অর্থাভাবে হোঁচট খাচ্ছে পরিবহণের আধুনিকীকরণ প্রকল্প। বকেয়া পথ-কর আদায় করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাও মার খাচ্ছে। ক্রমেই বাড়ছে অনাদায়ী এই করের পরিমাণ। কত কোটি টাকা, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারছেন না পরিবহণ কর্তারা। তাঁদের মতে, পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নেই বলে এই অবস্থা।
কলকাতায় এই কর আদায়ের দায়িত্ব পাবলিক ভেহিকেলস্ বিভাগের। গাড়ির নথিভূক্তিকরণের পরে মালিকদের কেউ এককালীন এই টাকা দিয়ে দেন। কেউ দেন প্রতি পাঁচ বছর অন্তর। দ্বিতীয় শ্রেণির করদাতার সংখ্যাই বেশি। তাঁদের একটি বড় অংশ কর দিচ্ছেন না। ফলে বছরের পর বছর জমছে অনাদায়ী পথ-করের পরিমাণ।
কেন এই হাল? পিভিডি-র এক পদস্থ অফিসার বলেন, “এত গাড়ির পথ-কর বকেয়া যে, সে রকম সব গাড়ির মালিকদের চিহ্নিত করে তাঁদের চিঠি পাঠানো এক কথায় অসম্ভব।” তবে রাস্তায় চালকদের কাছে নথি পরীক্ষার সময়ে এটা ধরা পড়ে। ধরা পড়ে গাড়ির মালিকানা হস্তান্তরের সময়েও। সে ক্ষেত্রে রয়েছে মোটা জরিমানার বিধান। পিভিডি-র উপ-অধিকর্তা শাহরিয়ার শিবলি বলেন, “আমরা মাঝেমাঝে অভিযান চালাই। কর বকেয়া রেখেছেন, এমন বেশ কিছু গাড়ির মালিককে ‘ডিমান্ড নোটিস’ পাঠাই। এ ছাড়া খুব একটা কিছু করার থাকে না।” পিভিডি-র যুক্তি, এত গাড়ির নথি পরীক্ষা করে অনাদায়ী করদাতা খুঁজে বার করাও সম্ভব নয়।
১৯৮৯ সালের মোটর ভেহিকেলস্ আইনের সংশোধন করে সম্প্রতি বদল করা হয়েছে পথ-কর। আগে ইঞ্জিনের সক্ষমতার (অশ্বশক্তি) উপরে নিভর্র করত এই কর। দু’টি নির্মাতার দু’টি মডেলের দামে বড় ব্যবধান থাকলেও গাড়ির ইঞ্জিনের সক্ষমতা সমান হলে পথ-কর হত একই রকম। এখন এই দামের তারতম্যের নিরিখে করের হারে থাকছে ব্যবধান। কর ধার্য হচ্ছে গাড়ির মূল্যের উপরে। ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে মূল্যবান কোনও গাড়ি কিনলে মালিককে এককালীন ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৫ লক্ষ টাকা কর হিসাবে দিতে হবে। পাঁচ বছরের জন্য কর দিতে মালিককে গুনতে হবে ৫.৫ শতাংশ অর্থাৎ ৩ লক্ষ টাকা।
পথ-করের মেয়াদ ১৫ দিনের বেশি পেরিয়ে গেলে জরিমানা দিতে হত ২৫ শতাংশ। ৪৫ এবং ৭৫ দিন পেরোলে যথাক্রমে ৫০ শতাংশ এবং ১০০ শতাংশ জরিমানা। পিভিডি সূত্রের খবর, “এই তিনটি হার কমানো হয়েছে। কিন্তু যেহেতু গাড়ির মূল্যের উপরে মূল করের পরিমাণ ধার্য হচ্ছে, জরিমানা বাবদ আয় কমেনি।”
সমস্যাটা পুরনো। বেড়েছে জটিলতা। ১৯৬২ সালের ৬ জানুয়ারি, অর্থাৎ প্রায় ৫১ বছর আগে এই পত্রিকায় এক রিপোর্টে লেখা হয়েছিল, “কলিকাতার পাবলিক ভেহিকেলস্ বিভাগের প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার মতো ট্যাক্স এখনও অনাদায়ী। ঠিক একই কারণে ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার জন্য ১৯৫৭ সালে এই বিভাগটিকে কলিকাতা পুলিশের অধীন হইতে সরাইয়া এক ডাইরেক্টরের অধীন স্বতন্ত্র বিভাগ করা হইয়াছিল।” তাতে সমস্যা দূর হয়নি। বরং বকেয়ার পরিমাণ বহুগুণ বেড়েছে। দফতর সূত্রের খবর, এই বকেয়ার পরিমাণ কম করেও হবে ১০০ কোটি টাকা। শাহরিয়ার শিবলি অবশ্য বলেন, “বকেয়ার পরিমাণ বলা সম্ভব নয়। কেবল ’১২-’১৩ অর্থবর্ষে পিভিডি সব মিলিয়ে ২০০ কোটি টাকার উপরে আয় করেছে।” |