রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ১...
বিশ্বাস হারানো পাপ?
বিশ্বাসবাড়ি এসে গিয়েছে, নামুন।’
গোবরডাঙা স্টেশন থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে অটো যেখানে থামল তার ডান হাতে সিমেন্ট-বাঁধানো একটা বাসস্ট্যান্ড। বাঁ দিকে মেঠো রাস্তা ঢুকে গিয়েছে। কষে এক পশলা বৃষ্টির পর তাতে গোড়ালি-ডোবা কাদা। রাস্তার ঠিক পাশেই একটা বাঁশগাছের গায়ে বরুণের বিশাল সাদা-কালো ছবি কারা যেন টাঙিয়ে দিয়েছে। অটোর পিছনে, ল্যাম্পপোস্টে, বাসস্ট্যান্ডে সর্বত্র পোস্টার মারা ‘বরুণ হত্যার চক্রীদের শাস্তি চাই।’ বলদেঘাটা ব্রিজ আর সুঁটিয়া বাজারের মাঝামাঝি জায়গাটা বরুণ বিশ্বাসের নামেই এখন লোকমুখে ‘বিশ্বাসবাড়ি’। দোকানের সাইনবোর্ডেও সেটাই লেখা!
এখান থেকেই প্রায় ৬০ কিলোমিটার উজিয়ে কলকাতায় যেতেন বরুণ। প্রথমে মোটর সাইকেল, তার পর ট্রেন। মিত্র ইনস্টিটিউশন (মেন)-এ বাংলার মাস্টারমশাই। খুন হওয়ার আশঙ্কা ছিল অনেক দিন থেকেই। একে সুঁটিয়া গণধর্ষণ মামলার অন্যতম প্রধান সাক্ষী, তার উপর নদীখাল সংস্কার আন্দোলনে নেমে এলাকার ইটভাটা আর ভেড়ি মালিকদের একাংশের টার্গেট হয়ে গিয়েছিলেন। কলকাতার অপেক্ষাকৃত নিরাপদ আবহে চলে যেতে পারতেন, যেতে চাননি। হেসে বলতেন, ‘আমি হলাম অনেকটা কামু-র ‘দ্য প্লেগ’-এর নায়ক। সে জানে, প্লেগে ভরা প্যারিসে থাকলে মৃত্যু অনিবার্য। তবু পালাতে পারছে না। কারণ সে এটাও জানে, চলে গেলে এই ধুঁকতে থাকা, দিশেহারা, অসুস্থ মানুষগুলোর আর কোনও ভরসা নেই। সুঁটিয়ারও দরকার আছে আমাকে।’
সেই নায়ক প্লেগেই মারা গিয়েছিলেন, আর বরুণ গুলিতে। ঠিক এক বছর আগে, জুলাইয়ের পাঁচ তারিখ। সন্ধের ট্রেনে অফিস থেকে ফিরছেন। গোবরডাঙা স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম-ঘেঁষা টিকিট কাউন্টারের সামনে মোটর সাইকেলটা ছিল। ওঠার পরেই পিছন থেকে একটা গুলি।
ছবি: সুমন চৌধুরী
প্রায় আধ ঘণ্টা রক্তে মাখামাখি হয়ে কাতরেছেন। কেউ এগিয়ে আসেনি। প্রায় দু’ঘণ্টা পরে যখন বারাসত হাসপাতালে ঢোকানো হচ্ছে, ট্রলিতেই ৩৯ বছরের লড়াকু জীবন শেষ।
‘ভয় পেয়ে গিয়েছিল ওরা। বরুণের চোখকে ভয় পেয়েছিল, ওর প্রতিবাদকে ভয় পেয়েছিল, সাহসকে ভয় পেয়েছিল। তাই কাপুরুষগুলো পিছন থেকে গুলি করল।’ একটা ঘোরের মধ্যে কথাগুলো বলতে-বলতে বারান্দায় পাতা টুলে বসে পড়লেন প্রমীলাদি। বরুণের বড়দি। পাঁচ ভাইবোনের সবচেয়ে বড়। আর বরুণ ছিলেন সবচেয়ে ছোট। দুজনের মধ্যে প্রায় দশ বছরের ব্যবধান। ছেলের মতো মানুষ করেছেন বরুণকে।
পঞ্চাশ পার করা প্রমীলাদি এখন বাড়িতে একা। প্রতিবাদী মঞ্চের মিটিং-মিছিলে থাকার চেষ্টা করেন। বাকি সময় সিমেন্টের মেঝে আর টিনের চাল দেওয়া তিন কামরার বাড়িটায় এলোমেলো ঘুরে বেড়ান। বরুণের বইগুলো সাজিয়ে রাখেন, বরুণের শ্রীখোল-মাউথ অর্গান-এর ধুলো ঝাড়েন, তাঁর ছবি আঁকার খাতার পাতা ওলটান। সকাল-সন্ধ্যা মরে যাওয়া ছোট ভাইয়ের ন্যাওটা নেড়ি কুকুরটা আসে। তাকে খেতে দিতে হয়। বকবকও করেন তার সঙ্গে। পাঁচপোঁতা থেকে সপ্তাহে কয়েক দিন এক বুড়ি বোষ্টমিও আসেন দুপুরে দিকে। বরুণ তাঁকে ডাকতেন বোষ্টমি মাসি বলে। খাবারের টাকা, ওষুধের টাকা দিতেন, নিজের গদিওয়ালা খাটও দিয়ে দিয়েছিলেন। বুড়ি এসে বরুণের ছবিতে এক বার হাত বুলিয়ে যান। কখনও-কখনও খাবার চেয়ে খান, কখনও আবার প্রমীলা সাধলেও খান না।
গত বছর ৫ জুলাই বরুণের গুলি লাগার খবর যখন এল তখন বিকেল গড়িয়েছে। বাবা জগদীশ বিশ্বাস আর মা গীতাঞ্জলি সেই সময় কিছু দিনের জন্য কলকাতা থেকে সুঁটিয়ার বাড়ি এসেছিলেন। খবর শুনেই পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে বাবা উদ্ভ্রান্তের মতো বেরিয়ে পড়লেন, মা থম মেরে ঠাকুরঘরে বসে রইলেন। চোখ দিয়ে দরদর করে জল পড়ছে, অথচ, মুখে বিড়বিড় করে মা বলে যাচ্ছেন, ‘আমি যদি এখন আছাড়িপিছাড়ি করে কাঁদি, তা হলে অন্য মায়েরা ভয় পাবে। কেউ আর ছেলেকে বরুণ হতে বলবে না।’ বাড়িতে বরুণের লাশ এল। মা-বাবা কাঁদলেন না।
বরুণ বিশ্বাসের না-থাকার ধাক্কাটা টলোমলো করে দিয়েছিল সুঁটিয়া ধর্ষণ-বিরোধী প্রতিবাদী মঞ্চকে। তবু সবাই প্রাণপণ চোয়ালটা শক্ত করে রেখেছেন। গত ২১ জুন একটা টেম্পো ভাড়া করে সবাই মিলে গিয়েছিলেন কলকাতায়। কামদুনির ঘটনার প্রতিবাদে আয়োজিত মিছিলে। ফেস্টুন আঁকড়ে স্লোগান দিয়েছেন। তাঁদের কাছে, ‘কামদুনি আর সুঁটিয়া আলাদা কোথায়? সেই ধর্ষণ, সেই চোখরাঙানি, সেই দলনির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতাদের নিস্পৃহ হয়ে যাওয়া।’

কার্গিল পার্টি
সুঁটিয়ার বাসিন্দাদের কথা অনুযায়ী: সুঁটিয়া-সংলগ্ন নাগবাড়ির কুখ্যাত মস্তান, তোলাবাজ সুশান্ত চৌধুরীর নেতৃত্বে শুরু হয় অন্ধকার-রাজ। সময়টা ১৯৯৯-২০০২। সুঁটিয়া, বিষ্ণুপুর, গাজনা, পশ্চিম বারাসত, কানাপুকুর, কুটিপাড়া, মধ্যম বারাসত, স্বরূপনগরের মতো একাধিক জায়গায় থাবা বসিয়েছিল সুশান্ত আর তার দলবল। সেই সময় শাসকদলের একাধিক নেতার নাকি হাত ছিল সুশান্তর মাথায়। সে দলের ছেলেদের অনায়াসে বলত, ‘এলাকার কোন মেয়েটাকে ভাল লাগছে বল, তুলে আন, চুটিয়ে ভোগ কর। বাকিটা আমি সামলে দেব।’ সুঁটিয়ার জঙ্গলে একটা চালাঘর ছিল তাদের কুকাজের আস্তানা। লোকে বলত, ‘সুখসাধুর ভিটে’। একের পর এক মহিলাকে সেখানে তুলে নিয়ে গিয়ে রাতের পর রাত ধর্ষণ করা হয়েছে। কথায়-কথায় বন্দুকের নল মাথায় ঠেকিয়ে তোলা আদায়, মিথ্যে অভিযোগে মারধর, ‘জরিমানা’ করা দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তখন কার্গিল যুদ্ধের সময়। প্রায় যুদ্ধক্ষেত্রের মতো তছনছ হয়ে যাওয়া সুঁটিয়া গ্রামে সুশান্ত-বাহিনীর নাম হয়ে গিয়েছিল ‘কার্গিল পার্টি’। অত্যাচারের ভয়ে বাইরে থেকে আত্মীয়স্বজনের আসা বন্ধ। কিশোরী-যুবতীদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছিল গ্রাম থেকে দূরে।
এই ২০১৩ সালের জুলাইয়ের এক দুপুরে বরুণ বিশ্বাসের বাড়ির বারান্দায় বসে ভয়ংকর সব স্মৃতি উগরে দিচ্ছিলেন কার্গিল পার্টির হাতে ধর্ষিতা একাধিক মহিলা। মারাত্মক সেই সব অভিযোগ। এবং প্রচুর। ঘটনাগুলো বীভৎসতায় হরর ফিল্মকেও ছাড়িয়ে যায়। কার্গিল পার্টি সে অভিযোগ স্বীকার করে কি না, আলাদা কথা। কিন্তু এই অন্ধকারের আখ্যান শুনলে শিউরে উঠতে হয়, আমাদের সিরিয়াল-দেখা সন্ধের শরীরে অ্যাসিড চুঁইয়ে পড়ে পাড়ায় বিয়েবাড়ি হচ্ছে। দলবল পাঠিয়ে সেখান থেকে এক কিশোরীকে তুলে নিয়ে গেল সুশান্ত। (মেয়েটির অপরাধ: সে নাকি বলেছিল, বিয়েবাড়ির ফুচকাটা ভাল নয়।) সারা রাত সুখসাধুর ভিটেয় গণধর্ষিতা হল সেই কিশোরী। সকালে অজ্ঞান-রক্তাক্ত কিশোরীকে বাড়িতে ফেলে রেখে আসার সময় পরিবারের সবাইকে হুমকি দিয়ে এল তারা। পুলিশকে জানালেই বাড়িসুদ্ধ সব ‘ফিনিশ’ হয়ে যাবে। এক দিন বাদে আবার সেই কিশোরীকে সারা রাতের জন্য তুলে নিয়ে যাওয়া হল, তার পরের রাতে আবার, আবার। এক সপ্তাহ এই ভাবে চলার পরে, মেয়েকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালালেন মা।
বাবা-মা আর দুই কিশোরী মেয়ে রাতে ঘুমোচ্ছেন। দরজা ভেঙে বাবা-মা’র কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে টেনে দালানে নিয়ে এল কার্গিল পার্টির লোক। তার পর তাঁদের সামনেই সারা রাত দুই বোনকে গণধর্ষণ করা হল।
ছেলে বাড়ি ফিরছে না দেখে খুঁজতে বেরিয়েছিলেন মা আর দাদু। রাস্তায় কার্গিল পার্টির লোক তাঁদের ধরে নিয়ে যায়। বউমার সঙ্গে শ্বশুরের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে এই অভিযোগ তুলে মহিলাকে গণধর্ষণ করা হয়। শেষে ৬০ হাজার টাকা আদায় করে দুজনকে ছাড়া হয়।
সুঁটিয়ায় বাপের বাড়ি আসছিলেন এক মহিলা। বলদেঘাটা ব্রিজ থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে সারা দিন ধর্ষণ করার পর উলঙ্গ অবস্থায় রাস্তায় হাঁটানো হয়। কার্গিল পার্টির হাতে-পায়ে ধরে দশ হাজার টাকা দেওয়ার পর ওই মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পান তাঁর স্বামী।
অসংখ্য অভিযোগ। এগুলি কিছু উদাহরণ।

এবং বরুণ
বন্যায় বার বার ভেসে যেত সুঁটিয়া। ২০০২ সালে সুঁটিয়া হাইস্কুল মাঠে একটা ‘ফ্লাড সেন্টার’ তৈরির জন্য টাকা বরাদ্দ করে সরকার। অভিযোগ: কাজ শুরুর আগে ক্ষমতান্ধ সুশান্ত ও তার দলবল ঠিকাদারের থেকে এক লক্ষ টাকা দাবি করে। ঠিকাদার সঙ্গে-সঙ্গে প্রশাসনকে জানান। ব্যাপারটা অনেক দূর গড়ায়। সরকারের মুখরক্ষায় সুশান্তর রক্ষাকর্তারাই নাকি সাময়িক ভাবে তাকে আত্মসমর্পণের পরামর্শ দেন।
সুশান্ত জেলে যাওয়ার পরেই সুঁটিয়ার মানুষের ভিতরে জ্বলতে থাকা আগুন ক্রমশ বাইরে আসা শুরু হয়। ১ অগস্ট, ২০০২। সুঁটিয়া বাজারে প্রথম প্রকাশ্য প্রতিবাদসভার ডাক দেওয়া হয়। কিন্তু সুশান্তর অর্ধেক সাঙ্গোপাঙ্গ তখনও জেলের বাইরে। কারও সাহস হচ্ছিল না বক্তৃতা দেওয়ার। এগিয়ে এলেন ছিপছিপে চেহারার এক যুবক। গালে হালকা দাড়ি। উজ্জ্বল চোখ দুটো। মাইকটা তুলে নিয়ে বললেন, ‘যদি এখনও মা-বোনেদের সম্মান রক্ষা করতে না পারি তা হলে আমরা সভ্য সমাজে থাকার যোগ্য নই।’
নাড়া খেয়ে গেল সুঁটিয়া। সেই প্রথম সামনে এলেন বরুণ। পরের দিন, ২ অগস্ট সুঁটিয়া হাটচালায় সভা করে তৈরি হল ধর্ষণ-বিরোধী প্রতিবাদী মঞ্চ। ৭০ জন সদস্যের কমিটি হল। তৈরি হল অভিযুক্তদের একটা তালিকাও। আশ্চর্য, সেই সময়ের শাসকদল বামফ্রন্টের কোনও নেতাই এই মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চাইলেন না। দক্ষিণপন্থী কিছু নেতা প্রথমটা এলেন। তার পর সব অভিযুক্তের নাম ধীরে ধীরে সামনে আসতে লাগল। দক্ষিণপন্থীরা হঠাৎ পালটা ‘শান্তি কমিটি’ তৈরি করলেন। কিন্তু তা স্থায়ী হল না। ইতিমধ্যে প্রতিবাদী মঞ্চের সম্পাদক হিসাবে আন্দোলনের রাশ হাতে নিয়ে নিয়েছেন বরুণ। ডেপুটেশনের কপি তৈরি করেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বেই ১৬ অগস্ট ১৮টি গাড়ির কনভয় সাজিয়ে এসডিও, এসডিপিও, ওসি-র কাছে ডেপুটেশন দেন সুঁটিয়ার মানুষ। মহিলারা রাস্তায় নামেন।
বরুণ উদ্যোগী হয়ে এলাকায় নিয়ে আসেন রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্যদের। ধর্ষিতাদের সঙ্গে কথা বলে আর এলাকার পরিস্থিতি ঘুরে দেখে স্তম্ভিত হন সদস্যরা, খবর যায় পুলিশের উঁচু মহলে। বরুণের চেষ্টাতেই একে একে এগিয়ে এসে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে থাকেন ধর্ষিতারা।
গণধর্ষণ, খুন, খুনের হুমকি, তোলাবাজি মিলিয়ে সুঁটিয়া-কাণ্ডে ৩৩টি মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্ত ৩৮ জন। একটি মামলার শুনানি শুরু হয়নি। শেষ হয়েছে ২০টি মামলা। সুশান্ত ও তার শাগরেদ রমেশ মজুমদার, বীরেশ্বর ঢালি, রিপন বিশ্বাস, লক্ষ্মণ তরফদার, অনিল বালাদের যাবজ্জীবন হয়েছে। জেলে সুশান্তর সঙ্গে দেখা করে কথামৃত উপহার দিয়ে এসেছিলেন বরুণ। ধর্ষিতাদের নিয়মিত কাউন্সেলিং করতেন। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার উৎসাহ দিতেন। আজ তাঁদের অনেকেই বিবাহিত, সংসারী, সন্তানের মা।
সুঁটিয়ার মানুষের ধারণা, বরুণের উপর গুন্ডা-চাঁইদের রাগ শুধু গণধর্ষণ মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য নয়, তিনি অন্য মৌচাকেও ঢিল ছুড়েছিলেন। ইছামতী-যমুনা নদীর গতিপথ আটকে এলাকায় প্রচুর ইটভাটা ও ভেড়ির কোটি কোটি টাকার ব্যবসা চলত। তার জন্য প্রতি বছর বন্যা হত সুঁটিয়া অঞ্চলে। জেহাদ ঘোষণা করে নদীখাল সংস্কার চেয়েছিলেন বরুণ। প্রাক্তন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইঞা ৩৫ কোটি টাকা মঞ্জুরও করেন। এতেই কিছু ভেড়ি ও ইটভাটা মালিকের স্বার্থে ঘা লেগেছিল। প্রশ্ন উঠেছে, তার জেরেই কি এই খুন?

সুঁটিয়া এখন
টাকা বরাদ্দ হওয়া সত্ত্বেও সুঁটিয়ায় খাল সংস্কারের কাজ সরকার বন্ধ করে রেখেছে কেন? তা হলে কি বিশেষ কোনও চাপ কাজ করছে এর পিছনে? এই প্রশ্নটাই এখন খুব ঘোরাফেরা করছে এলাকায়। প্রতিবাদী মঞ্চের আরও বক্তব্য, বরুণ-হত্যায় যে দুজন ধরা পড়েছে, তারা এলাকার বাইরের লোক। তারা ‘সুপারি কিলার’ বলে অভিযোগ। কিন্তু তাদের পাঠাল কে? মূল চক্রীদের খুঁজে সাজা দেওয়া হচ্ছে না কেন?
এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বরুণের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের তোড়জোড়। আশপাশের এলাকায় রোজই চাঁদা তুলতে যাওয়া হচ্ছে। রুটিন মিটিং-মিছিলও হচ্ছে প্রতিবাদী মঞ্চের। কিন্তু কোথায় যেন বাঁধুনিটা আলগা। সেই জোরটা নেই। ভিতরে-ভিতরে একটা আতঙ্কের স্রোত কোথাও বয়ে যাচ্ছে। মঞ্চের এক জন দেহরক্ষী পেয়েছেন, কিন্তু অনেকেই চোরাগোপ্তা হামলার ভয়ে সিঁটিয়ে আছেন। লড়াইটা এত দূর এসে এ বার দানা বাঁধতে পারছে না। ডান-বাম কোনও রাজনৈতিক দলই সুঁটিয়া প্রতিবাদী মঞ্চকে সাহায্য করার মধ্যে নেই। এ দিকে, সুশান্তর অনেক শাগরেদই এখনও জেলের বাইরে। তারা আপ্রাণ পুরনো দাপটে ফিরতে চাইছে।
অনেকে অভিযোগ করলেন, মাঝে মাঝেই গভীর রাতে বাইরে থেকে একাধিক গাড়ি আর মোটর সাইকেল চড়ে গ্রামে ঢোকে অপরিচিত কিছু ছেলে। বিশেষ কয়েকটা বাড়িতে রাত কাটিয়ে ভোরে ফিরে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলার বক্তব্য, ‘মাস কয়েক আগে এক রাতে কয়েকটা ছেলে বাইকে চড়ে এল। আমাকে হুমকি দিয়ে বাড়ির খড়ের গাদার ভিতরে অনেক অস্ত্র লুকিয়ে রাখল। সকালে নিয়ে চলে গেল। কাউকে জানালে সবাইকে শেষ করে দেবে বলেছিল, পুলিশকে বলতে পারিনি।’
পুলিশকে জিজ্ঞাসা করে অবশ্য উত্তর মিলেছে, ‘সব পিসফুল। আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ নেই।’ কিন্তু সুঁটিয়া বুঝছে, এগারো বছর ধরে চালানো আন্দোলনটা আর শুধু পোস্টার লাগিয়ে চাগিয়ে রাখা যাচ্ছে না। সেই বিভীষিকা, সেই গা-হিম রাত্তির ফিরে আসার অপেক্ষায় থাবা চাটছে। বরুণের ছবিগুলো বৃষ্টি-বাদলায় নেতিয়ে পড়ছে। এ দেশে এমনই হয়। যদি না আর এক জন বরুণ হঠাৎই এগিয়ে আসেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.