অশান্তি রোধে দেওয়াল লিখন বন্ধ গ্রামে
কের পর দেওয়াল চুনকাম করে মুছে ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন দলের ভোটের প্রচার। সামনে দাঁড়িয়ে গ্রামের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সত্তরোর্ধ্ব আবুল কাশেম। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষক প্রবীণ আনওয়ারুল ইসলাম এবং রেজাউল হকও। পরপর কয়েকদিন ধরে এই দৃশ্য দেখে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন মুর্শিদাবাদের রেজিনগরের তেঘরি-নাজিরপুরের মানুষ।
আন্দুলবেড়িয়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩টি আসনের মধ্যে ৬টিই তেঘরি-নাজিরপুরে। ভোটের প্রচার শুরু হতেই উত্তেজনাও চড়ছিল। তারই অঙ্গ ছিল দেওয়াল লিখন নিয়ে তরজা। ২৩ ফেব্রুয়ারি রেজিনগরে উপনির্বাচনের সময় থেকেই অবশ্য দেওয়াল লিখন নিয়েই বেশ উত্তপ্ত হয়েছিল পরিবেশ। একটি দেওয়ালে কংগ্রেসের প্রতীক আঁকা ছিল। অভিযোগ, পাশেই আরএসপি-র কর্মীরা কোদাল-বেলচা আঁকতে গেলে কংগ্রেসের প্রতীকের কিছুটা মুছে যায়। তাই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোল বাধে। এলাকায় শুরু হয় পুলিশি টহলদারি। তারপর পঞ্চায়েত ভোটে একটি দেওয়ালের ‘দখল’ নেয় কংগ্রেস। সিপিএমের বক্তব্য, দেওয়ালের পুরোটাই কংগ্রেস নিতে পারে না। সেই মতো সিপিএম ওই দেওয়ালে দলীয় প্রতীক ও প্রার্থীর নাম লিখতে গেলে ধুন্ধুমার কাণ্ড বাধে। ফের উত্তেজনা ছড়ায়। আবার পুলিশ আসে গ্রামে।
শান্তি কমিটির মুখ্য আহ্বায়ক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে মোছা হয়েছে দেওয়াল। —নিজস্ব চিত্র।
পরপর দু’বার এই ঝঞ্ঝাটের পরে গ্রামের শান্তি কমিটি আর চুপ করে থাকতে পারেনি। স্থানীয় একটি প্রাথমিক স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক আবুল কাশেম গ্রামের আরও দুই প্রবীণ শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনায় স্থির করেন, দেওয়াল লিখনই বন্ধ করে দিতে পারলে অনেকটা রেহাই মিলবে। কিন্তু গ্রামের মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় সেই সাহস দেখানো। তাই এই তিন শিক্ষকই উদ্যোগী হলেন। তাঁরাই বাম, কংগ্রেস ও তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের ডেকে আলোচনা শুরু করেন। প্রথমে কেউই মানতে রাজি হননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরা বোঝেন, গ্রামের মানুষের সায় রয়েছে ওই তিন প্রবীণ শিক্ষকের কথাতেই। তাই শেষ পর্যন্ত দেওয়াল লিখন বন্ধ হল। যেটুকু লেখা হয়েছিল, তা-ও মুছতে রাজি হয় দলগুলি।
দেওয়াল লিখন বন্ধ নিয়ে শান্তি কমিটির ডাকা বৈঠকে হাজির ছিলেন কংগ্রেসের মহসিন শেখ, তৃণমূলের বাদল মোল্লা ও সিপিএমের পক্ষে আকবর মল্লিক। তাঁরা জানান, গণ্ডগোল এড়াতেই দেওয়াল লিখন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারপরে সত্যিই অশান্তি কমেছে। তেঘরি-নাজিরপুরের ইন্সটিটিউশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক রেজাউল হকের বক্তব্য, “শান্তি কমিটির প্রধান ওই তিন প্রবীণই শিক্ষক ছিলেন। গ্রামের মানুষ তাঁদের খুবই শ্রদ্ধা করেন। সব থেকে বড় কথা হল, বিভিন্ন দলের স্থানীয় নেতাদের অনেকেই কোনও না কোনও সময়ে তাঁদের কাছে পড়েছেন। তাই তাঁদের কথা অমান্য করতে পারেননি কেউই।” গ্রামের মঞ্জুর শেখের বক্তব্য, “আমাদের সৌভাগ্য যে, এই গ্রামে শিক্ষকদের প্রভাব যথেষ্ট এবং তাঁরা সেই প্রভাব সম্বন্ধে সচেতন থেকে সমাজকে রক্ষা করতেও তৎপর।”
তাই এখন এই গ্রামের প্রায় সব দেওয়ালই সাদা। শান্তির রং।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.