|
|
|
|
তৃণমূলের জোড়া কাঁটা, হাত ও গোলাপ ফুল
নিজস্ব সংবাদদাতা • বেলপাহাড়ি |
ফুল ভালবাসেন বনপতি মাহাতো। অথচ এখন গোলাপের কাঁটায় অস্থির। ‘দুটি পাতা ও কুঁড়ি’ দেখলেও তিনি মুর্চ্ছা যাচ্ছেন। তার উপরে ‘পুরুত ভট্চাজ’-এর ‘হাত’ তো আছেই।
বনপতিবাবু পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ি ব্লক তৃণমূল সভাপতি। পঞ্চায়েত সমিতির ১২ নম্বর আসনে ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী’। কিন্তু নিন্দুকেরা বলছে, তিনি লড়াইয়ের ময়দানেই নেই। ইন্দিরা মোড়ের কাছে তৃণমূল অফিসে নাগাড়ে বাজছে নির্বাচনী ঝুমুর গান। জেলার নেতারা সভা করে গিয়েছেন। মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রও এসেছিলেন।
কিন্তু এর পরেও যে বনপতিবাবুর আসল খোঁচা ‘গোলাপ ফুল’ প্রতীকে দাঁড়ানো দলেরই বেলপাহাড়ি অঞ্চল আহ্বায়ক ধীমান লাহা। ক’দিন আগেই তাঁকে দিয়ে বনপতিবাবুর সমর্থনে লিফলেট বিলি করিয়েছে দল। কিন্তু তাতে স্বস্তি ফেরেনি। ঝাড়খণ্ড পার্টি আবার ‘দু’টি পাতা ও কুঁড়ি’ প্রতীকে দাঁড় করিয়েছে সুবোধ প্রামাণিক নামে এক নির্দল প্রার্থীকে। পিছনে রয়েছে সিপিএমও। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে আসনটি সিপিএম জিতেছিল। ২০১১-য় বিনপুর বিধানসভা কেন্দ্রেও তারাই জেতে। কিন্তু এ বার তাদের প্রার্থী পঞ্চায়েতের ঠিকাদার হওয়ায় তাঁর মনোনয়ন খারিজ হয়ে গিয়েছে। |
|
সুব্রত ভট্টাচার্য
(কংগ্রেস) |
বনপতি মাহাতো
(তৃণমূল) |
• পেশা: যজমানি
• নেশা: সমাজসেবা
• প্লাস পয়েন্ট: সততা, জনসংযোগ
• মাইনাস পয়েন্ট: আবেগপ্রবণ,
ট্যাঁকে কড়ির অভাব
• প্রতিদ্বন্দ্বী সম্পর্কে: মানুষ ভাল,
খেলোয়াড় ভাল নন
• লোকে বলে: বেলপাহাড়িতে ভট্চাজ
বিনে কংগ্রেস নাই |
• পেশা: চাষবাস
• নেশা: রাজনীতি, বই পড়া ও কবিতা লেখা
• প্লাস পয়েন্ট: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী
• মাইনাস পয়েন্ট: নিজের দলের
লোকেরাই তাঁকে হারাতে চান
• প্রতিদ্বন্দ্বী সম্পর্কে: ভদ্রলোক। কিন্তু
ভোটে জেতার ক্ষমতা নেই
• লোকে বলে: বনপতি নিজ
দলে পরবাসী |
|
সিপিএমের নির্দল-প্রীতিতে অবশ্য দলেরই নেতা-কর্মীদের একাংশ ক্ষুব্ধ। তাতে কংগ্রেস প্রার্থী, দলের জেলা সহ-সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যের সুবিধে হতে পারে বলে অনেকেরই অনুমান। রাজনীতির বাইরে যাঁর পারিবারিক পেশা যজমানি। নিন্দুকেরাও মানেন, মানুষটি সৎ, মার্জিত ও পরোপকারী। জনসংযোগ হিংসে করার মতো। তবু বার কয়েক যে পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়িয়েও তাঁর ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি, তার কারণ কংগ্রেসের দুর্বল সংগঠন।
তবে এ বার তৃণমূলের ভোট কাটাকুটি তো আছেই। তার উপর ঝাড়খণ্ডী প্রার্থীকে সিপিএম সমর্থন করায় ঝাড়খণ্ড পার্টির (নরেন) নেত্রী চুনিবালা হাঁসদা জানিয়েছেন, “আমরা সুব্রত ভট্টাচার্যকে সমর্থন করছি।” বিক্ষুব্ধ তৃণমূল এবং সিপিএমের কিছু লোকও তাঁকে জেতাতে চাইছেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। দেখে বনপতিবাবু মুখে বলছেন, “জঙ্গলমহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন দেখেই মানুষ আমাকে ভোট দেবেন।” তার পরেই আড়ালে ডেকে জানতে চাইছেন, “কী বুঝছেন বলুন তো?”
সুব্রতবাবু কিন্তু খোশমেজাজেই। যজমানেরা পোস্টার ছাপিয়েছেন। তিনি নিজে কিন্তু দু’একটি পথসভার বেশি করেননি। মুচকি হেসে বলছেন, “সারা বছর যাঁদের পাশে থাকি, তাঁদের কাছে ভোট চাইতে যাব?” |
|
|
|
|
|