বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি রাসায়নির সারের বিকল্প
সমুদ্র শ্যাওলার নির্যাসে কম খরচে বেশি ফলন
রাসায়নিক সারের দাম যত বাড়ছে, সস্তার জৈব বিকল্পের অনুসন্ধান তত জোরদার হচ্ছে। সেই রকমই একটা অনুসন্ধানের ফল কৃষিকাজে সমুদ্র শ্যাওলার ব্যবহার। সমুদ্র শ্যাওলার নির্যাস ফসলে ব্যবহার করে তার সুফল পেতে শুরু করেছে এ রাজ্যের চাষি। সস্তা অথচ ফসলের দ্রুত বৃদ্ধির সহায়ক ওই নির্যাস রাসায়নিক সারের জৈব বিকল্প হিসেবে দ্রুত জায়গা করে নেবে বলেই মনে করেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।
‘সেন্ট্রাল সল্ট অ্যান্ড মেরিন কেমিক্যালস রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ (সিএসএমসিআরআই) এবং বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে দু’বছর গবেষণা চালিয়ে দেখেছে, সমুদ্র শ্যাওলার নির্যাসের মধ্যে উদ্ভিদের প্রায় সব প্রাথমিক ও গৌণ খাদ্য উপাদান এবং বেশ কিছু উদ্ভিজ হরমোনও রয়েছে। কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খামারেই নয়, কৃষকের খেতেও ধান, আলু, মুগ, কলাই, ভুট্টা, তিল, সয়াবিন ইত্যাদি বিভিন্ন রকম ফসলে ওই নির্যাস প্রয়োগ করে ভাল ফল পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক বিশ্বজিৎ প্রামাণিক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কৌশিক ব্রহ্মচারী বললেন, ‘‘ওই নির্যাস প্রয়োগে কেবল ফসলের উপাদনই বাড়েনি, রোগপোকার আক্রমণ কমেছে। মাটির উর্বরতাও বেড়েছে।’’ ওই নির্যাস প্রয়োগে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য রকম কমার ফলেই মাটির উর্বরতা বাড়ছে।
সমুদ্রের এই শ্যাওলাই জৈব সার হিসাবে ব্যবহার করা হবে।
এই তথ্য জানিয়ে রানাঘাটের নোয়াপাড়া গ্রামের চাষি শৌভিক দাস জানালেন, প্রতি কাঠা ধানের জন্য ৪ লিটার জলে ১০০ মিলিলিটার নির্যাস গুলে স্প্রে করতে হবে। তাঁর দাবি, ‘‘ওই নির্যাস ব্যবহারের ফলে ফলন যেমন বেড়েছে, চাষের খরচ কমে গিয়েছে। কারণ, অর্ধেকেরও কম রাসায়নিক সার ব্যবহার করে ফলন বেড়েছে ৩০ শতাশের বেশি। এ ছাড়া ধানে রোগপোকার উপদ্রবও কমেছে।’’ রাসায়নির সারের এই জৈব বিকল্প চাষিকে রাসায়নিক এবং বিষমুক্ত আবাদের পথ খুলে দিচ্ছে। অন্তত হাতেকলমে ব্যবহার করে চাষিরা সেই রকমই মনে করছেন। কৌশিকবাবু মনে করেন, এই ধরনের শ্যাওলা-নির্যাস প্রয়োগ করে পরিবেশকে সুরক্ষিত রেখে প্রায় সব গোত্রের ফসলেরই ফলন ও গুণমান বাড়ানো সম্ভব। আশার কথা হল, সিএসএমসিআরআই ইতিমধ্যেই ছোট-বড় কয়েকটি সংস্থাকে এই নির্যাস বাণিজ্যিক ভাবে উপাদন এবং বিক্রির সত্ত্ব দিয়েছে। নির্যাস এখন বাজারে পাওয়াও যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় এই গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানী অরূপ ঘোষ গুজরাতের ভবনগর থেকে ফোনে জানালেন, তাঁরা মূলত দুই ধরনের সমুদ্র শ্যাওলা থেকে নির্যাস তৈরি করছেন। এর একটা বড় সুবিধে, ওই শ্যাওলা সমুদ্রের জলে চাষ করে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। তাছাড়া তামিলনাডু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরলের মতো উপকূলীয় রাজ্যগুলোতে মস্যজীবীরা স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে শ্যাওলা চাষ করছেন। এই কাজে প্রচুর মহিলাও যুক্ত। এতে তাঁরা বিকল্প জীবিকার সন্ধান পেয়েছেন। ফলে, সমুদ্রে মাছশিকার থেকে বিরত হয়েছেন। এতে সমুদ্রের উপর চাপও কমছে।
তবে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে শ্যাওলা চাষ হয় না। তার কোনও রেওয়াজও নেই। অথচ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অভিজিৎ মিত্র জানালেন, পশ্চিমঙ্গের উপকূল অঞ্চল এবং সুন্দরবন সংলগ্ন সমুদ্র, নদী এবং খাড়িতে ১৬টি জাতের সমুদ্রিক শ্যাওলা পাওয়া যায়। তার মধ্যে ৪টি জাতের শ্যাওলা নিয়ে কাজ করে তাঁরা দেখেছেন, তাতে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন। ওই প্রোটিন ফসলের খাদ্য বা উন্নতমানের সার হিসেবে ব্যবহার করা যেতেই পারে। অভিজিতবাবুর কথায়, ‘‘সমুদ্র শ্যাওলার ওই প্রোটিন চাষের কাজে অবশ্যই ব্যবহার করা যায়। সমুদ্রিক শ্যাওলা পচিয়ে তা থেকে উন্নত মানের জৈব সার তৈরি করা সম্ভব অথবা শ্যাওলার নির্যাস দিয়ে দ্রবণ তৈরি করে তা ফসলে প্রয়োগ করা যায়।’’
সমুদ্র শ্যাওলার নির্যাস মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করেও ভাল ফল মিলেছে। যে পুকুরে ৮০ গ্রামের চেয়ে বড় চিংড়ি হত না, সেখানে সমুদ্র শ্যাওলা থেকে তৈরি জৈব খাদ্য ব্যবহার করে ১২০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের চিংড়ি তৈরি করা গিয়েছে। রাজ্যের উপকূলে শ্যাওলার চাষ চালু করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় একটি প্রকল্প তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অভিজিৎবাবু।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.