কুবের উবাচ |
সোমলতা রায় (৩১) • ভিন্ রাজ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক • বছর শেষে বিয়ের পরিকল্পনা • পরিবারের বাকি পাঁচ জন কলকাতায়
• বাবার উপার্জন নেই • মায়ের আয় সামান্য • ভাই-বোনের কেউই এখনও পুরো স্বাবলম্বী নন • সঞ্চয় নিয়ে নিজের
ধারণা একেবারেই স্পষ্ট নয় • স্বাস্থ্য বিমা নিয়ে জানতে আগ্রহী • লক্ষ্য সুরক্ষিত ভবিষ্যত্ |
|
|
মাসে নিট আয় |
সোমলতা ৩৯,৪৪৮ |
|
টাকা রাখেন (মাসে) |
• পিএফ |
৩,৮২৭ |
খরচ (মাসে) |
• নিজের জন্য |
৭,০০০ |
• বাড়িতে পাঠান |
১০,০০০ |
• ভাই-বোনদের দেন |
৫,০০০ |
|
|
|
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
শৈবাল বিশ্বাস |
|
আজকের লেখা শুরু করব সেই সব মহিলাকে কুর্নিশ করে, যাঁরা জীবনের সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়েও নিজের এবং সংসারের ভার কাঁধে নিয়ে চলেন। সোমলতাও সে রকমই এক জন। শুধু মাত্র বাবা-মাকে সাহায্য করে সংসার চালানোই নয়, ভাই-বোনদের পড়াশোনায় উত্সাহ দিয়ে জীবনে দাঁড় করানোর লক্ষ্যও নিয়েছেন তিনি। যার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। সোমলতা যথেষ্ট হিসেবি। অন্য রাজ্যে থাকার কারণে তাঁকে বাড়ি ভাড়া-সহ বিভিন্ন খরচ মেটাতে হয়। সে দিক থেকে দেখতে গেলে মাসে ৭,০০০ টাকা ব্যয় করাকে হিসেবি না বলে পারছি না। মাথায় রাখতে হবে মূল্যবৃদ্ধির কথাও। সব মিলিয়ে যদি দেখি, তা হলে বোঝা যাচ্ছে নিজের খরচ চালানো ও বাড়িতে টাকা পাঠানোর পরও তাঁর হাতে ১৭,০০০ টাকা থাকছে সঞ্চয় করার জন্য। এত দিন সেই টাকা সেভিংস অ্যাকাউন্টেই পড়ে থেকেছে। এখন প্রয়োজন নির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক সেই টাকা সুরক্ষিত প্রকল্পে লগ্নি করা। আমরা সে ভাবেই তাঁকে পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করব। |
জীবনের সুরক্ষা |
সোমলতা আপাতত পরিবারের মূল উপার্জনকারী। তাই তাঁর নিজের জন্য অবশ্যই টার্ম পলিসি করে রাখা উচিত। যাতে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে পরিবারকে অসুবিধার মধ্যে পড়তে না-হয়। সোমলতা মাসে নিজের পরিবারকে সব মিলিয়ে ১৫ হাজার টাকা দেন। বছরে ১.৮০ লক্ষ টাকা। এই টাকাই যদি ৮% সুদে কম ঝঁুকির কোনও প্রকল্পে রেখে পেতে হয়, তা হলে মোট বিনিয়োগের অঙ্ক হতে হবে ২২.৫০ লক্ষ টাকা। এটাই তাঁর বিমার অঙ্কও। এই হিসাব একটা চার্টে ফেলে দেখব।***
তার আগে বলে রাখি, আমি মূল টার্ম পলিসির সঙ্গে দু’টি রাইডার ধরেছি। দুর্ঘটনায় মৃত্যু বিমার ক্ষেত্রে বিমা মূল্যের দ্বিগুণ টাকা ফেরত পাওয়া যায়। আর অন্যটির ক্ষেত্রে কোনও রোগের কারণে কাজ করতে অক্ষম হলে বিমা মেলে। তবে মনে রাখবেন, সাধারণত টার্ম পলিসিতে কিন্তু মেয়াদ শেষে টাকা ফেরত পাওয়া যায় না। শুধুমাত্র জীবনের সুরক্ষা মেলে। তবে তুলনামূলক ভাবে অনেক কম প্রিমিয়াম দিয়ে বেশি টাকার বিমা পাওয়া যায়। |
লগ্নির পথে পা |
জীবনের সুরক্ষার বিষয়টি পাকা হলে এ বার আলোচনা করা যাক সোমলতার লগ্নি নিয়ে। সঞ্চয় সম্পর্কে তাঁর কোনও ধারণা নেই, তা তিনি নিজেই চিঠিতে জানিয়েছেন। যে কারণে কোন প্রকল্পটি তাঁর জন্য উপযুক্ত তা ঠিক করে উঠতে পারেননি। তাই লগ্নিও করা হয়নি। আসুন তাঁকে আমরা কোনও পথ দেখাতে পারে কি না, তাই একটু ভেবে দেখি। চেষ্টা করব যাতে বিভিন্ন খাতে তাঁর লগ্নি ছড়িয়ে দেওয়া যায়। তা হলে এক দিকে চাইলে টাকা তুলে নিতে পারবেন, আবার দীর্ঘ মেয়াদে লগ্নির পথও খোলা থাকবে।
১) ব্যাঙ্কে ৩,০০০ টাকার রেকারিং ডিপোজিট শুরু করুন। ডাকঘরেও করতে পারেন। তবে সেখানে এক লপ্তে পাঁচ বছরের জন্য লগ্নি করতে হবে। তাই বিয়ের কথা মাথায় রেখে বলব ব্যাঙ্কই সোমলতার জন্য উপযুক্ত। যাতে নগদের জোগান বজায় থাকবে।
২) দীর্ঘ মেয়াদে সম্পদ গড়ে তোলার জন্য কোনও লার্জ ক্যাপ ডাইভার্সিফায়েড মিউচুয়াল ফান্ডে মাসে ৩,০০০ টাকা করে রাখুন।
৩) ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট (এনএসসি)-এ প্রতি মাসে ৩,০০০ টাকা হিসাবে বছরে ৩৬,০০০ টাকা লগ্নি করুন।
৪) পিপিএফ এমনই একটি প্রকল্প, যেখানে লগ্নির টাকা এবং মেয়াদ শেষে ফেরত পাওয়া টাকা উভয়ই করমুক্ত। তাই পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতি মাসে ন্যূনতম ৩,০০০ টাকা রাখুন। |
স্বাস্থ্য বিমার খোঁজখবর |
সোমলতা নিজের এবং বাবা-মার চিকিত্সা বিমা নিয়ে জানতে চেয়েছেন। তাঁর বাবা-মার যা বয়স, তাতে ৩ লক্ষ টাকার ফ্যামিলি ফ্লোটার বিমা নিলে বছরে প্রিমিয়াম পড়বে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। তাঁর হাতে যা টাকা রয়েছে, তা বিচার করলে অবশ্য এই বিমা নিতে পারেন তিনি। আবার চাইলে নিজের জন্য আলাদা স্বাস্থ্য বিমার ব্যবস্থা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম পড়বে ৫-৬ হাজার টাকা। বাকি টাকা প্রতি মাসে মা-বাবার চিকিত্সার জন্য রেকারিং ডিপোজিটে রাখতে পারেন। তবে দেখতে হবে এ ভাবে তিনি কতটা সঞ্চয় করতে পারছেন। যদি চিকিত্সা খরচের জন্য পর্যাপ্ত টাকা জমাতে পারেন, তা হলে কিছুটা হলেও চিন্তামুক্ত হতে পারবেন। কোনটা বেছে নেবেন, তা সোমলতাকেই ঠিক করতে হবে। তবে এই টাকা যেন বাবা-মার চিকিত্সা ছাড়া অন্য খাতে খরচ না-হয়।
|
এরিয়ারের লগ্নি |
সোমলতার চিঠি থেকে জানা গেল, এরিয়ারের টাকা কোথায় লগ্নি করবেন সে বিষয়ে চিন্তা রয়েছে। বিয়ে হওয়ার আগে পর্যন্ত এরিয়ারের টাকা কোনও দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্পে লগ্নি না-করাই ভাল। সে ক্ষেত্রে বরং সেই টাকা স্বল্প মেয়াদে স্থায়ী আমানতে রাখুন। যাতে তা বিয়ের প্রয়োজনে তুলে নিতে পারেন। এখনও তাঁর ২৯ বছর চাকরি আছে। সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে এরিয়ারের টাকা দীর্ঘ মেয়াদে লগ্নির কথা ভাবুন।
১) চাইলে দীর্ঘ মেয়াদে স্থায়ী আমানত করে রাখতে পারেন। এতে করছাড় পাবেন।
২) অথবা কোনও ঋণপত্র নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ডে সেই টাকা রাখুন।
৩) ভাবতে পারেন শেয়ার বাজারের কথাও। প্রথমবার বাজারে পা রাখার সময়ে ইনডেক্স ফান্ডের কথা ভেবে দেখুন। এতে সরাসরি শেয়ার বাজারে লগ্নি না-করেও, আপনি সংস্থার শেয়ারে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন।
|
বিয়ের সঞ্চয় |
চলতি বছরের শেষেই বিয়ের পরিকল্পনা রয়েছে সোমলতার। সেই খরচের কিছুটা তিনি কী ভাবে জোগাড় করতে পারেন, তাই এ বার বলব।
১) প্রথমেই যে-স্বল্প মেয়াদি রেকারিং ডিপোজিটের কথা বললাম, এখানে সেই টাকা কাজে আসবে।
২) এখনই যে-এরিয়ার পাবেন, তা-ও বিয়েতে খরচ করা যাবে।
৩) যে অর্থ সেভিংস অ্যাকাউন্টে পড়ে রয়েছে তার মধ্যে ২৫ হাজার টাকা অ্যাকাউন্টে রেখে বাকিটা কম সময়ের জন্য স্থায়ী আমানতে রাখুন। যা বিয়েতে খরচ করতে পারবেন। |
আয়করে সুবিধা |
এ বার দেখি আয়করের ৮০সি ধারায় তিনি কত টাকা ছাড় পাচ্ছেন— |
প্রকল্প |
সঞ্চয় (টাকায়) |
পিএফ
বিমা
পিপিএফ
এনএসসি |
৪৫,৯২৪
৮,১২৯
৩৬,০০০
৩৬,০০০ |
মোট |
১,২৬,০৪৮ |
|
অর্থাত্ করছাড়ের পুরো সুবিধা পাচ্ছেন তিনি। এর পরও ৮০ডি ধারায় স্বাস্থ্য বিমার উপরও কর ছাড় পাবেন।
বিয়ের পরেও সংসারে টাকা দিতে চান বলে জানিয়েছেন সোমলতা। এই দৃষ্টিভঙ্গীর প্রশংসা না-করে পারছি না। তবে বিয়ের পর দায়িত্ব বাড়বে। তাই বেতন বাড়লে লগ্নিও বাড়াতে হবে। তার পর নিজের অন্যান্য লক্ষ্যপূরণে সেই অর্থ খরচ করতে পারবেন। আশা করি এই পরামর্শ তাঁকে কিছুটা হলেও সঞ্চয় পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে।
|
বিমার পরামর্শ*** |
|
প্রকল্প |
বিমা মূল্য |
বিমা ও প্রিমিয়ামের
মেয়াদ |
প্রিমিয়াম
(আনুমানিক) |
পরিষেবা কর |
মোট |
মূল টার্ম পলিসি
দুর্ঘটনায় মৃত্যু বিমা*
মারণ রোগের বিমা* |
২২.৫০ লক্ষ
২২.৫০ লক্ষ
২ লক্ষ |
২৫ বছর
২৫ বছর
২৫ বছর |
৪,৯৯৫
১,৩৫০
৮৯০ |
৬১৭
১৬৭
১১০ |
৫,৬১২
১,৫১৭
১,০০০ |
* বিশেষ সুবিধা (রাইডার) |
মোট |
৮,১২৯ |
|
(প্রেরকের অনুরোধে নাম ও পদবী পরিবর্তিত) |
|