এ বার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ, বিএসসি, বিকম পার্ট থ্রি-র ফলে ছাত্রদের টপকে গিয়েছেন ছাত্রীরা। পাশের হার এবং প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণের হার সব ক্ষেত্রেই ছাত্রদের বেশ খানিকটা পিছনে ফেলে দিয়েছেন তাঁরা। বাণিজ্য শাখায় পাশের হারে ছাত্র ও ছাত্রীরা প্রায় পাশাপাশি থাকলেও প্রথম শ্রেণি পাওয়ার দৌড়ে ছাত্রীরা অনেকটাই এগিয়ে।
দিল্লি বোর্ডের পরীক্ষাগুলিতে তো ছাত্রদের থেকে ছাত্রীদের ফল ভাল হয়ই। এমনকী রাজ্যের মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকেও কয়েক বছর ধরে ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছেন মেয়েরা। অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রদের পিছনেও ফেলে দিচ্ছেন তাঁরা। এ বার স্নাতক পরীক্ষাতেও মেয়েদের জয়জয়কার।
কী ভাবে এটা সম্ভব হল?
বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের মতে, পঠনপাঠনের প্রতি ছাত্রদের থেকে ছাত্রীরা বেশি মনোযোগী। এবং সেটাই এই ধরনের ফলের অন্যতম কারণ। তা ছাড়া সাধারণ ডিগ্রি পাঠ্যক্রমে পড়তে আসার আগ্রহ ছেলেদের থেকে মেয়েদের বেশি। তাই এই সব পরীক্ষায় ছাত্রীর সংখ্যাও বেশি। সেই জন্যও ছাত্রীদের ফল ছাত্রদের থেকে ভাল হয়েছে।
শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ, বিএসসি এবং বিকম পার্ট থ্রি অনার্স আর বিএ, বিএসসি পার্ট থ্রি মেজর পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে। বিএ-তে অনার্স-সহ ছাত্রীদের পাশের হার ৮৩.৭৪ শতাংশ, ছাত্রদের ৭৬.৯১ শতাংশ। বিএসসি-তে ছাত্রী এবং ছাত্রদের পাশের হার যথাক্রমে ৮৭.৫০ এবং ৭৯.২৪ শতাংশ। বিকমে অবশ্য ছাত্র ও ছাত্রীদের পাশের হার মোটামুটি এক। বিকমে অনার্স-সহ ছাত্রীদের পাশের হার ৭৯.৪৭ শতাংশ, ছাত্রদের ৭৯.৯০।
শুধু পাশের হারে নয়, প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণের (অনার্সে মোট ৬০ শতাংশ নম্বর) বিচারেও ছেলেদের থেকে মেয়েরা এগিয়ে বলে কর্তৃপক্ষ জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিএ-তে ৩.১ শতাংশ ছাত্রী এবং ১.৯৮ শতাংশ ছাত্র প্রথম শ্রেণিতে পাশ করেছেন। বিএসসি-তে ছাত্রী এবং ছাত্রদের এই হার যথাক্রমে ৩৪.৬৬ শতাংশ এবং ৩৩.৫৪ শতাংশ। বিকমে ২২.৯ শতাংশ ছাত্রী এবং ১১.৭৩ শতাংশ ছাত্র প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। বাণিজ্য শাখায় পাশের হারে ছাত্র ও ছাত্রীরা প্রায় সমান-সমান হলেও প্রথম শ্রেণি পাওয়ার ক্ষেত্রে ছাত্রদের অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছেন ছাত্রীরা। এ দিক থেকে দেখলে কলা বা বিজ্ঞানের তুলনাতেও বাণিজ্য শাখার ছাত্রীরা বেশি কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় অবশ্য জানান, সামগ্রিক ভাবে বিএ এবং বিএসসি-তে প্রথম শ্রেণিতে পাশের সংখ্যা বাড়লেও বিকমে তা গত বারের থেকে কিছুটা কমেছে। বিকমের নতুন পাঠ্যক্রমে এ বছরই প্রথম পরীক্ষা হল। সেটা প্রথম শ্রেণির সংখ্যা কমার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ।
সহ-উপাচার্য এ দিন বলেন, “ছাত্রীদের ফল এ বার লক্ষণীয় ভাবে ভাল হয়েছে। সংখ্যা বিচার করলে মনে হয়, ডিগ্রি পাঠ্যক্রম পড়ার আগ্রহ ছাত্রদের থেকে ছাত্রীদের বেশি। তাই ছাত্রীদের ফলও ভাল। বিএসসি-তে ছাত্রদের থেকে ছাত্রীর সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। সেখানেও ছাত্রদের পিছনে ফেলে দিয়েছে ছাত্রীরা।”
এ বছর প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণের সংখ্যা সব থেকে বেশি রসায়নে আর সব থেকে কম ইংরেজিতে। রসায়নে ৩৭৮ জন এবং ইংরেজিতে ছ’জন ছাত্রছাত্রী প্রথম শ্রেণি পেয়েছেন। ইংরেজিতে প্রথম শ্রেণির সংখ্যা এত কম হল কেন, সেই বিষয়ে ওই বিভাগের বোর্ড অফ স্টাডিজে আলোচনা হবে বলে জানান সহ-উপাচার্য। সেই সঙ্গেই তিনি জানান, পুনর্মূল্যায়ন এবং তথ্যের অধিকার আইনে খাতা দেখার জন্য ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে কলেজের কাছে আবেদন জানাতে হবে পরীক্ষার্থীদের। কলেজ-কর্তৃপক্ষকে সেই সব আবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জমা দিতে হবে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা অবস্থায় প্রেসিডেন্সি কলেজে শেষ ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীরা এ বারেই স্নাতক হলেন। প্রেসিডেন্সি সূত্রের খবর, পরীক্ষা দিয়েছিলেন মোট ৪৮৪ জন। পাশের হার ৯৩.৭১ শতাংশ। প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণের সংখ্যা ২০৯। ওখানেও প্রথম শ্রেণি পাওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা সব থেকে বেশি রসায়নে ২৯। সব থেকে কম ইংরেজিতে এক। এর পর থেকে ওখানকার পড়ুয়াদের স্নাতক ডিগ্রিও দেবে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। |