আশির দশকে তাঁর সুরে কিশোরকুমারের সেই ফিল্মি গান এখনও মুখে মুখে ফেরে। ‘জানি যেখানেই থাক, এখনও তুমি যে মোর গান ভালবাস!’ আমৃত্যু এই প্রত্যয়ে অটল থেকেই যেন চলে গেলেন সুরকার মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায় (৭৩)। রবিবার সন্ধ্যায় টালিগঞ্জের এক হাসপাতালে প্রয়াত হন তিনি। তাঁর স্ত্রী, পুত্র-কন্যারা রয়েছেন। আড়াই বছর আগে পেটের ক্যানসারের ধাক্কা সামলে তেড়েফুঁড়ে ফিরে এসেছিলেন কাজের মধ্যে, সুরের জগতে। সুরের মধ্যে বেঁচে থাকার এই আকুতির জন্যই প্রিয়জনেরা তাঁকে বুঝতে দেননি, সম্প্রতি ক্যানসার ফিরে আসার কথা। পুত্র কৌশিক বলছিলেন, “বাবা নতুন গান তৈরির জন্য এমন ছটফট করতেন, আমরা চাইনি ওঁর মনে ধাক্কা লাগুক। বুঝতে দিইনি, ক্যানসারটা আবার ফিরে এসেছে।” গোড়ায় ডাক বিভাগে চাকরির পরে তিরিশের কোঠায় ঢুকে প্রথম বাংলা ছবিতে সুর করেন। তার পরে ফিরে তাকাতে হয়নি। শ্যামল মিত্র, কিশোরকুমার, মান্না দে, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে কুমার শানু, শ্রেয়া ঘোষালদের কণ্ঠেও গান হিট করিয়েছেন তিনি। হিটের এই তালিকা দীর্ঘ, একসঙ্গে ছায়াছবি ও বেসিক গানে ভরপুর। যেমন, ‘এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে’ (হিরে মানিক), ‘দরজা খুলে দেখুম যারে, করুম তারে বিয়া’ (গীত-সঙ্গীত), ‘পথ বলে দাও তুমি’ (আবিষ্কার), ‘তোমার বাড়ির সামনে দিয়ে আমার মরণযাত্রা’ (তুমি কত সুন্দর) ইত্যাদি।
প্রবীণ দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় বা সুরকার অভিজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়েরা মৃণালের মিষ্টি সুরে মুগ্ধ। দ্বিজেনবাবুর কথায়, “ওঁর সঙ্গে কাজ করেছি। মৃণালের সুরের মধ্যে একটা আকর্ষণীয় জাদু ছিল।” অভিজিত্বাবু বলছিলেন, ১৯৯৮ সালে মান্না দে-র কামব্যাক অ্যালবাম ‘মা আমার মা’র কথা। পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘আমায় একটু জায়গা দাও মায়ের মন্দিরে বসি’ গানটা প্রথমে অভিজিত্বাবুর সুর করার কথা ছিল। তাঁর কথায়, “মান্নাদা গাইবেন বলে আমি গানটায় গলার কাজের কিছু জায়গা রেখেছিলাম। পরে মৃণালের সুর শুনে বুঝতে পারি, কথার সঙ্গে মানানসই এমন দরদী সুর আর হত না! সুরের আন্তরিক সহজিয়া রাস্তায় সত্যিই মৃণালের তুলনা ছিল না।” |