পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ ঝাড়গ্রামে
যন্ত্রে চার্জ নেই, বিস্ফোরক আনা হল থানাতেই
ঝিটকা থেকে শিক্ষা নেয়নি ঝাড়গ্রাম। দামী যন্ত্র, নিয়মিত প্রশিক্ষণ সত্ত্বেও বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করার কাজে আবারও অপেশাদারিত্ব ও চরম অসতর্কতা দেখালেন পুলিশকর্মীরা। বুধবার ঝাড়গ্রামের গামারিয়া গ্রামে যে ভাবে মাটিতে পোঁতা বারুদ ভর্তি পাত্র উদ্ধার করা হল তাতে পুলিশকর্মীদের জীবনের ঝুঁকি তো ছিলই, প্রাণ বিপন্ন হয়েছিল আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদেরও।
সকাল ন’টা। বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পেয়ে ঝাড়গ্রাম শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে গামারিয়া গ্রামে তল্লাশিতে গেল ঝাড়গ্রাম পুলিশ। আঁতিপাঁতি করে খুঁজে জঙ্গল লাগোয়া মোরাম রাস্তার ধারে পাওয়া গেল মাটিতে পোঁতা একটি প্লাস্টিকের ড্রাম। অনুমান ছিল, ওতে বিস্ফোরক আছে। তবে ঠিক কী আছে, তা জানতে বেলা ১২টা নাগাদ ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার ডিআইবি’র কর্মীরা বিস্ফোরক পরীক্ষার অত্যাধুনিক যন্ত্র ‘ভিডিস্কো’ নিয়ে আসেন। কিন্তু মেশিনটি চালু করতে গিয়ে বিপত্তি। দেখা যায়, মেশিনে চার্জ দেওয়া নেই। ক্ষোভে ফেটে পড়েন ঘটনাস্থলে উপস্থিত এসডিপিও (ঝাড়গ্রাম) সন্তোষকুমার মণ্ডল। ডিআইবি’র এক কর্মী আমতা আমতা করে বলেন, “স্যার, রাতে চার্জ দিতে ভুলে গিয়েছিলাম।”
তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিস্ফোরক ভর্তি ড্রাম।
এসডিপিও সন্তোষবাবু ও ঝাড়গ্রাম থানার আইসি জ্ঞানদেওপ্রসাদ শাহের তখন অসহায় অবস্থা। কয়েক জন পুলিশকর্মীকে বিরক্ত হয়ে বলতে শোনা যায়, “এঁরা কি ছেলেখেলা করতে এসেছে!” এসডিপিও এবং আইসি ডিআইবি কর্মীদের তাগাদা দিতে থাকেন, “কী হল, পরীক্ষা করতে পারবেন? নাকি কিছুই পারবেন না?” ডিআইবি’র কর্মীরা জানান, চার্জ না দিলে মেশিন কাজ করবে না। উপায় না দেখে বিরক্ত মুখেই পুলিশকর্মীরা ড্রামটি গাড়ির পিছনে তোলেন।
আতঙ্কে প্রথমে পুলিশকর্মীরা গাড়িতে উঠতে চাননি। ছিলেন শুধু চালক সন্তোষ পাল। তিনি ‘জয় মা তারা’ বলে গাড়ি স্টার্ট করেন। পরে অবশ্য কয়েকজন পুলিশকর্মী গাড়িতে ওঠেন। লোকালয়ের মধ্যে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে ড্রামটি নিয়ে আসা হয় ঝাড়গ্রাম থানায়। সেখানেই ভিডিস্কো মেশিনে চার্জ দিয়ে ড্রামটি পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, ড্রামের ভিতরে রয়েছে ঠাসা বারুদ ও তার। বিকেলে ঝাড়গ্রামের দুবরাজপুরে একটি ফাঁকা মাঠে ড্রামটি নিয়ে যাওয়া হয়। মেদিনীপুর থেকে সিআইডি’র বম্ব ডিসপোজ্যাল স্কোয়াডের সদস্যরা এসে বিস্ফোরক ‘নিষ্ক্রিয়’ করেন। পুলিশের অনুমান, পঞ্চায়েত ভোটের আগে নাশকতার উদ্দেশ্যে মাওবাদীরাই ওই বিস্ফোরক মজুত করেছিল। তবে ড্রামটি মাইন নয়, বিস্ফোরক মজুত রাখার পাত্র বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞ পুলিশ কর্তারা।
যথেষ্ট সাবধানতা না নিয়ে বিস্ফোরক নাড়াচাড়া করতে গিয়ে কী ভয়ানক বিপদ হতে পারে, ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে লালগড়ের ঝিটকার জঙ্গলের বিস্ফোরণ সে কথা প্রমাণ করে দিয়েছিল। কোনও ধরনের বিশেষ পোশাক ছাড়া ছেনি-হাতুড়ি নিয়ে ক্যান-মাইন নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে ঘটেছিল বিস্ফোরণ। মারা গিয়েছিলেন বম্ব স্কোয়াডের দু’জন। সংবাদমাধ্যমের ৭ জন সমেত জখম হয়েছিলেন ১৯ জন। ওই ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছিলেন আনন্দবাজারের চিত্র সাংবাদিক সৌমেশ্বর মণ্ডল। বছর দুয়েক আগে বীরভূমের নানুরেও বোমা নিষ্ক্রিয় করার সময় মারা যান জেলা গোয়েন্দা দফতরের এক কর্মী। একের পর এক ঘটনার পরেও যে পুলিশকর্মীদের একাংশ শিক্ষা নেননি, ঝাড়গ্রামের ঘটনাই তার প্রমাণ। এ দিনও জওয়ানদের খালি হাতেই বিস্ফোরক ভর্তি ড্রাম মাটি খুঁড়ে তুলতে দেখা যায়। তারপর প্রায় ১২ কিলোমিটার পথ গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে আসা হয় ওই ড্রাম। পুলিশেরই একাংশ মনে করছে, যদি ড্রামটি মাইন হত তাহলে চূড়ান্ত বিপদ হতে পারত। তবে এ নিয়ে কেউই প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি। বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি ঝাড়গ্রাম পুলিশ-জেলার সুপার ভারতী ঘোষের সঙ্গে। তাঁর মোবাইল বেজে গিয়েছে।
চার্জ ছাড়াই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ভিডিস্কো যন্ত্র।
বিস্ফোরক পরীক্ষার অত্যাধুনিক যন্ত্র ভিডিস্কো নিয়ে আগেও বিপত্তি হয়েছে। গত ২০ এপ্রিল বিনপুরের কুশবনির জঙ্গলে উদ্ধার হওয়া মাইন পরীক্ষা করার সময়ও এই মেশিনে চার্জ ছিল না। জানা গিয়েছে, মাস দু’য়েক আগে কয়েক লক্ষ টাকা দামের যন্ত্রটি ঝাড়গ্রাম পুলিশের কাছে আসে। এই যন্ত্র দিয়ে কোনও পাত্রের ভিতর কী রয়েছে, তা দেখা যায়। কিন্তু প্রয়োজনের সময়ই যদি মেশিন না চলে, তাহলে লাভ কী? প্রশ্ন কিন্তু উঠে গিয়েছে।

ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.