামপুরহাট ২ ব্লকের বিডিও (ভারপ্রাপ্ত) মলয়কুমার ঘোষ।

ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.