সম্পাদকীয়...
ভীরুভোগ্যা বসুন্ধরা
নূতন সমীক্ষায় প্রকাশ: যে ইঁদুর যত অলস, তাহার দীর্ঘজীবী হইবার সম্ভাবনা তত অধিক। সমীক্ষকদের মত, সিদ্ধান্তটি মনুষ্যের ক্ষেত্রেও সত্য ধরা যাইতে পারে। অর্থাৎ, কর্মময় ও প্রাণপ্রাচুর্যপূর্ণ মানুষটি জনপ্রিয়তা ও অহমিকা চাখিয়া তীব্র হম্বিতম্বি করিয়া বেড়াইতেছেন বটে, কিন্তু তিনি যে নিজ আয়ু হুড়হুড়াইয়া ফুরাইয়া ফেলিতেছেন, তাহা তাঁহার ব্যস্ত ও তৃপ্ত মস্তিষ্কে হানা দিতেছে না। নিল আমর্স্ট্রং বলিয়াছিলেন, তিনি মনে করেন প্রতিটি মানুষের নির্দিষ্ট সংখ্যক হৃদস্পন্দন বরাদ্দ রহিয়াছে এবং তিনি ব্যায়াম করিয়া হাঁপাইয়া নিজ স্পন্দনগুলি দ্রুত ফুরাইয়া ফেলিতে চাহেন না। এই সমীক্ষারও নীতিকথা: কর্ম করিয়া, দৌড়াইয়া, হইচই বাগাইয়া নিজ শ্বাসের কোটা ফুরাইয়ো না, বরং থম মারিয়া বসিয়া থাকো, সোফায় পা তুলিয়া দিয়া টিভি অবলোকন করো, ঝিমাইতে ঝিমাইতে জীবন উপভোগ করো ও কর্মোদ্যমের দম লাগাইয়া সমাজ সংসার উদ্ধার করিয়া যে ব্যক্তিগণ দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য হইয়া ছুটিতেছেন, তাহাদের দেখিয়া মুচকি হাস্য করো। তাহারা সহসা মুখ থুবড়াইয়া পড়িয়া সাধনোচিত ধামে গমন করিলে, চুকচুক করিয়া শোক প্রকাশ করো। সত্যই, কে বলিল এই অমূল্য জীবন কাজ করিয়া ঘাম ঝরাইয়া গাত্রে ব্যথা ডাকিয়া যাপন করিতে হইবে? বরং বসিয়া বসিয়া গোড়ালি চুলকাইলে কত স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটিয়া যায়। ভাবিলে স্তম্ভিত হইতে হয়, সুখে থাকিতে কত মানুষ নিজ স্কন্ধে ভূতের কিল টানিয়া আনিতেছে: কেহ অরণ্য কাটিতেছে, কেহ ঔষধ আবিষ্কার করিতেছে, কেহ পাহাড় চড়িতেছে, কেহ মাথা চুলকাইয়া চুল ছিঁড়িয়া অন্ত্যমিল বাহির করিতেছে। সাধে কি মহাপুরুষ বলিয়াছিলেন মানুষের সকল অ-সুখের মূল: সে একটি ঘরে চুপ করিয়া বসিতে জানে না।
সমীক্ষায় ইহাও মিলিল: যে ইঁদুরগুলি অত্যন্ত ভীরু, কোনও ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনায় যাহারা শামিল হইতে চাহে না, তাহাদের বাঁচিবার সম্ভাবনা অধিক, সেই ইঁদুরের তুলনায় যাহারা সাহস করিয়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে আগাইয়া যাইতেছে, ঘটনায় অংশ লইবার জন্য যাহাদের সত্তা সুলসুলাইতেছে। ইহারও মনুষ্য-উদাহরণ ভূরি ভূরি। বিপ্লব করিতে গিয়া, প্রতিবাদ করিতে গিয়া, অন্যায় রুখিতে গিয়া কত জন বেঘোরে প্রাণ হারাইতেছেন। অথচ কোটি কোটি সাধারণ মানুষ সাতে পাঁচে পঁয়ত্রিশে নাই, দিব্য অকলুষ ত্বক ও অটুট দন্তরুচিকৌমুদী লইয়া যুগ যুগ বাজার করিতেছেন, পটল তুলিবার বদলে নধর পটল টিপিয়া-টুপিয়া দর করিতেছেন। গ্রন্থে ওই প্রাণদানকারী মানুষগুলিকে লইয়া বহু আদিখ্যেতা থাকে, পথিমধ্যে তাঁহাদের মূর্তি গড়িয়া ঘটা করিয়া মাল্যদানও ঘটে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই বসুন্ধরার রূপ-রস-গন্ধ উপভোগের মজাটি ভীরুগণই অধিক দিন ধরিয়া আস্বাদন করিয়া থাকে, তাঁহারা নয়। এই দিনের পর দিন বাঁচিয়া থাকা, টিকিয়া থাকা, বৃক্ষের পানে চাহিয়া, শিশুর হাস্যের পানে চাহিয়া, টমেটো-সস টাকনা দিয়া জড়াইয়া-মড়াইয়া বাঁচিয়া থাকা, ইহাই কি মনুষ্যের সর্বাধিক অভীষ্ট নহে? কেহ বলিবেন, ভীরু অলস দীর্ঘ জীবনের অপেক্ষা কর্মময় সাহসী হ্রস্ব জীবন অধিক সম্মানের। অবশ্যই। জীবনের গুণমান এই অকালমৃতদেরই অধিক। কিন্তু গুণ বা মানের তুলনায় জীবনের দৈর্ঘ্য অধিক হইলে বহু মানুষই মহা খুশি। কীর্তি বা সাহস লইয়া কী হইবে। এইগুলি ইতিহাস-বহির ফাঁদ মাত্র। ইহা লইয়া গীত রচনা করিলে জমে, এবং সেই জমাটি রস ভোগ করিবার জন্য সেই অলস ভীরু মনুষ্য-রাশিরই প্রয়োজন ঘটে। শেষ পর্যন্ত বসুন্ধরাকে ভীরুরাই ভোগ করিয়া থাকেন। সংস্কৃত শ্লোকে ভুলিয়া মূষিক-ভবিষ্য বিপন্ন করিবেন না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.