কাবুলে তালিবান হামলায় মৃত্যু রানাঘাটের যুবকেরও
প্রতিদিনের মতোই ভোরে উঠে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছিলেন কৌশিক। হঠাৎ গুলি-পাল্টা গুলিতে কেঁপে উঠল পুরো আবাসনটা। খানিক পরে বিস্ফোরণ। আফগানিস্তানে তালিবান হামলায় নিহত ভারতীয়দের নামের তালিকায় যোগ হল তরতাজা যুবক কৌশিক চক্রবর্তীর নামও। মঙ্গলবার ভোরে কাবুলের পুল-ই-চর্কি এলাকায় দুবাইয়ের একটি সংস্থার অতিথি-আবাসে তালিবান হামলায় নিহত হয়েছেন তিন ভারতীয়-সহ অন্তত সাত জন।
কৌশিক চক্রবর্তী
রানাঘাটের লাগোয়া শ্রীনাথপুর গ্রামের কৌশিক ছাড়াও নিহতদের তালিকায় রয়েছেন গুজরাতের দুই বাসিন্দাও। রয়েছেন চার জন নেপালি নিরাপত্তা রক্ষী। ন্যাটো বাহিনীকে খাবার, পানীয়, জ্বালানি ইত্যাদি সরবরাহকারী সংস্থার হয়ে, মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর যৌথ ক্যাম্পে বছর দুয়েক ধরে রাঁধুনির কাজ করতেন কৌশিক। তাঁর সহকর্মীরা টেলিফোনে জানান, মঙ্গলবার ভোরে বিস্ফোরক বোঝাই একটি ট্রাক নিয়ে জঙ্গিরা আচমকাই হামলা চালায় ওই ক্যাম্পে। ঘটনাস্থলেই মারা যান কৌশিকরা। বেলার দিকে তাঁর সহকর্মীরাই বাড়িতে ফোন করে দুঃসংবাদটি দেন। রানাঘাট থানায় খবর আসে আরও পরে, বিকেলে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে কৌশিকের দেহ দেশে ফেরানোর তোড়জোড় চলছে। কৌশিকের মা ঝর্নাদেবী ও স্ত্রী দেবলীনাকে এখনও জানানো হয়নি দুঃসংবাদ। তাই ২৭ বছরের ছেলের মৃত্যুসংবাদ পেয়েও ঠোঁট কামড়ে শোক চেপে রয়েছেন কৌশিকের বাবা সুশান্ত চক্রবর্তী। বন দফতরের কর্মী সুশান্তবাবু বললেন, “কাঁদতেও পারছি না।
ওরা তো জানে না, যে ছেলেটা আর নেই। খুব ইচ্ছে করছে ছেলেটার মুখে একটু হাত বুলিয়ে দিতে। কত দূরে একা একা মরে পড়ে আছে!” এ দিন বিকেলে শ্রীনাথপুরে কৌশিকের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, মা ঝর্নাদেবী জনে জনে জিজ্ঞাসা করছেন, “ছেলেটার চোট কোথায় লেগেছে গো, তেমন গুরুতর নয়তো!” খবর পেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে গ্রামে এসেছেন বোন পুষ্পিতা। তবে কৌশিকের স্ত্রী দেবলীনা দু-বছরের ছেলে আহানকে নিয়ে বাপের বাড়িতেই আছেন, পড়শি গ্রাম বিনপাড়ায়। সেখানেও কৌশিকের ‘আহত’ হওয়ার খবরটুকুই পাঠানো হয়েছে।
ছুটি মিলত না, সপ্তাহান্তে এক বার ফোন আর মাঝে মধ্যে চিঠি। ছেলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বলতে এটুকুই ছিল। সুশান্তবাবু বললেন, “সপ্তাহ শেষে ওর ফোনের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকতাম। সেটুকুও নিভে গেল!”
স্থানীয় আনুলিয়া স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করার পর আর পড়াশোনা করেননি কৌশিক। পরিবার সূত্রে জানা গেল, স্থানীয় কয়েক জন যুবকের সঙ্গে অল্প বয়সেই কাজের খোঁজে পাড়ি দিয়েছিলেন ইরাকে। শ্রীনাথপুরের আশপাশের জোসেফপাড়া, বেগোপাড়া কিংবা বিনপাড়া থেকে বহু মানুষই রুজির টানে পশ্চিম এশিয়া কিংবা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যান। তাঁদের সঙ্গে ২০০৫ থেকেই ভিন দেশে পাড়ি দিয়েছেন কৌশিক। সুশান্তবাবু জানান, প্রথমে কৌশিক যান ইরাক। সেখানে দু’বছর কাটিয়ে সিঙ্গাপুর। তবে কাবুল থেকে ফোনে কৌশিক বলতেন, আর বিদেশে থাকবেন না। সুশান্তবাবু বললেন, “মাস কয়েক আগে টেলিফোনে জানিয়েছিল, আর এক বছর কাজ করেই ফিরবে। থিতু হয়ে গ্রামেই ব্যবসা করবে ঠিক করেছিল। তা আর হল না!”
বুধবার আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র সেদিক সিদিক্কি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ বিস্ফোরকভর্তি একটি ট্রাক নিয়ে পাঁচ আত্মঘাতী জঙ্গি ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। অতিথি-আবাস চত্বরের বাইরে থেকে নিরাপত্তা রক্ষীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় তারা। তার পর, এক জন জঙ্গি ট্রাকটিতে বিস্ফোরণ ঘটায় ও বাকি চার জন ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে। এক ঘণ্টারও বেশি সময় নিরাপত্তা রক্ষী ও জঙ্গিদের মধ্যে গুলির লড়াই চলে।
এই ধরনের পরিস্থিতিতে প্রাণ বাঁচানোর জন্য কাবুলের প্রায় সব আবাসনেই একটি করে বাঙ্কার বানানো হয়। এই আবাসনটিতেও তেমনই একটি বাঙ্কার ছিল, যাতে ঢুকে পড়ে অনেকেই এ দিন বেঁচে গিয়েছেন। কিন্তু কয়েক জন ঠিক সময়ে বাঙ্কারে ঢুকতে না পারায় সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন।
প্রশাসনের প্রাথমিক অনুমান, হামলার মূল লক্ষ্য ভারতীয়রা ছিলেন না, বিদেশি সংস্থাটিকে ধ্বংস করাই উদ্দেশ্য ছিল জঙ্গিদের। জঙ্গিরা সকলেই নিরাপত্তা রক্ষীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। গত মাসের ২৪ তারিখে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের প্রবেশ দ্বারে গাড়িবোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল তালিবান। তার পরেই কয়েক দিনের ব্যবধানে ফের এই বিস্ফোরণটি ঘটায় বাড়তি সতর্কতা জারি হয়েছে দেশ জুড়ে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.