পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদীদের সাংগঠনিক কাজ দেখভাল করবে দলের ঝাড়খণ্ড ইউনিট। সিপিআই (মাওবাদী)-র কেন্দ্রীয় কমিটি সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
মাওবাদীদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের নেতৃত্ব পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে কয়েক মাস ধরেই দলে আলোচনা চলছিল। বিষয়টি নিয়ে নানা মত ছিল দলে। এ রাজ্যের সংগঠনের ভার ঝাড়খণ্ডের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের মধ্যেই আপত্তি ছিল। কিন্তু সব দিক খতিয়ে দেখে সে আপত্তি খারিজ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে তাই ঝাড়খণ্ড ইউনিটের হাতেই এ রাজ্যের সংগঠনের দায়ভার তুলে দেওয়া হল।
মাওবাদী সূত্রের কথায়, কিষেণজির মৃত্যুর পর এ রাজ্যে তাদের কাজকর্ম অনেকটাই সঙ্কুচিত হয়ে আসে। তার উপর, ঝাড়গ্রামে বাবু ঘোষের মতো জনপ্রিয় ঝাড়খণ্ডি নেতা মাওবাদীদের হাতে খুন হওয়ায় জনমানসে ভুল বার্তা পৌঁছয়। এর পরেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কঠিন সমালোচনার মুখে পড়ে এ রাজ্যে দলের মাথারা। এক সমীক্ষায় রাজ্য নেতাদের কড়া সমালোচনা করে কেন্দ্রীয় কমিটি বলে, কিষেণজির মৃত্যুর পরে সংগঠনের কাজকর্ম বিপথে চালিত হচ্ছে। তার পরেই পশ্চিমবঙ্গে কাজকর্ম নিয়ে ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করে কেন্দ্রীয় কমিটি।
সংগঠনকে মজবুত করতে একেবারে নিচু স্তরের কর্মীদের প্রশিক্ষণেরও পরিকল্পনা হয়। কিন্তু সেখানেই বিপত্তি দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রশিক্ষণে যাওয়া সুরেশ এবং বাপ্পা নামে হুগলির দুই তরুণ ঝাড়খণ্ডের সিংভূমে ধরা পড়েন। এ রাজ্য থেকে তাঁদের আইনি সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে কোনও কার্যকরী ভূমিকা নেওয়া হয়নি। তার ফলে দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা সে রাজ্যের জেলেই বন্দি। পরিস্থিতি এমনই, সংগঠনের নির্দেশ এবং পত্রপত্রিকা ছেপে বিলি করার কাজও এখন বন্ধ। কোনও কোনও ক্ষেত্রে নির্দেশ হাতে লিখে ফটোকপি করে কাজ চালানো হচ্ছে।
আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত বলেন, “ঝাড়খণ্ডে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ রাজ্যেও মাওবাদী মোকাবিলায় নির্দিষ্ট কিছু গাইড লাইন ঠিক করা হয়েছে। তবে পুলিশের কাজের পরিধি কী হবে, নিরাপত্তার স্বার্থেই তা সংবাদমাধ্যমকে জানানো যাবে না। বীরভূম-সহ জঙ্গলমহলের প্রতিটি জেলায় রেড-অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। বীরভূমে দুই কোম্পানি সিআরপিএফ কাজ করছে। আরও বাহিনী পেলে সেখানে তা পাঠানোর ব্যাপারেও আমাদের চিন্তাভাবনা রয়েছে।”
মাওবাদীদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কাঠিকুণ্ডে নিশানা করা পুলিশের কনভয় ছোট হওয়ায় রীতিমতো হতাশ ওই এলাকায় কাজ করা স্কোয়াড কর্মীরা। তাদের ধারণা ছিল, সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসায় পুলিশের একটি বড় বাহিনীই সেখান দিয়ে ফিরবে। তাই লড়াইয়ের জন্য অনেক বেশি সদস্য মোতায়েন রাখা হয়েছিল। দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের রসদও মজুত ছিল। মাওবাদীরা ভেবেছিল, কনভয়ে বেশি পুলিশ থাকলে অনেক বেশি অস্ত্র লুঠ করা যাবে। কিন্তু তা হয়নি। |