তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা নির্দল প্রার্থী হয়ে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন, তাতে নতুনত্ব নেই। তা বলে
দলের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে একেবারে ‘সবুজ তৃণমূল’ নামে অফিস খুলে ফেলা?
তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমনই চেহারা নিয়েছে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ১ ব্লকে। ওই পঞ্চায়েত সমিতির ২১টি আসনের মধ্যে ৮টিতে এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮৯টি আসনের মধ্যে ৩০টিরও বেশি আসনে প্রার্থী দিয়েছে ‘সবুজ তৃণমূল’ গোষ্ঠী। তাঁদের কারও প্রতীক আম, কারও বা বালতি। আদা-জল খেয়ে তাঁরা ভোটের ময়দানে নেমেছেন মূল দলকে বেগ দিতে।
আগের ব্লক সভাপতি সলিল কুম্ভকারের মৃত্যুর পরে নেতৃত্ব নিয়ে এখানে দলের দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রদীপ মাজির হাতে দায়িত্ব সঁপে দেন জেলা নেতৃত্ব। ফের বিবাদ বাধে পঞ্চায়েতে প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে। দল সূত্রের খবর, গ্রাম পঞ্চায়েত ও সমিতির আসনে তৃণমূলের অনেক প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। প্রতীক বিলির দায়িত্ব পান প্রদীপবাবু। বিক্ষুব্ধ অংশের অভিযোগ, ওই নেতা বেছে বেছে তাঁর অনুগামীদের প্রতীক দিয়ে বঞ্চিত করেছেন দলের পুরনো নেতা-কর্মীদের। |
দলের তরফে বিক্ষুব্ধদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করার জন্য বোঝানো হলেও কাজ হয়নি। এমনকী, রঘুনাথপুর শহরের প্রান্তে মহকুমা হাসপাতালের কাছে কিছুদিন আগে নির্বাচনী কার্যালয় পর্যন্ত খুলেছে ‘সবুজ তৃণমূল’। হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে তৃণমূলের প্রার্থীদের হরিয়ে ‘সবুজ তৃণমূলের’ নির্দল প্রাথীদের জেতানোর আহ্বানও জানানো হয়েছে। নতুন গোষ্ঠীর যুগ্ম-আহ্বায়ক হয়েছেন দলের তফসিলি সেলের নেতা অঙ্কুর বাউরি এবং নতুনডি গ্রাম পঞ্চায়েতের নেতা বিকাশ মণ্ডল। রয়েছেন দলের সংখ্যালঘু সেলের নেতা সফি আনসারিও। তবে, এই বিদ্রোহের মুখ হলেন তৃণমূলেরই জেলা কমিটির সদস্য তথা ব্লক সভাপতি হওয়ার অন্যতম দাবিদার মিহির বাউরি।
ব্লকের মধ্যে বাবুগ্রাম পঞ্চায়েত বাদ দিয়ে বাকি ছ’টি পঞ্চায়েতেই প্রার্থী দিয়েছে ‘সবুজ তৃণমূল’। বিকাশবাবু নিজে নতুনডি এলাকা থেকে পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী। অঙ্কুরবাবুর মেয়ে আড়রা পঞ্চায়েত এলাকায় প্রার্থী হয়েছেন। বিকাশবাবুর অভিযোগ, “ভোট ঘোষণার পরেই বুথ স্তরে দলের কর্মীদের নিয়ে আলোচনা করে প্রার্থী স্থির করে জেলায় পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু, প্রদীপবাবু স্বজনপোষণ করে দলের দীর্ঘদিনের কর্মীদের বাদ দিয়ে অন্য দল থেকে আসা লোকদের দলীয় প্রতীক দিয়েছেন।” বিক্ষুব্ধদের ক্ষোভ রয়েছে রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরির বিরুদ্ধেও। মিহিরবাবুর দাবি, “বিধায়ক ও প্রদীপবাবু মিলে দুঃসময়ে দলে থাকা নেতা-কর্মীদের বদলে প্রার্থী করেছেন অন্য দল থেকে আসা লোকেদের। বিষয়টি জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছি। তাঁরা ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে দলে আরও ধস নামবে।”
একে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নেই। আগের জোট শরিক এসইউসি-র রঘুনাথপুর এলাকায় সমর্থন রয়েছে। এ বার পৃথক প্রার্থী দিয়েছে তারাও। এই অবস্থায় ‘সবুজ তৃণমূল’ তাঁদের সমস্যায় ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা দলীয় নেতাদের একাংশের। প্রদীপবাবুর অবশ্য বক্তব্য, “যাঁরা সবুজ তৃণমূল নাম নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছেন, তাঁরা কখনওই আমাদের দলে ছিলেন না। পুরো ঘটনাটি সিপিএমের ষড়যন্ত্র। সিপিএমকে জেতানোর জন্যই সবুজ তৃণমূলের উৎপত্তি।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ রায়ের কটাক্ষ, “এটা পাগলের প্রলাপ! গোটা রাজ্যেই তৃণমূল দলটি একাধিক উপদল ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত। রঘুনাথপুরও তার ব্যতিক্রম নয়।” |