|
|
|
|
|
|
|
চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১... |
|
ফুটে ওঠে পুরুষের নারীসত্তায় রূপান্তরিত হওয়ার বাসনা |
গ্যাঞ্জেস আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলক প্রদর্শনী দেখে এলেন মৃণাল ঘোষ |
সমস্ত শিল্পশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক সব সময় যে শিল্পী হিসাবেও যথেষ্ট অভিঘাত সৃষ্টি করতে পারেন, তা নাও হতে পারে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যকলা অনুষদের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকরা সে দিক থেকে একটু ব্যতিক্রম বলা যেতে পারে। তাঁদের প্রায় সকলেই প্রতিষ্ঠিত শিল্পী হিসেবেও খ্যাতিসম্পন্ন। সম্প্রতি গ্যাঞ্জেস আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হল রবীন্দ্রভারতীর ১৮ জন শিক্ষক শিল্পীর ছবি ও ভাস্কর্য নিয়ে প্রদর্শনী।
আমাদের দেশে আধুনিক ও আধুনিকতাবাদী চিত্র-ভাস্কর্য নিয়ে এখনও নানা রকম চর্চা ও গবেষণা চলছে। পাশাপাশি ১৯৯০-এর দশকের পর থেকে বিশ্বায়ন ও উত্তর-আধুনিকতার দ্বান্দ্বিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় শিল্পচর্চায় অনেক নতুন ভাবনা ও আঙ্গিক বিকশিত হচ্ছে, যাকে বলা হয়ে থাকে ‘বিকল্প রূপকল্প’ বা ‘অলটারনেটিভ আর্ট’। এই প্রদর্শনীতে আধুনিকতাবাদী কাজের সংখ্যাই বেশি। তবে বিকল্প রূপকল্প নিয়েও কয়েক জন শিল্পী খুবই চিন্তাদীপ্ত কাজ করেছেন।
সুজয় মুখোপাধ্যায়ের ডিজিটাল প্রিন্টটি যথেষ্ট বিতর্ক উদ্রেক করার মতো। এর শিরোনাম ‘বিলেত ফেরত’। হারবার্ট ল্যাং-এর ‘ইন অ্যাবসেনসিয়া’ (১৯০৯) বই থেকে নেওয়া একটি ছবি এটি। ছবিতে শায়িত এক নগ্ন যুবককে দেখা যাচ্ছে। যুবতীর মতো উদ্ধত তার স্তন। তাঁর ডান হাতটি স্তনের উপর স্থাপিত। ছবির সঙ্গে উপস্থাপিত একটি লেখা থেকে আমরা বলতে পারি ছবিটির মূল উপজীব্য ইউরোপীয় ক্ষমতায়ন এবং বিশ্ব জুড়ে কালোর উপর সাদার আধিপত্য। সঙ্গে একটি কবিতা আছে। শুধু এটুকুই নয়। পুরুষের নারীসত্তায় রূপান্তরিত হওয়ার ভাবনাও হয়তো ছবিটির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু এর মূল ভাবনা বা কনসেপ্ট খুব পরিষ্কার নয়। |
|
শিল্পী: সুজয় মুখোপাধ্যায় |
দেবাশিস ভট্টাচার্যের মিশ্রমাধ্যমের অনামা ভাস্কর্যটি এই প্রদর্শনীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ। একটি নারীর মুখ একটি বাক্সের ভিতর ঢোকানো। শুধু কপালের অংশবিশেষ বেরিয়ে আছে। মাথার চুল দু’পাশে ছড়ানো। মাথার উপর স্থাপিত রয়েছে একটি লাউ। বাস্তবতা ও কল্পরূপের অসামান্য সমন্বয়।
বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পলা সেনগুপ্ত অনেক দিন থেকে কাজ করছেন। এই প্রদর্শনীতে তাঁর একটি কাজ রয়েছে উড ব্লক প্রিন্টের উপর সেরিগ্রাফি, এমব্রয়ডারি ও অ্যাপ্লিক মাধ্যমে করা। বিকল্প রূপকল্প নিয়ে অদীপ দত্তের কাজ যথেষ্ট অভিঘাত সৃষ্টি করেছে। এ বারের অনামা ব্রোঞ্জ-ভাস্কর্যটি তারই একটি দৃষ্টান্ত। দোলনচাঁপা গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ট্রেজার’ ছবিটি জলরং, পেনসিল ও চায়ের লিকার ব্যবহার করে আঁকা। খানিকটা স্টিললাইফ ধরনের কাজ। খুবই নিপুণ ভাবে তিনি এঁকেছেন পুরোনো দিনের গ্রামীণ জীবনে ব্যবহৃত কয়েকটি জিনিসের প্রতিমাকল্প। যেমন হাতপাখা, জাঁতি, চাবি এবং চিত্রিত একটি বাক্স। সুব্রত বিশ্বাসের ব্রোঞ্জ, ‘কালী’তে আধুনিকতাবাদী আঙ্গিকের ভিতর উত্তর-আধুনিক ভাবনার কিছু অনুষঙ্গ বিচ্ছুরিত হয়েছে।
সন্দীপ চক্রবর্তীর ‘দ্য পোয়েট’ শীর্ষক ব্রোঞ্জ কল্পরূপাত্মক অভিব্যক্তিবাদী ভাস্কর্যের দৃষ্টান্ত। পরাগ রায়ের অ্যাক্রিলিকের ক্যানভাস ‘কিস কা কিসা’ খুবই বলিষ্ঠ অভিব্যক্তিবাদী রচনা। এর মূল ভাবনা যৌনতার বিকৃতি। মানুষ পশুতে রূপান্তরিত। অথবা পশু মানুষে। নিখিলরঞ্জন পালের অস্বচ্ছ জলরঙের একটি ছবির শিরোনাম ‘...অ্যান্ড শি ড্রিমস অফ’। চেয়ারে বসে আছে একটি কালো মেয়ে। স্বাভাবিকতার ভিতর সূক্ষ্ম অভিব্যক্তিবাদী দ্যোতনা। পরিতোষ সেনের ‘ইসাবেল’ সিরিজের কথা মনে আসে। অতনু বসু মিশ্র মাধ্যমে বিমূর্তায়িত নিসর্গ এঁকেছেন।
অনিন্দ্য পণ্ডিতের চারকোল, প্যাস্টেল, গ্রাফাইটে আঁকা ছবিগুলির শিরোনাম ‘সেলিব্রেটিং বার্থ ডে’। প্রান্তিক জীবনের বিপন্নতা তাঁর ছবির বিষয়। যেখানে জন্মদিনের কোনও উদযাপন নেই। তাঁর বলিষ্ঠ ড্রয়িং-এ বাস্তবতার ভিতর অন্তর্মুখিনতার অনুপ্রবেশ ঘটে। জয়ন্ত নস্করের এচিং ও উডকাটে করা ‘চেঞ্জ অ্যাহেড’-ও খুবই বলিষ্ঠ রচনা। কয়েক জন যুবক দাঁড়িয়ে আছে। তাঁদের মুখের ঊর্ধ্বাংশ মুছে গেছে। এটুকু বিকৃতি রূপায়ণকে স্বতন্ত্র সৌষ্ঠব দিয়েছে। সোহিনী ধর ‘ভিসুয়াল ভয়েজ’ শীর্ষক নিসর্গভিত্তিক মিশ্রমাধ্যমের রচনায় আধুনিকতাবাদী উপস্থাপনার ভিতর বিকল্প রূপকল্পেরও কিছু সূক্ষ্ম অনুষঙ্গ আনেন। শ্রেয়সী চট্টোপাধ্যায় জলরং মাধ্যমের একটি ছোট নিসর্গচিত্র মাত্র দিয়েছেন এই প্রদর্শনীতে। এ ছাড়াও প্রদর্শনীতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন সুরজিৎ চন্দ, রজত সেন, কৃষ্ণা বিশ্বাস ও আদিত্যপ্রসাদ মিত্র প্রমুখ। |
|
|
|
|
|