গরুর কৃমি রুখতে কী করতে হবে সহজে জানার উপায় নেই গ্রামবাসীর।
হাঁস-মুরগির ওজন কী ভাবে বাড়বে? উত্তর জানতে গ্রামবাসীদের বহু কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে।
কর্মীর অভাবে হুগলি জেলায় প্রাণিসম্পদ দফতরের ‘পরজীবী নিয়ন্ত্রণ’ প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। জেলার এক-তৃতীয়াংশ গ্রামেও পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না বলে হতাশা প্রকাশ করছেন দফতরের কর্মীরাই। কিন্তু যে ক’টি গ্রামে ইতিমধ্যে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে, সেখানে হাতেনাতে ফল মিলেছে বলে দাবি করেছেন প্রাণী-পালকেরা। প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করেছেন বিভিন্ন ব্লকের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের আধিকারিকেরা। তাঁরা এ কথাও স্বীকার করেছেন যে প্রকল্পটি রূপায়ণে ধারাবাহিকতার অভাবেই সাফল্য ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সব ব্লকেই প্রয়োজনের তুলনায় পাঁচ থেকে আট জন করে কর্মী কম রয়েছেন। প্রকল্পটি যে খুঁড়িয়ে চলছে তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন ওই দফতরের জেলার উপ-অধিকর্তা সোমনাথ মাইতি। তিনি বলেন, “আপাতত জেলার প্রতিটি ব্লকের আটটি করে পঞ্চায়েত এলাকায় ওই প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রতি পঞ্চায়েত এলাকায় দু’টি করে শিবির হচ্ছে।” প্রয়োজনীয় কর্মীর অভাবের কথা স্বীকার করে তিনি জানান, শীঘ্রই প্রতিটি গ্রামে প্রকল্পটির সুবিধা যাতে পৌঁছনো যায় সেই পরিকাঠামো নিয়ে রাজ্য স্তরে পদক্ষেপ করা হয়েছে। কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
কেন্দ্রের ‘রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা’র অধীন এই প্রকল্পটি হুগলিতে চালু হয় ২০১১ সালে। প্রাণিসম্পদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো, বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণ এবং কৃমি-সহ সব ধরনের পরজীবী নিয়ন্ত্রণই প্রকল্পটির লক্ষ্য। সম্প্রতি গ্রাম ধরে ধরে প্রকল্পটি কার্যকর করার দাবি উঠেছে প্রাণী-পালক মহলে।
বর্তমানে যে ক’টি গ্রাম প্রকল্পটির আওতায় এসেছে, তার মধ্যে রয়েছে গোঘাট-২ ব্লকের কামারপুকুর পঞ্চায়েতের ইন্দিরা গ্রাম। বিকাশ সাঁতরা নামে গ্রামের এক প্রাণী-পালক বলেন, “বছর দুয়েক ধরে আমার গাভীর বাচ্চা হচ্ছিল না। শিবিরে ডাক্তারবাবুরা গাভীর মল পরীক্ষা করে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে বলেন। ওষুধ খাওয়ানোর দেড় মাস পরেই ফল পেলাম।” ওই ব্লকেরই তারাহাট গ্রামের প্রাণী-পালক সুভাষ নন্দী বলেন, “ভাল খাবার খাইয়েও আমার গাই এক কেজির বেশি দুধ দিচ্ছিল না। ডাক্তারবাবুদের কথা শুনে কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর পরে এখন তিন কেজির উপরে দুধ পাচ্ছি প্রতিদিন।”
এ রকমই হাঁস-মুরগির ক্ষেত্রেও কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর পরে ওজন বৃদ্ধি ও ডিম দেওয়ার ধারাবাহিকতার কথা জানিয়েছেন পরিষেবা পাওয়া আরামবাগের বাতানল, তিরোল, সালেপুর প্রভৃতি গ্রামের প্রাণী-পালকেরা। একই সঙ্গে অবশ্য তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, এক বছর পরিষেবা দেওয়ার পরে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের কর্মীরা আর আসেন না। এই অভিযোগ নিয়ে গোঘাট-২ ব্লকের প্রাণিসম্পদ বিকাশ আধিকারিক শুভেন্দু হালদার বলেন, “ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যায় না এটা ঠিক। বছরে দু’টি শিবির করে দু’বার ওষুধ খাওয়াই আমরা। ওষুধের কার্যকরী ক্ষমতা থাকে ছয় থেকে আট মাস। প্রাণী-পালকদের পরবর্তী ওষুধ নেওয়ার জন্য দফতরে যোগাযোগ করতে বলা হলেও অনেকেই আসতে চান না।” |