|
|
|
|
|
|
|
জাতীয় রাজনীতির অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব |
শতবর্ষে জ্যোতি বসু |
ধর্মতলার লোরেটো স্কুলের চুপচাপ ছাত্রটিই পরে হয়ে ওঠেন দেশের অন্যতম অগ্রগণ্য রাজনীতিবিদ জ্যোতি বসু। পঁচানব্বই বছরের জীবনে সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলেন সত্তর বছর। সাড়ে তেইশ বছর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রিত্ব করেছেন, ১৯৯৬-এ ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উঠেছিল তাঁরই নাম। ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত ষোলো আনা বাঙালি মানসিকতার তিনি ছিলেন এক বিরল ব্যক্তিত্ব। কাউকেই জ্যোতিদাদা বলতে শোনা যেত না, ব্যক্তিত্বের দাবিতে সকলের কাছে তিনি জ্যোতিবাবু। বামপন্থী রাজনীতির এই পুরোধা ব্যক্তিত্ব ৮ জুলাই শতবর্ষে পা রাখবেন।
কলকাতায় ১৯১৪-র ৮ জুলাই এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম। বাবা বিশিষ্ট চিকিৎসক নিশিকান্ত বসু ও মা হেমলতা দেবী। বরাবরই মেধাবী, লোরেটো ও সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের পর প্রেসিডেন্সি থেকে ইংরেজির স্নাতক। ১৯৩৬-এ বিলেত যাত্রা, ব্যারিস্টারি পড়ার মাঝে নিয়মিত যোগ ছিল কমিউনিস্ট পার্টি অব গ্রেট ব্রিটেন-এর সঙ্গে। দেশে ফিরে গিয়ে কী করবে? লন্ডনে সুভাষচন্দ্রের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করব।’
সত্যিই তাই। টানা সত্তর বছর কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে অটুট বিশ্বাস রেখে সক্রিয় রাজনীতিতে আমৃত্যু কাটিয়েছেন জ্যোতি বসু। বার-এ নাম লেখালেও বিশেষ কোনও কেস করেননি। রেলশ্রমিক আন্দোলন দিয়ে শুরু, একে একে কৃষক, শিক্ষক-সহ বিভিন্ন আন্দোলনে পুরোভাগে ছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হলে জেলে যেতে হয়। ১৯৫১-য় মুক্তি, ’৫২-র প্রথম সাধারণ নির্বাচনে বরাহনগর থেকে নির্বাচিত হয়ে বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার ভূমিকা পালন করেন। তাঁর সময়েই পশ্চিমবঙ্গে ভূমিসংস্কার বাস্তবায়িত হয়। ১৯৭৭ থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হলেও, দীর্ঘকাল ধরে সর্বভারতীয় স্তরে যে-কোনও সমস্যায় তাঁর মতামত বিশেষ গুরুত্ব পেত। ২০১০-এর ১৭ জানুয়ারি তিনি প্রয়াত হন।
শতবর্ষ পালনের জন্যে বর্ষব্যাপী নানা পরিকল্পনা আছে রাজ্য সিপিএম-এর। রাজারহাটে গড়ে তোলা হবে ‘জ্যোতি বসু চর্চা কেন্দ্র’। থাকবে প্রেক্ষাগৃহ, সংগ্রহশালা। প্রকাশিত হবে দশ জন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জ্যোতি বসুর আলাপ-আলোচনা বিষয়ক গ্রন্থ। এ ছাড়াও বিধানসভায় তাঁর ভাষণের একটি নির্বাচিত সংকলন ও সচিত্র জীবনীগ্রন্থ প্রকাশ করা হবে, জানা গেল রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর কথায়। ৮ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় নজরুল মঞ্চে শততম বর্ষের সূচনা অনুষ্ঠান, থাকবেন প্রকাশ কারাট-সহ অন্যরা।
|
বিশ্বকর্মা |
বিশ্বকর্মা বাঙালির প্রথম সারিতেই তাঁর নাম। কিন্তু স্যর রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কে আমরা ভুলেই গিয়েছি। শুধু ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, বেলুড় মঠের মন্দির কি সারা দেশ জুড়ে অজস্র বিখ্যাত স্থাপত্য নির্মাণেই তাঁর কীর্তি সীমাবদ্ধ ছিল না, মার্টিন এবং পরে মার্টিন বার্ন বহুমুখী শিল্পোদ্যোগের অসামান্য নজির রেখেছে। গত ২৩ জুন তাঁর ১৬০তম জন্মদিন ছিল। পলতার জলকল তৈরি দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু, কলকাতা পুরসভা তাঁকে আশি বছরে (১৯৩৩) সংবর্ধনা জানিয়েছিল। অমল হোমের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘ক্যালকাটা মিউনিসিপাল গেজেট’-এর বিশেষ সংখ্যা। তাঁর প্রয়াণের পরেও বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এ বার তরুণ রানার সম্পাদনায় প্রকাশ পেল দ্য লিজেন্ডারি/ স্যর রাজেন্দ্রনাথ মুখাজির্ (কলকাতা পুরসভা, ১৫০.০০), যেখানে এই বিশেষ সংখ্যা দুটি ছাড়াও সংশ্লিষ্ট বহু তথ্য সংযোজিত। কলকাতা পুরশ্রী-র সাম্প্রতিক সংখ্যাতেও তাঁকে স্মরণ করা হয়েছে।
|
স্বামীজি |
শ্রীরামকৃষ্ণ একটুকরো কাগজে লিখে দিয়েছিলেন, ‘নরেন শিক্ষে দিবে’। পূর্বাশ্রমে নরেন্দ্রনাথ, পরে স্বামী বিবেকানন্দ যে শিক্ষা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন দেশে-বিদেশে, তাকেই তাঁর লেখা চিঠি ও সমসাময়িক ঘটনাবলির বিশ্লেষণে একটি জীবনীর আকারে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন শ্রীআনন্দ। এই অনুবাদক ও গীতিকার দু’খণ্ডে প্রায় তেরোশো পৃষ্ঠায় লিখেছেন অদ্বিতীয় বিবেকানন্দ (পারুল প্রকাশনী, প্রতি খণ্ড ৫৯৫.০০)। কেবল দিনপঞ্জি ও চেনা ঘটনার বিবরণ নয়, এতে স্বামী বিবেকানন্দের ভারত ও বিদেশ যাত্রার খুঁটিনাটি উঠে এসেছে। চিঠিপত্র ও অন্যান্য ভ্রমণ-বিবরণের সাক্ষ্যে জীবন্ত হয়ে উঠেছেন স্বামীজি। তাঁর মৃত্যুদিনের (৪ জুলাই) কিছু আগে প্রকাশিত হল এই সযত্ন-জীবনীটি। অন্য দিকে সাহিত্য ভারতী প্রকাশ করেছে বিবেক-রশ্মি সংকলনটি, যেখানে বিবেকানন্দ-জীবন বিধৃত হয়েছে বহু দুর্লভ চিত্রে। মুদ্রণসৌকর্যে অনুপম, তথ্যসমৃদ্ধ এই চিত্রজীবনীটি সম্পাদনা করেছেন বারিদবরণ ঘোষ, নন্দগোপাল রায়, বিদ্যুৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রদীপকুমার সেন। সঙ্গের ছবিটি ১৮৯৭-এ কলকাতায় তোলা, বিবেক-রশ্মি থেকে নেওয়া।
|
বঙ্কিম স্মরণ |
কলকাতায় বঙ্কিমচন্দ্রের বাড়িতে কার্জন স্মারকফলক লাগালেও সে বাড়ি সংরক্ষিত হয়নি। নৈহাটি কাঁটালপাড়ার পৈতৃক বসতবাড়িটি কিন্তু আজও তাঁর সৃষ্টিশীল কাজকর্মের নীরব সাক্ষী। ১৯৯৯-এ ওই বাড়িতেই বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্র গড়ে ওঠে। সেখানে সংরক্ষিত পুরনো নথি চিঠিপত্র ইত্যাদির ভিত্তিতে গৌতম সরকার লিখেছেন বঙ্কিমচন্দ্রের বাড়ি বইটি। সংশ্লিষ্ট বহু খুঁটিনাটি তথ্য ছাড়াও আছে বাড়িটির স্থাপত্যশৈলী প্রসঙ্গ। বঙ্কিম-ভবন থেকে বেরিয়েছে আরও দু’টি বই: বঙ্কিম পরিবারের মেয়েদের চিঠি (সম্পা: অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য, পার্থপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়) ও বঙ্কিম অভিধান/উপন্যাস খণ্ড (সম্পা: রতনকুমার নন্দী, পার্থপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়)। এগুলি প্রকাশের উপলক্ষ বঙ্কিমের ১৭৫তম জন্মবার্ষিকী। গত ২৬ জুন ১৭৫ বছর পূর্ণ করলেন বঙ্কিমচন্দ্র (জ. ১৮৩৮), তারই উদ্যাপন হল ২৮ জুন ওই বঙ্কিম-ভবনেই। অধ্যক্ষ পিনাকেশ সরকারের তত্ত্বাবধানে বঙ্কিম-প্রতিভার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করলেন শ্রাবণী পাল আর অলোক রায়। বঙ্কিমের গান নিয়ে বললেন ও তা গেয়ে শ্রোতাদের মাতিয়ে দিলেন দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়।
|
বিদেশে পাড়ি |
রিঙ্কি-ঊর্মিলা-রেণু-সুপ্রিয়া-আশা। বয়স ১১-১৪। ওরা থাকে ঝাড়খণ্ডের নানা গ্রামে। সবাই পিছিয়ে পড়া দরিদ্র কৃষক পরিবারের মেয়ে। স্কুল থেকে ফিরে বাড়ির কাজেই ওদের সাদামাঠা দিন কেটে যেত। বছর দুই আগে হঠাৎই জীবন বাঁক নেয়। এগিয়ে এসেছিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘যুবা’। ফুটবল খেলা শিখতে শুরু করে ওরা। বাড়ির বকুনি, পড়ে গিয়ে হাত-পা ভাঙা, চোট লাগা এ সব সত্ত্বেও চালিয়ে গিয়েছে খেলা। ওদেরই আঠারো জনের দল এ বার পাড়ি দিল স্পেন, দনস্তি কাপ (১-৬ জুলাই) ও গাস্তিজ কাপ (৭ জুলাই) প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে। সহযোগিতায় ‘গামেসা ইন্ডিয়া’। দিল্লিতে টুর্নামেন্ট খেললেও বিদেশে পাড়ি এই প্রথম। তার আগে কলকাতায় ওবেরয় গ্র্যান্ডে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা শোনাল ওরা।
|
আইকিডো |
ষাটের দশক অবধি জাপানের মন্দিরেই সীমাবদ্ধ ছিল আইকিডো। এই মার্শাল আর্টের প্রচলন করেন মোরিয়ি উইশিবা। আততায়ীকে আহত না করেও এই বিদ্যা প্রয়োগ করে আত্মরক্ষা করা যায়। আইকিডোকে ইয়োরোপ ও আমেরিকায় জনপ্রিয় করেন উইশিবার ছাত্র কোবায়াশি হিরোকাজু। আইকিডোতে তরোয়াল ও লাঠির ব্যবহারও আছে। কারাটে, জুডোর মতো আইকিডো কিন্তু এখনও খেলাধুলোর অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এ দেশেও রয়েছে ‘আইকিডো অ্যাকাডেমি অব ইন্ডিয়া’। সম্প্রতি কলকাতা জুডো ক্লাবে এদের উদ্যোগে হয়ে গেল সাত দিনের আন্তর্জাতিক মার্শাল আর্ট-এর কর্মশালা। উপস্থিত ছিলেন আইকিডোর শিক্ষক ইতালির মার্সেলা পাভিয়ো।
|
বিপ্লবী |
‘মা তুমি আমার জন্য দুঃখ করো না। তোমার জন্য শত শত সন্তান রইল তাদের মা হয়ে তুমি আমার দুঃখ ভুলে যেও।’ আলিপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে মা-কে লিখেছিলেন অগ্নিযুগের বিপ্লবী দীনেশচন্দ্র মজুমদার। ১৯৩৪-এর ৯ জুন শেষ রাতে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ফাঁসি দেয়। বসিরহাটের মানুষ ছিলেন, জন্ম ১৯০৭-এ। উনিশ বছর বয়সে তিনি ‘যুগান্তর’ দলে দীক্ষিত হন। কুখ্যাত পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্টকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়ে ধরা পড়েন দীনেশ। মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে পালিয়ে ফরাসি চন্দননগরে আশ্রয় নেন তিনি। ‘স্টেটসম্যান’ সম্পাদক ওয়াটসনের উপর ব্যর্থ আক্রমণ, চন্দননগরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং কমিশনার-হত্যা, শেষে কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের গোপন আস্তানায় পুলিশের হানা, সংঘর্ষ এবং গ্রেফতার দীনেশের বিপ্লবী জীবনের বিচিত্র কর্মকাণ্ড দুর্লভ সরকারি নথি, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন ও অন্যান্য সূত্র থেকে উদ্ধার করে এই প্রথম সযত্নে দুই মলাটে নিয়ে এলেন নির্মলকুমার নাগ (বিপ্লবী দীনেশচন্দ্র মজুমদার/ জীবন ও সাধনা, সোপান, ১০০.০০)। নির্মলবাবু এর আগে প্রফুল্ল চাকী/ নিহত নায়ক (বুনোহাঁস/ বাংলার মুখ, ১০০.০০) বইতেও তুলে ধরেছিলেন বহু অজানিত তথ্য এবং বিশ্লেষণ।
|
তোমার চরণ পথে |
শ্রীরামকৃষ্ণের তিরোধানের পর শিষ্যরা নীড়ভ্রষ্ট পাখির মতো ছড়িয়ে পড়েছিলেন। ঠাকুরের রসদদার সুরেন্দ্র মিত্র ও নরেন সচেষ্ট হলেন ছেলেদের একত্র করতে। বরাহনগরে গঙ্গার কাছে টাকির জমিদারদের পুরনো বাড়ির খোঁজ মিলল মাসিক এগারো টাকায়। সাপ-শেয়ালের আস্তানা বাড়িটিকে বাসযোগ্য করলেন তাঁরা। বলরাম বসুর সাহায্যে তৈরি হল মঠ। এখানেই প্রথম দশ জন সন্ন্যাস নেন। গৃহী ভক্তরাও আসতেন। বলরাম বসুর মৃত্যুর পর শুরু হল অর্থাভাব। সকলকে আগলে রাখতেন শশী মহারাজ। এ ভাবেই রামকৃষ্ণ মঠের প্রাতিষ্ঠানিকতা দানা বেঁধেছিল এখানে। পরে মঠ উঠে যায় আলমবাজারে। স্বামীজির জন্মের সার্ধশতবর্ষে আদি মঠটি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এর ইতিহাস ও বর্তমান কাজকর্ম নিয়ে তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্র ‘তোমার চরণ পথে’। চিত্রনাট্য ও পরিচালনা সুজিত রায়।
|
ঘনাদা-র শিল্পী |
তাঁর আঁকা ‘ঘনাদা’ দেখে খুশি হয়েছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। সেই থেকে ঘনাদা-র শিল্পী হিসেবে খ্যাতনামা হয়ে গেলেন অজিত গুপ্ত। ১৯২৮-এ শ্রীরামপুরে জন্ম। গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের কৃতী ছাত্র, পরে কমার্শিয়াল আর্টেই মন দেন। দুশোরও বেশি প্রচ্ছদ এঁকেছেন বাংলা বইয়ের। দেশ, বসুমতী, বসুধারা-র বিশেষ সংখ্যার প্রচ্ছদ করেছেন। প্রেমেন্দ্র মিত্রের সাগর থেকে ফেরা, বনফুলের হাটে বাজারে, গজেন্দ্রকুমার মিত্রের কলকাতার কাছেই, শংকরের চৌরঙ্গী-র মতো স্মরণীয় প্রচ্ছদ তাঁরই আঁকা। ডাকটিকিট দিয়ে করা চৌরঙ্গী-র অভিনব প্রচ্ছদটি আজও মুদ্রিত হচ্ছে। তাঁর সময়ের কথা নিয়ে লিখেছেন দুটি বই, ভালবাসার আড্ডা আর লেখক নিজেই গল্প। শিল্পী প্রয়াত হলেন সম্প্রতি।
|
ব্রিটিশ স্থাপত্য |
ব্রিটিশ স্থাপত্যের অহংকার ক্রমে অনুসৃত হয়েছে বিশ্বের নানা স্থানে। মার্বল হিল হাউস, চিজউইক হাউস, অসবোর্ন হাউস, চ্যাপটার হাউস, জুয়েল টাওয়ার বা ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবি স্থাপত্যগৌরবে সকলেই উজ্জ্বল। রং-তুলিতে এ সবই ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী স্বরূপ মুখোপাধ্যায়। ‘ইংলিশ হেরিটেজ মনুমেন্ট’ প্রদর্শনীটি এখন চলছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল-এর কুইনস হলে। উদ্বোধন করেছেন পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশনের সদস্য পার্থরঞ্জন দাস। চলবে ১৪ জুলাই (সাড়ে ১০টা-৫টা) পর্যন্ত।
|
অলীক সুখ |
মা মারা গিয়েছেন। তাঁকে ঘিরে বাড়ির সকলের কান্না। ছাদে খুকু একা। আপনমনে পা ছড়িয়ে বসে পায়রাদের মুড়ি খাওয়াচ্ছে। আবহে ‘বিপুল তরঙ্গ রে’। ‘পারমিতার একদিন’-এ দুই মূল নারী চরিত্রের পাশে সেই অস্থিরমতি’র দাপুটে অভিনয় ছিনিয়ে নিয়েছিল শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেত্রীর পুরস্কার। বছর দশেক পর ‘ইচ্ছে’র নাছোড়বান্দা মা ‘মমতা’। সোহিনী সেনগুপ্ত এখন ‘কবিতা’। ‘অলীক সুখ’ ছবিতে সোহিনী ঋতুপর্ণার দ্বিতীয় সত্তা। ডাক্তার কিংশুক গুহ ব্যক্তি ও পেশাদার কোন জীবনের গুরুত্ব বেশি, সেই অঙ্কের হিসেবে ক্ষণিকের ভুল করে বসেন। তার খেসারত গোনেন কবিতা এবং বিপন্ন হয় কিংশুক-রম্বানি’র দাম্পত্যজীবন। ছবির পরতে পরতে রম্বানি-কবিতার ক্রমে মিলে মিশে যাওয়া, আর উত্তর খোঁজা সুখ আসলে কী, নাকি সবই অলীক? সোহিনীর কথায়, ‘একেবারেই নতুন একটি চরিত্র।’ কিন্তু সিনেমার দর্শকরা তাঁকে এত কম পান কেন? ‘থিয়েটার নিয়েই ব্যস্ত থাকি। সিনেমায় মনমতো চরিত্রও পাই না।’ স্পষ্ট জবাব সোহিনীর। তাঁর অভিনয় প্রসঙ্গে পরিচালক শিবপ্রসাদ বললেন, ‘কবিতার চরিত্রে সোহিনী ছাড়া আর কাউকে ভাবা যায় না।’ ‘মমতা’ না ‘কবিতা’ অভিনয়ের দিক দিয়ে কাকে এগিয়ে রাখবেন? এড়িয়ে গিয়ে পরিচালকের স্বীকারোক্তি, ‘এ টুকুই বলতে পারি, ঋতুপর্ণা আর সোহিনী, এ ছবিতে দু’জনেই দু’জনকে টক্কর দিয়েছেন অভিনয়ে।’ ১৯ জুলাই মুক্তি পাবে সুচিত্রা ভট্টাচার্যের কাহিনি অবলম্বনে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়ের নতুন ছবি ‘অলীক সুখ’।
|
|
|
|
|
মিলাডা |
সতীকান্ত গুহর সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টায় সাউথ পয়েন্ট স্কুল গড়ে তুলেছিলেন মিলাডা গঙ্গোপাধ্যায়। স্কুলটিকে গৌরবের শীর্ষে তুলতে তাঁর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দৌহিত্র মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী মিলাডা সিকোরোভা-র জন্ম চেকোস্লোভাকিয়ায়, ১৯১৩-র ১০ জুলাই। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির এম এ মিলাডা মন্টেসরি শিক্ষায় ডিপ্লোমা করেন। ‘গীতাঞ্জলি’ ও ‘মালিনী’র চেক অনুবাদ পড়ে মুগ্ধ মিলাডার সঙ্গে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়েই আলাপ হয় পরিসংখ্যানের ছাত্র মোহনলালের। পড়া শেষে মোহনলাল দেশে ফিরে আসেন। মিলাডাও ভারতে আসার জন্য তৈরি হলেন। মার্সেই বন্দর থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে শেষ যাত্রিবাহী জাহাজটিতে বোম্বাই পৌঁছন তিনি। সেখানে পান মোহনলালের পাঠানো শাড়ি। বাঙালি বধূবেশে জোড়াসাঁকো পৌঁছে পরিচয় হল অবনীন্দ্রনাথের সঙ্গে। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আলাপ হলে তিনি বললেন, ‘‘মোহনের বউ তুমি, আমি তোমার নাম রাখলুম মোহিনী।”
মিলাডা কলাভবনে অবনীন্দ্রনাথ ও নন্দলাল বসুর কাছে ছবি আঁকা শেখেন। ১৯৫৫ থেকে সাউথ পয়েন্ট স্কুলে পড়ান, ’৭৫-এ শিশু বিভাগের অধ্যক্ষ হিসেবে স্বেচ্ছাবসর নেন। মণিপুরের মহারাজকুমারী বিনোদিনী দেবীর আমন্ত্রণে প্রথম ইম্ফল যান। আঠারো বার নাগাল্যান্ড গিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে জনজাতীয়দের জীবন খুঁটিয়ে দেখে লিখেছেন আ পিলগ্রিমেজ টু দ্য নাগাজ, আর নাগা আটর্-এর মতো বই। গড়গড় করে বাংলা বলতেন। চেক রূপকথা, ছোটগল্প বাংলায় অনুবাদ করেছেন। শুক্তো ও আলু পোস্তও রাঁধতেন। কলকাতায় ইন্দো-চেকোস্লোভাক কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ’৯৪-এ ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার পর অসুস্থ অবস্থাতেও মনের জোরে লেখালিখি করেছেন। আবার ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে ২০০০-এর ২৭ এপ্রিল মারা যান ৮৬ বছর বয়সে। শতবর্ষে তাঁর কি শুধু বিস্মৃতিই প্রাপ্য? |
|
|
|
|
|
|