|
|
|
|
|
|
|
উইলের প্যাঁচপয়জার
ধন্যবাদ! আপনাদের অজস্র চিঠির জন্য। গত ৬ জুনের বিষয়-আশয়ে উইল নিয়ে
প্রতিবেদন
প্রকাশের পর
চিঠির বাক্স উপচে পড়েছে আমাদের দফতরে। জিজ্ঞাসায় ভরে
গিয়েছে ‘ইনবক্স’।
সম্পত্তি দেওয়ার
বিষয়ে
আরও অনেক খুঁটিনাটি জানতে চেয়েছেন
আপনারা।
সেই সব
আইনি গোলকধাঁধার
সমাধান এ বার আইনজীবীর
কলমে।
লিখছেন জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় |
|
উইল মানে ইচ্ছাপত্র। কষ্টের বাড়ি, সারা জীবনের সঞ্চয় থেকে শুরু করে গয়নাগাঁটি সব কিছু আইন মেনে কারও নামে লিখে দিয়ে যাওয়ার নামই উইল। গত বার এই নিয়ে লেখায় আদপে উইল জিনিসটা কী, কেন করবেন, কী কী দেওয়া যায়, করার যোগ্যতা, রেজিস্ট্রির ভাল-মন্দ ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আমরা (বিশদে জানতে গত ৬ জুনের বিষয়-আশয় দেখতে পারেন। তা পাবেন www.anandabazar.com ওয়েবসাইটেও)। ওই লেখা বেরোনোর পর আপনাদের অজস্র জিজ্ঞাসা এসেছে চিঠি হয়ে। সেখানে দেখেছি, সম্পত্তি দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে আরও অনেক খুঁটিনাটি জানতে চেয়েছেন আপনারা। তাই এ বার সেই জিজ্ঞাসা থেকেই লেখার বিষয় বেছে নেওয়া। চেষ্টা করা, বাকি থেকে যাওয়া প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার। অনেকটা সিলেবাসের বাকিটুকু শেষ করে ফেলার মতো। |
|
দানপত্র
অনেকেই জানতে চেয়েছেন, দানপত্র কী? উইলের সঙ্গে এর ফারাকই বা কোথায়? আজকের আলোচনা না-হয় সেখান থেকেই শুরু করা যাক। সকলেই চান, তিনি চলে যাওয়ার পরে যেন সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সমস্যা না-হয়। যাকে যতটুকু দিতে চান, ততটুকুই যেন তার পাতে পড়ে। সে জন্যই তো উইল করা। কিন্তু কেউ আবার মনে করতে পারেন, এখনই উত্তরাধিকারীদের সম্পত্তি দিতে চাই আমি। মালিকানা বদলাক, ক্ষতি নেই। কিন্তু এ নিয়ে ঝামেলা থেকে রেহাই পেলেই আমি খুশি। তখন কিন্তু উপায় হল দানপত্র। যার পোশাকি নাম ‘ডিড অফ গিফ্ট’।
গোড়ার কথা
• দানও এক ধরনের সম্পত্তি হস্তান্তর (ট্রান্সফার)। তবে তা হতে হবে স্বতঃপ্রণোদিত। কারও চাপে পড়ে, শর্ত মেনে কিংবা প্ররোচনায় কিছু দেওয়া আর যা-ই হোক, দান নয়।
• যাঁকে দিচ্ছেন, তাঁর কাছ থেকে বিনিময়ে কিছু নেওয়ারও কথা নয়। সুতরাং, সে ভাবে দেখতে গেলে, বিনিময়ে কিছু না-নিয়ে সম্পত্তির যাবতীয় মালিকানা বা স্বত্ব অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার নামই দান।
• যিনি দান করছেন, তিনি দাতা (ডোনার)। আর যিনি তা গ্রহণ করছেন, তিনি গ্রহীতা (ডোনি)।
• স্থাবর এবং অস্থাবর দু’ধরনের সম্পত্তিই দানপত্র করা যায়। তবে স্থাবর সম্পত্তির (বাড়ি, জমি ইত্যাদি) জন্য তা রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক।
• শুধু নিজের সম্পত্তিই দান করা সম্ভব। অন্যেরটা নয়।
• দানপত্র করার সময়ে সম্পত্তির মালিককে মানসিক ভাবে সুস্থ, সজ্ঞান ও সচেতন থাকতে হবে। মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় দানপত্র করলে, তা গ্রহণযোগ্য নয়।
• রেজিস্ট্রি করার সময়ে স্ট্যাম্প ডিউটি এবং রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে অবশ্যই তৈরি থাকুন।
উইলের সঙ্গে ফারাক
• উইলের মতো এখানেও কাকে, কী, কতটা দিতে চান, তা স্পষ্ট করে লিখে দেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু ফারাক হল, উইল কার্যকর হয় উইলকারীর মৃত্যুর পরে। তিনি বেঁচে থাকতে নয়। কিন্তু দানপত্র করে দেওয়া মানে সেই মুহূর্ত থেকেই ওই সম্পত্তি আর নিজের নয়। যাঁর নামে দানপত্র করছেন তাঁর।
• উইল রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু স্থাবর সম্পত্তির দানপত্রে তা করতেই হবে।
করার পদ্ধতি
দানপত্র করা তেমন জটিল কাজ নয়। কিন্তু তার প্রতিটি ধাপে সতর্ক হয়ে পা ফেলা প্রয়োজন। যাতে ভুল না-হয়। ধাপগুলি মোটামুটি এ রকম
(১) যে-এলাকায় সম্পত্তি, তার জন্য নির্দিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিসে যান।
(২) জমি/ বাড়ি/ ফ্ল্যাটের মতো সম্পত্তির মাপ, ঠিকানা, দাগ নং, মৌজা ইত্যাদি দিয়ে সেটির বাজার মূল্য নির্ধারণ করুন।
(৩) জেনে নিন স্ট্যাম্প ডিউটির অঙ্ক। এটি নির্ভর করে মূলত দু’টি জিনিসের উপর
• সম্পত্তির বাজার মূল্য।
• কার নামে দানপত্র করা হচ্ছে। যেমন, বাবা-মা যদি ছেলের নামে করেন, তা হলে এক রকম স্ট্যাম্প ডিউটি। বিবাহিতা মেয়েকে দিলে আবার আলাদা।
(৪) স্থাবর সম্পত্তির দানপত্র রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। দিতে হবে রেজিস্ট্রেশন ফি। তার অঙ্ক নির্ভর করবে সম্পত্তির বাজার মূল্যের উপর।
(৫) রেজিস্ট্রি করার সময়ে দাতা ও গ্রহীতা, উভয়েরই ছবি লাগবে। আগে থেকেই তা সঙ্গে রাখুন।
হুঁশিয়ার!
এখানে একটা কথা মনে করিয়ে দেওয়া ভাল। উইল করে ফেলার পরেও আপনি যত বার খুশি তা বদলাতে পারেন। কারণ, তা কার্যকর হয় উইলকারীর মৃত্যুর পর। কিন্তু এক বার দানপত্র করার প্রক্রিয়া শেষ হওয়া মানেই কিন্তু সম্পত্তি হাতবদল হয়ে যাওয়া। তখন তার উপর দাতার আর কোনও অধিকার থাকে না। নিতান্ত প্রয়োজন হলে দানপত্র বদলাতে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া যায় ঠিকই। কিন্তু সেটা অত্যন্ত ঝক্কির কাজ। তাই আমার মতে, যথেষ্ট ভাবনা-চিন্তার পর তবেই দানপত্র করা ভাল। এক বার করে ফেললে, এ নিয়ে নতুন করে ভাবনার অবকাশ আর থাকবে না।
হয়তো আপনি ছেলে বা মেয়ের নামে দানপত্র করছেন। যদি এমন হয় যে, থাকার জন্য কিংবা আর্থিক দিক থেকে ওই সম্পত্তির উপর আপনি নির্ভরশীল নন, তা হলে ভাল কথা। কিন্তু যদি তা না-হয়, তা হলে দানপত্র করার আগে দশ বার ভাবুন। |
|
পারিবারিক বন্দোবস্ত দলিল
দানপত্র নিয়ে যেমন অনেকের জিজ্ঞাসা রয়েছে, তেমনই অনেকের প্রশ্ন আবার বন্দোবস্ত দলিলকে ঘিরে। আসুন, এ বার এ নিয়ে দু’চার কথা জেনে রাখি—
গোড়ার কথা
• পোশাকি নাম ডিড অফ সেট্লমেন্ট।
• সহজ করে বললে, এ হল পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারার বন্দোবস্ত। তাই বন্দোবস্ত দলিল বলেও এটি পরিচিত।
• এর মাধ্যমে বেঁচে থাকতেই সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা করে দেওয়া সম্ভব।
• অবশ্য শুধু সম্পত্তি ভাগ নয়। এর মাধ্যমে কোন সম্পত্তি কী ভাবে ব্যবহার করা হবে, তারও বিধি বেঁধে দেওয়া সম্ভব। যেমন, কারও হয়তো ফ্ল্যাট রয়েছে। তিনি চান, নিজের দুই ছেলের পাশাপাশি বিয়ের আগে পর্যন্ত ভাইয়ের মেয়েও সেখানে থাকুক। সে ক্ষেত্রে সেই অনুযায়ীই বন্দোবস্ত দলিল তৈরি করতে পারেন তিনি।
• সংসারে ঝগড়া-বিবাদ এড়াতে কিংবা কারও জন্য ‘ব্যবস্থা’ করে দিতে এর হাত ধরেন অনেকে।
• অনেকে বলেন, এই দলিল রেজিস্ট্রেশন না-করালেও চলে। কিন্তু আমার মতে, এই লিখিত নথি অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন করানো উচিত।
উইলের সঙ্গে ফারাক
• বন্দোবস্ত দলিলের মাধ্যমে বেঁচে থাকতেই সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়া যায়। দানপত্রের মতো। কিন্তু উইল কার্যকর হয় একমাত্র উইলকারী মারা যাওয়ার পরেই।
• উইল রেজিস্ট্রেশন না-করলেও চলে। বন্দোবস্ত দলিলে তা করা জরুরি।
• উইলকারী মারা যাওয়ার পর সেই সম্পত্তির দখল নিতে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। নিতে হয় প্রোবেট। যা কিছুটা সময়সাপেক্ষ। বন্দোবস্ত দলিলে কিন্তু সেই সমস্ত ঝক্কি নেই।
দানপত্রের সঙ্গে পার্থক্য
• বন্দোবস্ত দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়া যায় শুধু পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই। কিন্তু দানপত্র করে বাইরের কাউকেও তা দেওয়া সম্ভব।
করার পদ্ধতি
(১) বন্দোবস্ত দলিলকৃত সম্পত্তি যে-এলাকায় পড়ে, সেখানকার রেজিস্ট্রি অফিসে যান।
(২) সেখানে সম্পত্তির বাজার মূল্য নির্ধারণ করুন।
(৩) ক’জন উত্তরাধিকারীর মধ্যে বন্দোবস্ত করছেন এবং কী বিচারে করছেন, সেটা লিখিত ভাবে জানিয়ে স্ট্যাম্প ডিউটি নির্ধারণ করান।
(৪) শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণ স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে বন্দোবস্ত দলিল রেজিস্ট্রেশন করান।
সাকসেশন সার্টিফিকেট
• উত্তরাধিকারের শংসাপত্র। গত সংখ্যায় আমরা বলেছিলাম, একটি মাত্র সন্তান হলে হয়তো এমনিতেই সে সব সম্পত্তি পাবে। তাই সে ক্ষেত্রে আলাদা ভাবে উইল করা আর জরুরি নয়। কিন্তু সাকসেশন সার্টিফিকেট অবশ্যই জরুরি। যাতে নিশ্চিত হয় সে-ই ওই সম্পত্তির একমাত্র হকদার।
• যিনি বা যাঁরা মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী বলে নিজেদের দাবি করছেন, তাঁকে বা তাঁদের সাকসেশন সার্টিফিকেট চেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে।
• মনে রাখবেন, শুধুমাত্র অস্থাবর সম্পত্তির জন্যই সাকসেশন সার্টিফিকেট জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাঙ্কে রাখা টাকা-পয়সা, শেয়ার সার্টিফিকেট ইত্যাদি। কিন্তু বাড়ি-জমির মতো স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে ওই সার্টিফিকেট জরুরি নয়।
• কেউ উইল না-করে মারা গেলে, অনেক সময়ে সেই সম্পত্তি আদায়ের জন্য মৃত ব্যক্তির ডেথ সার্টিফিকেট, এফিডেভিট, অন্য আত্মীয়দের কাছ থেকে নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। তবে এ ক্ষেত্রে সাকসেশন সার্টিফিকেট সবচেয়ে জরুরি। নইলে কাউকে তা বিক্রি, হস্তান্তর ইত্যাদি করার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।
পাবেন কী ভাবে?
• নির্দিষ্ট এলাকা বা জুরিসডিকশনের জেলা আদালতে আবেদন করুন।
• সেখানে আপনার সঙ্গে মৃত ব্যক্তির (যাঁর উত্তরাধিকার চাইছেন) সম্পর্ক বয়ান করতে হবে।
• কোথায়, কী ভাবে তিনি মারা গিয়েছেন, তা জানাতে হবে।
• এ জন্য ডেথ সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হতে পারে।
• গুনতে হবে সম্পত্তি মূল্যায়নের ফি। |
|
উইলের খুঁটিনাটি
উইল ছাড়াও সম্পত্তি হস্তান্তরের অন্যান্য উপায় নিয়ে এতক্ষণ আলোচনা করলাম আমরা। কিন্তু চিঠি পড়ে দেখেছি, উইলের বিভিন্ন খুঁটিনাটি নিয়েও আপনাদের মনে প্রচুর প্রশ্ন রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটির উল্লেখ বেশ অনেকগুলি চিঠিতেই
পেয়েছি আমি। আসুন, আজ আলোচনায় বসে প্রথমে সেই সব ধোঁয়াশা দূর করে ফেলি—
রেজিস্ট্রি মানেই স্ট্যাম্প পেপার?
• উইল করার জন্য সাদা (প্লেন) কাগজই যথেষ্ট।
• স্ট্যাম্প পেপারেও উইল করতে পারেন। তবে তা জরুরি নয়।
• এমনিতে উইল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক নয়। তবে তা করতে চাইলে, সাদা কাগজের উইলই যথেষ্ট। এ জন্য স্ট্যাম্প পেপার ব্যবহার করতেই হবে, এমনটা নয়।
নিজেই? না কি আইনজীবী?
অনেকে জিজ্ঞাসা করেছেন, আইনজীবীর পরামর্শ ছাড়া নিজেই উইল করা আদৌ সম্ভব কি না?
আমার উত্তর হল
• যে কেউ নিজেই তাঁর উইল তৈরি করতে পারেন। তবে দু’জন সাক্ষীর সই লাগবে। যাতে প্রমাণ হয় স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে, অন্যের অনুরোধে কান না-দিয়ে এবং বিনা প্ররোচনায় আপনি তা করেছেন।
• অনেকে বলেন, উইল নিজে লিখলে সাক্ষীর প্রয়োজন নেই। কিন্তু আমি বলব, নিজে হাতে উইল তৈরি করলেও অন্তত দু’জন সাক্ষী রাখুন। পরে সুবিধা হবে। তা ছাড়া, আইন অনুযায়ীও
তা-ই করা উচিত।
• আইনজীবীর পরামর্শ ছাড়া উইল অবশ্যই করতে পারেন। তবে তাঁরা যেহেতু এই সব ব্যাপারে পারদর্শী এবং নিয়মিত পড়াশোনা করেন, তাই তাঁদের সাহায্য বা পরামর্শ নিলে পরে সুবিধা হতে পারে। আইনের অনেক ফাঁক-ফোকর আগেই বন্ধ করে দিতে পারেন তাঁরা। দায়বদ্ধ থাকেন পুরো বিষয়টি গোপন রাখার জন্যও। তবে ভাববেন না, আমি নিজে আইনজীবী বলে
এ কথা বলছি।
বয়ান বা ফর্ম্যাট
ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময়ে ইংরেজি বা বাংলার ক্লাসে আমরা চিঠি, নোটিস ইত্যাদির বয়ান লেখা শিখতাম। মনে পড়ে? উইলেরও কিন্তু তেমনই নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে। এর মানে এই নয় যে, কোনও একটা নির্দিষ্ট ছকেই আপনাকে তা লিখতে হবে। কিন্তু লেখার সময়ে নীচের জিনিসগুলি
মাথায় রাখা ভাল
• উইলের অনেক রকম ফর্ম্যাট হয়। নিজে করতে চাইলে, একেবারে ঝরঝরে সহজ ভাষায় মনের কথা লিখুন। সেটিই আইনগ্রাহ্য।
• স্ট্যাম্প পেপারের প্রয়োজন নেই। সাদা কাগজেই মনের ইচ্ছা বয়ান করতে পারেন।
• নিজের নাম, ঠিকানা, বয়স, জাতি, ধর্ম, পেশা ইত্যাদি অবশ্যই উল্লেখ করবেন।
• যাঁকে/ যাঁদের দিতে চান, তাঁর/ তাঁদের সঠিক বিবরণ দিন।
• কাউকে বঞ্চিত করলে, বা সম্পত্তি কম-বেশি দিতে চাইলে, অবশ্যই তার কারণ উল্লেখ করুন। খুলে বলুন, অন্যদের না-দিয়ে বা কম দিয়ে কেন কাউকে পুরোটা বা বেশির ভাগটাই দিতে চাইছেন আপনি।
• সম্পত্তির পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিন।
• যাঁকে দিচ্ছেন, তিনি যে বংশানুক্রমে ওই সম্পত্তি ভোগ করতে পারবেন, তা স্পষ্ট করে দেওয়া ভাল। জানিয়ে দিন যে, ওই সম্পত্তি দান, বিক্রি, ভোগ-দখল সবই করতে পারবেন উত্তরাধিকারী।
• স্পষ্ট করে দিন, এর পর অন্য ওয়ারিশদের দাবি বা ওজর-আপত্তি টিকবে না।
• অবশ্যই লিখবেন যে, আপনি স্বেচ্ছায়, সুস্থ দেহে ও মনে, বিনা অনুরোধে বা প্ররোচনায় এই উইল করলেন।
• আগে উইল করে থাকলে, নতুন উইলের পর তা বাতিল বলে গণ্য হবে। চূড়ান্ত ধরা হবে আপনার শেষ উইলটিই। তাই তারিখ দিতে ভুলবেন না।
• সাক্ষীদের সই ও ঠিকানা থাকা অবশ্যই জরুরি।
• শেষ এবং সম্ভবত সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ নিজে সই করতে ভুলবেন না। তা হলে উইল অর্থহীন।
মুসলিমদের উইল
কয়েক জন জানতে চেয়েছেন, মুসলিমদের জন্যও উইলের সমস্ত নিয়ম একই কি না?
দেখুন, উইল আইনি ব্যাপার। তাই তার অনেক কিছুই সকলের জন্য এক। কিন্তু হ্যাঁ, মুসলিমদের উইলে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। সেগুলিও সংক্ষেপে জেনে রাখলে মন্দ হয় না
• হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্ট ধর্মাবলম্বীরা উইলের মাধ্যমে তাঁদের সমস্ত সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন। কিন্তু মুসলিমদের ক্ষেত্রে নিয়মটি একটু আলাদা। সাধারণত তাঁরা মোট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের (১/৩) বেশি উইল (ওয়াসিয়ত) করতে পারেন না। করতে গেলে, প্রয়োজন হয় উত্তরাধিকারীদের (ওয়ারিশন) সম্মতি।
• উত্তরাধিকারীদের (ওয়ারিশন) মধ্যে কারও অনকূলে উইল করা চলবে না। সকলকেই দিতে হবে সমান করে।
• উইলকর্তার যাবতীয় ধার-দেনা, অন্ত্যেষ্টি বাবদ খরচ ইত্যাদি মেটাতে যা ব্যয় হবে, সেই সম্ভাব্য অঙ্ক বাদ দিয়ে রাখতে হবে গোড়াতেই। এর পর যা বাকি থাকবে, তার এক-তৃতীয়াংশ উইল করতে পারবেন তিনি।
• উইল লিখিতই হতে হবে, তেমন কোনও কথা নেই। তা মৌখিকও হতে পারে।
• সাক্ষীর প্রয়োজন নেই।
• এঁদের মধ্যে হিবা দলিলের (দানপত্র) যে প্রচলন দেখা যায়, তা-ও শরিয়ত আইন স্বীকৃত।
• দলিল যে-পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রি করা হয়, হিবা দলিলও করা হয় সেই পদ্ধতিতেই। তার পর ওই সম্পত্তি মিউটেশনও করা যায়।
বঞ্চনা-জটিলতা-অভিযোগ
এতখানি লিখে ফেলার পরেও আমার সামনে চিঠির পাহাড়। যেখানে সম্পত্তি, উইল, দানপত্র ইত্যাদিকে ঘিরে নানা আইনি সমস্যা আর টানাপোড়েনের কথা বিস্তারিত ভাবে লিখে পাঠিয়েছেন আপনারা। সম্পত্তির আয়নায় সম্পর্কের বন্ধন ছিঁড়ে যাওয়ার যন্ত্রণাও ফুটে উঠেছে অনেক চিঠিতেই।
কোথাও ছেলেদের পরামর্শে বিবাহিতা মেয়েকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে উইল করেছেন বিধবা মা। এখন সেই ‘অন্যায়ের’ প্রতিকার চাইছেন মেয়ে। কোথাও আবার প্রথমে ছেলের নামে সম্পত্তি দানপত্র করলেও, এখন তা মেয়েকে দিতে চান মা। কোনওখানে বিবাহিতা বোনেদের না-দিয়েই সম্পত্তি কব্জা করতে চাইছে ভাইয়েরা। আবার কোনও বাড়িতে আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে নিঃসন্তান দম্পতির সম্পত্তি ঘিরে।
আমার মনে হয়, এই প্রত্যেকটি চিঠির উত্তর আলাদা-আলাদা ভাবে দেওয়া উচিত। এবং ঠিক তা-ই দেব আমি। এই সংখ্যার ‘আপনাদের প্রশ্ন’ বিভাগেই এমন একটি প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। বাকিগুলির নির্দিষ্ট এবং বিস্তারিত উত্তরও প্রতি সংখ্যায় ওই বিভাগেই দিতে থাকব আমরা। আশা করি তাতে সুবিধা হবে। বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আইনকে হাতিয়ার করতে পারবেন আপনি।
|
এক নজরে |
|
উইল |
দানপত্র |
পারিবারিক বন্দোবস্ত দলিল |
মালিকানা বদল
রেজিস্ট্রি
প্রোবেট |
উইলকারীর মৃত্যু হলে
না-করলেও চলে
করতেই হবে |
করার সঙ্গে সঙ্গেই
করতেই হবে*
জরুরি নয় |
দলিলকারী বেঁচে থাকতেই
করা উচিত
জরুরি নয় |
*স্থাবর সম্পত্তি |
|
লেখক কলকাতা
হাইকোর্টের আইনজীবী |
|
|
|
|
|