ছাদ ফুটো হয়ে গিয়ে বৃষ্টির জল পড়ছে কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালে! যাত্রীরা যা দেখে কার্যত হাঁ হয়ে গিয়েছেন!
বিমানবন্দর সূত্রে খবর, গত শনিবার কলকাতায় বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকেই টার্মিনালের ছাদ থেকে জল পড়তে শুরু করে। মেঝে ও কার্পেট ভিজে যেতে দেখে সেখানে বালতি বসিয়ে দেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। একটি নয়, বেশ কয়েকটি জায়গা ফুটো হয়ে জল পড়ছিল বলে বেশ কিছু বালতির ব্যবস্থা করতে হয়েছে। সোমবারও টার্মিনালের কিছু জায়গায় ওই বালতি নজরে এসেছে।
জানা গিয়েছে, নতুন টার্মিনাল তৈরির সময়েও একই ভাবে ফুটো হয়ে যাচ্ছিল উপরের চাদরের আস্তরণ। তখনও ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়েছে। কিন্তু, তখন টার্মিনাল চালু হয়নি। কাজ করার ফাঁকেই ঝালাই করে ফুটো বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিমান সংস্থাগুলির কর্তাদের প্রশ্ন, আগে থেকেই যদি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানতেন, তা হলে প্রয়োজনীয় আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন? এই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে। |
ছাদ থেকে অনবরত পড়ছে বৃষ্টির জল। মোকাবিলায় বালতি বসেছে নতুন টার্মিনালে। —নিজস্ব চিত্র |
মাত্র দিন কয়েক আগেই প্রবল বৃষ্টিতে দিল্লির নতুন টার্মিনাল টি থ্রি-র ভিতরে হুড়হুড় করে জল ঢুকে যায়। সেই জলের পরিমাণ এতটাই ছিল যে, যাত্রীদের মালপত্র সরাতে হিমশিম খেতে হয়। বেশ কিছু উড়ান ছাড়তেও দেরি হয়। কলকাতার ছবিটা অবশ্য ভিন্ন। ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়ায় কোনও বিমান ছাড়তে যেমন দেরি হয়নি, তেমনই কোনও যাত্রীর বড় কোনও অসুবিধা হয়নি। কিন্তু, ঝাঁ-চকচকে নতুন টার্মিনালে ইতস্তত বালতির উপস্থিতি দৃষ্টিকটু লেগেছে যাত্রীদের। প্রশ্ন উঠেছে, যে টার্মিনাল তৈরিতে ২৪০০ কোটি সরকারি টাকা খরচ হয় (যা যাত্রীদের করের টাকা থেকেই নেওয়া), সেখানে কারণে-অকারণে এত সমস্যা কেন হবে? নিয়মিত বিমানে যাতায়াত করেন সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অমিত হালদার। তাঁর কথায়, “বেশির ভাগ সময়েই তো দেখছি এরোব্রিজের কার্পেট ভিজে কালো হয়ে আছে। এখন ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়ছে। নতুন টার্মিনালের জন্য আমাদের কাছ থেকে নিয়মিত যে যে ৪০০ ও হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে, তা কোন কাজে লাগছে?”
এক বিমান সংস্থার অফিসারের কথায়, “রবিবার বিমানবন্দরে ঢুকে আমি থ! আমাদের চেক-ইন কাউন্টারের একটু দূরে পরপর বেশ কয়েকটি বালতি রাখা। বিশাল উঁচু ছাদ থেকে টপ টপ করে জল পড়ছে।” শুধু চেক-ইন কাউন্টার নয়, টার্মিনালের বিভিন্ন জায়গায় এই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। সব চেয়ে বেশি জল পড়েছে টার্মিনালের কোণে ভিআইপি লাউঞ্জের সামনে। টার্মিনালের নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে একেবারে বাঁ দিকের কোণে এই লাউঞ্জ। তার সামনেও বালতি রাখা।
রবিবার দিল্লি যাওয়ার পথে বিষয়টি চোখে পড়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের। মুকুলবাবু বলেন, “বিষয়টি দেখে খুব খারাপ লেগেছে। বিমান মন্ত্রককে শীঘ্রই এ ব্যাপারে জানাব।”
কেন পড়ছে জল? বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এখনও টার্মিনাল তৈরির কিছু কাজ বাকি। তা ছাড়া, মাঝেমধ্যেই দেওয়ালের উপরের দিকের কাচ ভাঙার পরে তা লাগানোর ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। ফলে নিয়মিতই বিমানবন্দরের ছাদের উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে কর্মীদের। কখনও যন্ত্রপাতি, কখনও ভারী কাচ বয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এক অফিসার বলেন, “ছাদে সবার উপরে ০.৯ মিমি মোটা অ্যালুমিনিয়ামের চাদর রয়েছে। এই চাদর এতই পাতলা যে, তার উপরে হাঁটলে, যন্ত্রপাতি বা মোটা কাচ টেনে নিয়ে গেলে তা ফুটো হয়ে যাচ্ছে। আগেই এই ফুটো হয়ে ছিল। শনিবার জোরে বৃষ্টি নামার পরে সেখান দিয়ে জল ঢুকতে শুরু করে।”
এই পাতলা চাদরের তলায় শব্দ নিরোধক এক আস্তরণ (খনিজ পশম দিয়ে তৈরি) রয়েছে। অফিসারদের মতে, এর আগেও যখন বৃষ্টি হয়েছে, তখন অ্যালুমিনিয়ামের চাদরের ফুটো দিয়ে জল ঢোকার পরে এই আস্তরণ তা শুষে নিচ্ছিল। কিন্তু, গত শনিবার থেকে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। জলের পরিমাণ বাড়ার ফলে শব্দ নিরোধক আস্তরণ থেকে তা টপ টপ করে পড়তে শুরু করে। এর নীচে আর কোনও আস্তরণ নেই। আ্যালুমিনিয়াম রড দিয়ে কিছু নকশা করা রয়েছে।
রবিবার দুপুরের পরে বৃষ্টি কমে আসে। সোমবার সকাল থেকে জল পড়াও কমতে শুরু করে। এ দিনই ওই ছাদে উঠে বিষয়টি সরেজমিন দেখেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত কর্তারা। এক কর্তার কথায়, “ঠিক কোথায় কোথায় ফুটো, তা উপর থেকে বোঝা মুশকিল। খুব ছোট ছোট ফুটো তৈরি হয়েছে। যেখানে যেখানে জল পড়ছে, তা আন্দাজ করে ছাদের ওই অংশ ঝালাই করে দেওয়া হবে।” |