প্রকল্পের নাম ‘সান’ (SUN)। পুরো নাম স্টেট ইউনিভার্সিটি নেটওয়ার্ক। পশ্চিমবঙ্গে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে এক অভিনব উদ্যোগ। উদ্দেশ্য, রাজ্য সরকারের তরফে সাহায্যপুষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পঠনপাঠন ও গবেষণায় যৌথ উদ্যোগের ব্যবস্থা করা। উদ্যোক্তা রাজ্য উচ্চশিক্ষা পর্ষদ।
ওই লক্ষ্য সামনে রেখেই গত নভেম্বরে শুরু হয়েছে ‘সান’। প্রথম পর্যায়ে আয়োজিত হচ্ছে জোড়ায় জোড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে দু’দিনের আলোচনাচক্র। অধ্যাপক-গবেষকরা বক্তৃতা ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পরিচিত হচ্ছেন একে-অন্যের কাজ সম্পর্কে। ভবিষ্যতে যৌথ উদ্যোগের প্রথম ধাপ। |
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরিতে ছাত্ররা।—নিজস্ব চিত্র। |
সাম্প্রতিকতম সেমিনার হয়েছে এ মাসের গোড়ায় বর্ধমান শহরে। ৫-৬ জুন ওখানকার সেমিনারে যোগ দিয়েছিলেন কলকাতা ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক-গবেষকরা। এ রকম এক আয়োজনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের পালিত প্রফেসর অমিতাভ রায়চৌধুরী অত্যন্ত খুশি। বললেন, “কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং উচ্চশিক্ষা পর্ষদের তরফে আমাদের বিভাগকে বলা হয়েছিল যৌথ সেমিনারের আয়োজন করতে। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম, কলকাতা ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পদার্থবিদ্যা বিভাগের যৌথ সেমিনার করব। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে অধ্যাপক-গবেষকদের উত্তরবঙ্গ যাতায়াতের টিকিটের ব্যবস্থা করা মুশকিল। তাই ভাবলাম, কাছাকাছি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ সেমিনারে যাওয়া যাক। আমি এবং আমার সতীর্থরা আমাদের গবেষণার কথা ওঁদের জানালাম। ওঁরা শুনলেন। ওঁরা কী কী কাজ করছেন, তা আমরা জানলাম। যৌথ গবেষণা তো পরের ব্যাপারআগে জানা দরকার, আমরা কে কী করছি। সেই লক্ষ্যে এ রকম সেমিনার একটি ভাল পদক্ষেপ।” গবেষণার জন্য অমিতাভ বহু দিন আমেরিকার বার্কলেতে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে ঠিক এ রকম আদান-প্রদান তিনি স্মরণ করতে পারলেন না। বর্ধমানে সেমিনারের আয়োজন হওয়ায় খুশি ওখানকার পদার্থবিদ্যা অধ্যাপক সর্বেশ্বর চৌধুরি। বললেন, “প্রাথমিক আলোচনায় জানা গেল, কোথায় কী কী কাজ হচ্ছে। এ রকম জানাজানির সূত্রে যৌথ সহযোগিতার দিকে এগোনোই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।”
‘সান’ প্রকল্পে উৎসাহী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগের তরুণ অধ্যাপক অরিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের গবেষণার অভিজ্ঞতা থেকে বললেন, “শুধু পদার্থবিজ্ঞান নয়, অন্য অনেক বিভাগেই উচ্চতর গবেষণার জন্য এখন বহুমূল্য যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হয়। অত যন্ত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে রাখা সম্ভব নয়। ‘সান’ প্রকল্প এগিয়ে চললে গবেষকদের যন্ত্রের অভাবের সমস্যা অনেকটা মিটবে। এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অবাধে ব্যবহার করতে পারবে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখা যন্ত্র।” ভবিষ্যতে তেমন সুফল পেতে যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারগুলিকে ভীষণ গুরুত্ব দিতে হবে বলে দাবি করলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগের আর এক অধ্যাপক সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। “একটি ভাল উদ্যোগ শুরু হয়েছে। কিন্তু এর সুফল পেতে হলে অধ্যাপক-গবেষকদের অবশ্যই এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হবে।” মন্তব্য করলেন তিনি।
‘সান’ প্রকল্প সফল করতে রাজ্য উচ্চশিক্ষা পর্ষদ বদ্ধপরিকর বলে দাবি করলেন পর্ষদের সহ-সচিব ফাল্গুনি মুখোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য“আমরা বিষয় নির্বাচন করে দুটি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যোগাযোগ তৈরির কাজ দিয়ে শুরু করেছি। ‘সান’ শুরুর বছর ২০১২ সালটি যেহেতু ছিল শ্রীনিবাস রামানুজনের জন্মের ১২৫ বর্ষপূর্তি, তাই ওই প্রকল্পের অধীনে প্রথম যৌথ সেমিনার হয়েছিল গণিত বিষয়ে। তা আয়োজিত হয়েছিল পুরুলিয়া শহরে। ৪-৫ জানুয়ারি ওই সেমিনারের উদ্যোক্তা ছিল বারাসত এবং সিধো-কানু বিশ্ববিদ্যালয়। দ্বিতীয় যৌথ সেমিনার অর্থনীতিতে। ৮-৯ মার্চ। উদ্যোক্তা বারাসত ও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। ৯-১০ এপ্রিল তৃতীয় যৌথ সেমিনার। বিষয়: কম্পিউটার সায়েন্স। উদ্যোক্তা বেসু এবং কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়। চতুর্থ বর্ধমানের পর পঞ্চম যৌথ উদ্যোগে অংশ নেবে উত্তরবঙ্গ ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।”
‘সান’ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে দারুণ আশাবাদী উচ্চশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক সুগত মারজিৎ। বললেন, “আমাদের পরিকল্পনায় বহু কিছুই আছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পঠন-পাঠন ও গবেষণায় যৌথ সহযোগিতা তো শুধু মাত্র একটা দিক। ভবিষ্যতে গবেষণার উৎকষের্র জন্য পুরস্কার দেওয়া হবে। এ ছাড়া থাকবে বিশেষ বক্তৃতামালা। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিখ্যাত অধ্যাপকরা স্বয়ং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বক্তৃতা দেবেন।” |