|
|
|
|
নজরে বাঁকুড়া: দুয়ারে ভোট, মেলেনি বহু হিসাবই |
|
কতগুলি রাস্তা সারাতে হবে,
সেই তথ্যই নেই জেলা পরিষদের কাছে
নিজস্ব প্রতিবেদন |
|
ভোট আসে। ভোট যায়। তারপর?
পঞ্চায়েতের আসনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে তুমুল লড়াই, তা জনজীবন কার্যত বিপর্যস্ত করে ফেলে। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে নির্বাচন, সেই এলাকার উন্নয়ন কতটা কী হচ্ছে, এলাকার গরিব, প্রান্তবাসী মানুষের জন্য স্থানীয় প্রশাসন কী করছে, সে কথাটা থেকে যায় সবার চোখ-কানের আড়ালে। অথচ পঞ্চায়েত ব্যবস্থার উদ্দেশ্যই ছিল গ্রামের মানুষের কাছাকাছি প্রশাসনকে নিয়ে আসা। গ্রামের নাগরিকের চাহিদা যাতে তাঁরাই মেটাতে পারেন, ধরাছোঁয়ার বাইরে কোনও সাংসদ-বিধায়কের উপর নির্ভর করতে না হয়, সেই জন্যই তো পঞ্চায়েত।
আজ এক একটা গ্রাম পঞ্চায়েত দুই থেকে পাঁচ কোটি টাকা খরচ করতে পারে প্রতি বছর। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত চাইলে করতে পারে না, উন্নয়নের এমন কাজ কার্যত নেই। |
|
ভেঙেছে রাস্তা। বিষ্ণুপুর ব্লকের দ্বারিকা-গোঁসাইপুর পঞ্চায়েত
এলাকার সুভাষপল্লিতে শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি। |
অথচ বাঁকুড়ার দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে, উন্নয়নের মূল বিষয়গুলি সম্পর্কে জরুরি তথ্যই রাখা হচ্ছে না। কেবল রাস্তার দিকে তাকালেই এটা স্পষ্ট হয়। জেলা পরিষদের কাছে হিসেব নেই, ঠিক কত রাস্তা রয়েছে তার তত্ত্বাবধানে। সেই রাস্তাগুলির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, গুণমান সম্পর্কে তথ্য কিছুই নেই। এর মধ্যে কত রাস্তায় এখনই সারাই, রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে, সে তথ্যও নেই। কেবল এটুকুই নথিভূক্ত রয়েছে যে, জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানের সব রাস্তা বেআইনি দখলমুক্ত নেই। তথ্য সংগ্রহে এই চরম অনীহা সেই সময়ে, যখন আগে যে সব রাস্তা দিয়ে বাস চলত, সে সব রাস্তা হাঁটারও অযোগ্য হয়ে উঠছে।
|
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পরিষেবা আশানুরূপ ছিল না।
আশ্বাস দেওয়ার পরেও রাস্তায় পথ বাতি জ্বলেনি, নিকাশির হাল খারাপ।
আমাদের মত লোকশিল্পীরাও সব ধরনের সাহায্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
সুভাষ চক্রবর্তী
লোকসঙ্গীত শিল্পী, বেলিয়াতোড় |
জেলার সবচেয়ে বড় শিল্পাঞ্চল বড়জোড়া। অথচ খেলার মাঠ, শিশু উদ্যান নেই।
নিকাশি ব্যবস্থাও তথৈবচ। গ্রামীণ রাস্তাগুলির উপর দিয়ে কারখানার
গাড়ি গিয়ে বারোটা বাজিয়েছে। সংস্কারের বালাই নেই। দূষণ বেড়েই চলেছে।
শুভজিৎ ঘোষ
বেসরকারি ব্যাঙ্ককর্মী, বড়জোড়া |
ভেদুয়াশোল থেকে বেনাজিরা পর্যন্ত প্রায় ৮ কিমি মোরামের রাস্তাটি পাকা রাস্তা করার
দাবি দীর্ঘদিনের। এটাই গ্রামে ঢোকার মূল রাস্তা। ফি বছর বর্ষায় তা বেহাল হয়।
ছোটখাটো কিছু কাজ পঞ্চায়েত করেছে। সার্বিক উন্নয়ন হয়নি।
সুবোধ মণ্ডল
শিক্ষাবিদ, ওন্দা, সানতোড় |
|
দু’মাস না যেতে ছাল-চামড়া উঠে গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় তৈরি রাস্তার। এই অনৈক্য, অনিচ্ছার প্রতিফলন স্থায়ী কমিটির কাজেও। স্বাস্থ্য বা বিদুৎ বিষয়ক কমিটিও যেখানে মাসে একটা মিটিং করেছে, পূর্ত কমিটি সেখানে করেছে মাত্র ১০টি।
বিদায়ী জেলা সভাধিপতি পার্থপ্রতিম মজুমদারের সাফাই, বিধানসভায় শাসক দলের পরিবর্তনের পর ক্ষমতা হারিয়েছে বামফ্রন্টের জেলা পরিষদ। তিনি বলেন, “শেষের দু’বছর জেলা পরিষদের স্থায়ী কমিটিগুলির ক্ষমতা কার্যত ছিলই না। জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও জেলা পরিষদের কাজের সামঞ্জস্য ছিল না। এই সবের কারণে সার্বিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে।” বিরোধী নেতা শেখর রাউতের পাল্টা যুক্তি, “জেলা পরিষদ। কাজ করেছে শুধুই দায়সারা ভাবে, ভোট পাওয়ার লক্ষ্যে।” |
|
ক’দিন পরেই ছাপ পড়বে ব্যালটে। বুথের নম্বর চিহ্নিত করার জন্য
তৈরি হচ্ছে স্ট্যাম্প। বাঁকুড়ায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ। |
তা হলে ভোট দিয়ে লাভ কী? সেই প্রশ্নটাই করছেন দিঘল গ্রামের বাসিদা চন্দ্রমোহন কেশ, বানজোড়ার বাসিন্দা গোপীকান্ত ঘোষ। মেজিয়া ব্লকের নন্দনপুরমোড় থেকে বানজোড়া হয়ে মালিয়াড়া পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তাটিতে কয়েক বছর আগে পর্যন্ত বাস চলত। এখন এমনই দশা, যে গ্রামের ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজে যাওয়াও দুঃসাধ্য। চন্দ্রমোহনবাবু, গোপীকান্তবাবুরা বলেন, “রাস্তার অবস্থার জন্য গ্রামের মেয়েদের বিয়ে দেওয়া দায় হয়েছে। বছরের পর বছর আমরা এই ভাবেই আছি। জেলা পরিষদের কর্মকর্তারা একবার খবর নিতেও আসেননি।”
প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় যে সমস্ত রাস্তা হয়েছে, সেগুলিও ঠিকঠাক দেখাশোনা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে। ছাতনা ব্লকের এনারির মোড় থেকে হাউসিবাদ পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তায় বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হয়েছে বড়বড় গর্ত। ছাতনার মাঝিডি গ্রামের বাসিন্দা সুমিত মণ্ডল বলেন, “২০১১ সালে এই রাস্তাটি প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় তৈরি হয়। কিন্তু দু’মাস যেতে না-যেতেই রাস্তার পিচ উঠে, বড় বড় গর্ত হয়ে চলাফেরার অযোগ্য হয়ে যায়। আমি একাধিকবার জেলা পরিষদে গিয়ে রাস্তা সারানোর দাবি জানিয়েছি। মিথ্যা আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই জোটেনি।” |
রিপোর্ট কার্ড নজরে তিন জেলা পরিষদ
(প্রথম দফার ভোট: ১১ জুলাই) |
২০১২-১৩ সালের হিসেব |
বাঁকুড়া
|
পুরুলিয়া
|
পশ্চিম মেদিনীপুর
|
• জেনারেল বডির কতগুলি
বৈঠক হয়েছে ?
(নিয়ম বছরে ৪টি) |
৩ |
৪ |
২ |
• ভিজিল্যান্স অ্যান্ড মনিটরিং
কমিটির কতগুলি বৈঠক
(নিয়ম বছরে ৪টি) |
৪ |
২ |
১ |
• বাজেট সময় মতো
পেশ হয়েছে কি? |
হ্যাঁ |
হ্যাঁ |
হ্যাঁ |
• জেলা সংসদের কতগুলি
সভা হয়েছে?
(নিয়ম বছরে ২টি) |
হয়নি |
হয়নি |
১ |
• জেলা পরিষদের দায়িত্বে
কত রাস্তা আছে,
তার তালিকা আছে কি? |
নেই |
আছে |
আছে |
• কত রাস্তা সারানো দরকার? |
তথ্য নেই |
তথ্য নেই |
১৮% |
• অভিযোগ রেজিস্টার
নিয়মিত পর্যালোচনা হয়? |
না |
না |
হ্যাঁ |
• অডিট রিপোর্ট সাধারণ সভায়
পেশ হয়েছে কি? |
হ্যাঁ |
না |
হ্যাঁ |
মোট বরাদ্দ টাকার কত শতাংশ খরচ হয়েছে? |
• ২০১২-১৩ |
৭১ |
৬৮ |
৬৯ |
• ২০১১-১২ |
৬৪ |
৬৩ |
৭৭ |
• ২০১০-১১ |
৮১ |
৬৭ |
৮১ |
কয়েকটি প্রধান প্রকল্পে যত খরচ হয়েছে |
• পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ |
৩৫.৫৬ |
৬২.০৭ |
৫৯.৮০ |
• স্বজলধারা |
৬.৪০ |
০ |
০.০১ |
• ইন্দিরা আবাস যোজনা |
৯৯.৫২ |
৫১.৬৮ |
৮৮.৫৩ |
• পশ্চাৎপদ এলাকা উন্নয়ন তহবিল
(বিআরজিএফ)
|
৫৩.০৬ |
৭২.২২ |
৫৩.৮৩ |
কিছু প্রকল্প যাতে বড়সড় বরাদ্দের এক টাকাও গত অর্থবর্ষে খরচ হয়নি |
বাঁকুড়া |
• খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন (৪১ লক্ষ),
• পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিকে দেওয়ার
জন্য উৎসাহ-অনুদান (২৭ লক্ষ),
• স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ (৮ লক্ষ),
• রাজ্য হেরিটেজ কমিশন (৪ লক্ষ),
• মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র (১ লক্ষ)
|
পুরুলিয়া |
• ক্যাম্পাস, স্টেডিয়াম ও খেলার মাঠ (২০ লক্ষ),
• প্রাথমিক স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়ন (২২ লক্ষ),
• ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (৬ লক্ষ),
• প্রধানমন্ত্রী গ্রামোদয় যোজনা- প্রাথমিক
স্কুলের জন্য পানীয় জল ও শৌচাগার (৭ লক্ষ)
|
পশ্চিম মেদিনীপুর |
• পশুপালন ও ডেয়ারি (১.২৪ কোটি),
• গ্রাম উন্নয়ন (১.১৫ কোটি),
• ইন্দিরা আবাসের জলপরীক্ষা (৭৫ লক্ষ),
• প্রধানমন্ত্রী গ্রামোদয় যোজনায়
গ্রামীণ আবাস (৫৩ লক্ষ),
• রাজ্য শিশুশিক্ষা মিশন (৩০ লক্ষ),
• জনশিক্ষা (২২ লক্ষ), খাদ্য ও সরবরাহ (১১ লক্ষ) |
|
|
|
|
|
|