ফোন করে বিয়ে রুখল পুরুলিয়ার একরোখা মেয়ে
কটা ফোন নম্বরই বদলে দিল পুরুলিয়ার এক কিশোরীর জীবন। স্কুলে বাল্যবিবাহ নিয়ে সচেতনতামূলক সভায় বলা হয়েছিল, “আমাদের ফোন নম্বর লিখে রাখো। প্রয়োজনে ফোন কোরো।” খাতার পাতায় টুকে নেওয়া সেই নম্বর যে সত্যিই এক দিন কাজে লেগে যাবে, জয়পুর ব্লকের ওই কিশোরী বোধহয় তা ভাবেনি।
এই আষাঢ়েই বিয়ের দিন ঠিক হয়েছিল জয়পুর আরবিবি উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীর। পাত্র স্থানীয় বাটড়ি গ্রামের। সম্পন্ন কৃষক পরিবার। কিন্তু মেয়ের মন তো এখনও পড়াশোনায়। এখুনি বিয়েতে যে সে নারাজ, বাড়িতে তা জানিয়েওছিল। কিন্তু বড়রা আমলই দেননি। তখনই তার মনে পড়ে যায় ওই ফোন নম্বরের কথা।
নম্বরটা ছিল ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির জেলা সম্পাদক মধুসূদন মাহাতোর। বৃহস্পতিবার এক আত্মীয়ের মোবাইল থেকে তাঁকেই ফোন করে পুরো ঘটনা জানায় ওই কিশোরী। তিনি আবার মহকুমাশাসক (পশ্চিম) নিমাইচাঁদ হালদারকে ফোন করেন। খবর যায় জয়পুরের বিডিও এবং থানার আইসি-র কাছে।
শুক্রবার স্কুলে গিয়ে খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে, ওই ছাত্রীর বয়স মোটে পনেরো পেরিয়েছে। শনিবার ওই ছাত্রী ও তার বাবাকে জয়পুর থানায় ডাকা হয়। পুলিশকর্মীরা তার বাবাকে বোঝান, কম বয়সে বিয়ে দিয়ে আখেরে তিনি মেয়ের ক্ষতি করতে যাচ্ছিলেন। গোড়ায় গুঁইগাঁই করলেও শেষমেশ পুলিশের কথাই মেনে নেন তিনি। মুচলেকা দিয়ে জানিয়ে দেন, ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে দেবেন না।
ঘটনা হল, এই পুরুলিয়া থেকেই এক সময়ে নাবালিকা বিয়ের বিরুদ্ধে জেহাদ দানা বেঁধেছিল। জয়পুরের সুনীতা মাহাতো, পাশের ঝালদা ২ ব্লকের রেখা কালিন্দী, বাঘমুণ্ডির বীণা কালিন্দীরা যে ভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চেয়ে বিয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল, তা ইতিমধ্যে গোটা দেশের কাছে নজির হয়ে গিয়েছে। রেখাদের ‘রোল মডেল’ বলে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের ভাষায় যারা ‘সমাজ পরিবর্তনের দূত’।
যদিও এ সবের কিছুই জানত না ওই কিশোরী। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের আর পাঁচটি মেয়ের মতো বিয়ে দিয়ে তার ‘গতি’ করতে চেয়েছিলেন বাবা-মা। তার বাবার কথায়, “চাষবাস করে আমাদের সংসার চলে। তিন মেয়ের মধ্যে ওই বড়। ভাল পরিবারের পাত্র পেয়ে বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চেয়েছিলাম। তবে পুলিশকে জানিয়ে এসেছি, এখন মেয়ের বিয়ে দেব না।”
মধুসূদনবাবু বলেন, “২০১২ সালে গ্রীষ্মের ছুটি র পরে ওদের স্কুলে সভা করেছিলাম। এত দিন ও নম্বরটা যত্ন করে রেখে দিয়েছে, তাই কাজে লাগল।” কী বলছে ওই কিশোরী? তার ইচ্ছা, “আমি আরও পড়তে চাই। চাকরি করে বাবা-মাকে খুশি করতে চাই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.