বনের রাজার পায়ের ছাপই ছিল সবেধন। আর ছিল বিষ্ঠা-বিশ্লেষণ।
সুন্দরবনে বাঘের মাথা গুনতে এ যাবৎ এ দুই সাবেক পদ্ধতিতেই ভরসা রাখত বন দফতর।
জোয়ার-ভাটায় অনর্গল জলস্ফীতি আর প্রায় অগম্য বাদাবনে বাঘের বিষ্ঠা সংগ্রহও তেমন সহজ সাধ্য ছিল না।
লোকলস্কর, যত্রতত্র ঘাটে ভিড়তে পারে, মাঝারি মাপের এমন ভুটভুটি, বস্তা বোঝাই প্লাস্টার অফ প্যারিস আর পায়ের ছাপ তোলার সস্তা কাঠের ব্লক। ক্যানিং কিংবা সজনেখালির বন বিভাগের অফিস থেকে এই সরঞ্জামেই বুক বেঁধে চামটা থেকে গোসাবার বিভিন্ন দ্বীপে ভেসে পড়তেন বনকর্মীরা। মাসাধিক কাল ধরে নদীর কোলে পাঁকাল মাটিতে ‘পাগ মার্ক’ বা বাঘের থাবার ছাপ সংগ্রহ এবং তা বিশ্লেষণ করেই বাঘ সুমারি শেষ করতেন তাঁরা। বছর চারেক আগে পর্যন্ত এটাই ছিল চালু পদ্ধতি।
কিন্তু এই পুরনো পদ্ধতিতে বাঘের সঠিক পরিসংখ্যান প্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এ বার তাই দুর্ভেদ্য ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে প্রযুক্তির আমদানি হয়েছে। বিস্তীর্ণ জঙ্গলে দু’শোরও বেশি জায়গায় লুকানো ক্যামেরা বসিয়ে প্রাথমিক ভাবে তোলা হয়েছে বাঘের ছবি। তারপর তার গায়ের ডোরা দাগ বা ‘স্ট্রাইপ মার্ক’-এর পার্থক্য বিশ্লেষণ করে দক্ষিণ রায়ের সুমারি সেরে সুন্দরবনে তার সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান পেশ করেছে ডব্লুডব্লুএফ (ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড) এবং ডব্লুআইআই (ওয়াইল্ড লাইফ ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়া)। ওই দুই সংস্থার বাঘ-সুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে এখন অন্তত ১০১টি বাঘ রয়েছে। |
তিন বছর আগে বন দফতরের পরিসংখ্যান অবশ্য দাবি করেছিল সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ২৭৪টি। কিন্তু যে পদ্ধতিই অবলম্বন করা হোক না কেন, এত নিখুঁত ভাবে বাঘের মাথা গোনা কি সম্ভব? এ নিয়ে বাঘ-বিশেষজ্ঞরাই সন্দিহান। তাঁদের প্রশ্ন—
• সুন্দরবনের ব্যাঘ্রকুলের সকলেই যে ক্যামেরার সামনে এসেছে এমনটা নাও হতে পারে। তা হলে বাঘের নির্দিষ্ট সংখ্যা দাবি করার ভিত্তি কী?
• বাঘের গায়ে ডোরার বিশ্লেষণ কি সঠিক ভাবে হয়েছে?
সুন্দরবনে বাঘ গণনার এই প্রক্রিয়ায় ডব্লুডব্লুএফ-এর তরফে দায়িত্বে ছিলেন অনুরাগ দণ্ড। তিনি নিজেও এই নির্দিষ্ট সংখ্যার প্রশ্নে কিঞ্চিৎ সন্দিহান। অনুরাগ বলেন, “বিস্তীর্ণ সুন্দরবনের ১৯০টি জায়গায় ক্যামেরা বসিয়ে ৮৫০টি ছবির মধ্যে থেকে আমরা নিশ্চিত ভাবে ৮১টি বাঘকে শনাক্ত করতে পেরেছি। একই ভাবে ডব্লুআইআই ৪১১টি ছবি থেকে ২২টি বাঘের সন্ধান পেয়েছে। তবে এটাই যে সঠিক সংখ্যা তা নাও হতে পারে। সুন্দরবনে আরও কিছু বাঘ রয়ে যেতে পারে।” প্রশ্নটা এখানেই।
বাঘ বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, “সব বাঘই যে ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, এমনটা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।” অনুরাগবাবু স্বীকার করে নিচ্ছেন, “যে সংখ্যাটা তুলে ধরা হয়েছে এর বাইরে সুন্দরবনে বাঘ রয়ে যেতে পারে। ক্যামেরায় যে সব বাঘের ছবি পাওয়া গিয়েছে তা বিশ্লেষণ করেই সংখ্যাটা বলা হয়েছে।” তিনি এও স্বীকার করেন, সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের জঙ্গলের চরিত্র এক নয়। সে জন্যই বেশ কিছু জায়গায় ক্যামেরা বসানো সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া সুন্দরবনে জঙ্গলের অধিকাংশ এলাকাই জোয়ার-ভাটার সময়ে চেহারা প্রায় আদ্যন্ত বদলে ফেলে। সেই সব এলাকায় ক্যামেরা বসানোই যায়নি।
ক্যামেরায় সব বাঘ এল কিনা সেই সংশয়ের পাশাপাশি অন্য ধন্দও আছে। দেশের পরিচিত পরিবেশবিদ ইন্দ্রজিৎ সাঙ্খালার দাবি, “ক্যামেরায় ছবি তুলে কোনও পশুর সংখ্যা যাচাই করতে গেলে কয়েকটি ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। শরীরে একটা বিশেষ অংশের ছবি পর্যালোচনা করেই একটির সঙ্গে অন্যটির তফাত করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে বাঘের দেহের একটি নির্দিষ্ট অংশের ছবি, যেমন মাথা বা পিঠের ডোরা দাগ পর্যালোচনা করেই কি ওই সংখ্যাটা পাওয়া গিয়েছে?”
ডব্লুডব্লুএফ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, প্রতিটি বাঘের আড়াআড়ি বা ‘ফ্ল্যাঙ্ক’-এর ছবি নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তারপর গায়ের দাগ বিশ্লেষণ করেই গুনতি করা হয়েছে। কিন্তু সব ছবির মান খুব নির্ভর যোগ্য? ডব্লুডব্লুআইয়ের এক বিশেষজ্ঞ বলেন, “এই সংখ্যাটা যে একেবারে নির্ভুল তা দাবি করা যায় না। কারণ বহু ছবিই বেশ অস্পষ্ট।” বছর দুয়েক আগে দেশ জুড়ে সুমারি শেষে সংখ্যাটা ছিল সাকুল্যে ১,৪১১। প্রশ্নটা সে সময়েও উঠেছিল--এত নিখুঁত ভাবে বাঘের মাথা গুনল কে?
অধিকাংশ অভয়ারণ্যেই দু’বছর অন্তর বাঘ সুমারি হয়। কিন্তু তা থেকে বাঘের সঠিক সংখ্যা কখনওই যে মেলে না বনকর্তারা তা মেনে নেন।
সুন্দরবনই যে তার ব্যতিক্রম হবে, এমন গ্যারান্টি কে দেবে?
|
রাজ্য সরকারের ‘অসহিষ্ণুতা’, ‘একগুঁয়েমি’ এবং ‘নিরপেক্ষতার অভাব’কে কটাক্ষ করতে ষাঁড় নিয়ে মিছিল করল ফরওয়ার্ড ব্লকের যুব সংগঠন যুব লিগ। তবে আসল ষাঁড় মজুত থাকলেও পুলিশের আপত্তিতে তারা মাটির তৈরি ষাঁড়ের প্রতিমূর্তি নিয়ে মিছিল করে। শনিবার কলেজ স্কোয়্যার থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত ওই মিছিল হয়। |