|
|
|
|
মুণ্ডে ভোটের খরচ ফাঁস করায় ফ্যাসাদে বিজেপি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
বেফাঁস সত্য বলে ফেলে বেজায় বিপাকে পড়েছেন গোপীনাথ মুণ্ডে। অস্বস্তিতে ফেলেছেন তাঁর দলকেও।
মহারাষ্ট্রের এই বিজেপি সাংসদ বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে এক দলীয় সভায় বলে ফেলেন, ২০০৯-এর লোকসভা ভোটে ৮ কোটি টাকা খরচ করেছিলেন তিনি। কিন্তু এই সার সত্যটুকু স্বীকার করে ফেঁসে গিয়েছেন তিনি। নির্বাচন কমিশন আজ নোটিস পাঠিয়েছে তাঁকে। কারণ, ওই সময়ের নির্বাচনী বিধি মোতাবেক মহারাষ্ট্রের মতো বড় রাজ্যে এক জন প্রার্থী সর্বোচ্চ ২৫ লক্ষ টাকা খরচ করতে পারতেন লোকসভা ভোটে। ওই সময় কমিশনকে দেওয়া হিসেবে মুণ্ডে জানান খরচ হয়েছে ১৯ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা। এখন অন্য কথা বলায় মুণ্ডেকে বিধি ভাঙার ব্যাখ্যা দিতে হবে ২০ দিনের মধ্যে। তবে শুধু এই আইনি সমস্যাতেই আটকে নেই প্রসঙ্গটি। রাজনৈতিক ভাবেও বিষয়টি ফ্যাসাদে ফেলেছে বিজেপি-কে। কংগ্রেসের দুর্নীতি নিয়ে তারা বরাবরই সরব। এখন তাদের দুর্নীতি নিয়েই পাল্টা আক্রমণের সুযোগ পেয়েছে কংগ্রেস। আর এই চাপানউতোর নতুন করে উস্কে দিয়েছে ভোটে টাকার খেলা নিয়ে পুরনো বিতর্কটি।
গোপীনাথ মুণ্ডে |
বর্তমান নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী মহারাষ্ট্রের মতো বড় রাজ্যে লোকসভা ভোটের প্রার্থী সর্বোচ্চ ৪০ লক্ষ টাকা ও বিধানসভা ভোটের প্রার্থী সর্বোচ্চ ১৬ লক্ষ টাকা খরচ করচে পারেন। মণিপুর-মিজোরামের মতো ছোট রাজ্যে সীমাটা আরও কম। ২০১১-র ১১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করার আগে পর্যন্ত লোকসভা ভোটের প্রার্থী সর্বোচ্চ ২৫ লক্ষ টাকা ও বিধানসভা ভোটের প্রার্থী সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা খরচ করতে পারতেন। কিন্তু ভোটে প্রচারের খরচ-খরচা বেড়ে গিয়েছে এই যুক্তিতেই দু’বছর আগে ওই সীমা বাড়ানো হয়। কিন্তু মুণ্ডের সত্যকথনে প্রশ্নটি উঠে এসেছে তা হল, আদৌ কি আইনি উর্ধ্বসীমায় বাঁধা গিয়েছে ভোটের আসল খরচকে? মুণ্ডের ওই স্বীকারোক্তি এই প্রশ্নও উস্কে দিয়েছে যে, সত্যিই কি কোনও প্রার্থীর পক্ষে ওই পরিমাণ অর্থে লোকসভা বা বিধানসভা ভোটের প্রচার সেরে ফেলা সম্ভব?
মুম্বইয়ের ওই দলীয় সভায় মুণ্ডে বলেছেন, তিনি যখন ১৯৮০ সালে প্রথম বিধানসভার প্রার্থী হন তখন প্রচারের জন্য খরচ হয়েছিল মাত্র ২৯ হাজার টাকা। অথচ, ২০০৯-এর ভোটে খরচ করেছেন প্রায় ৮ কোটি টাকা। ওই বেফাঁস মন্তব্যের জেরে অস্বস্তিতে পড়ে বিজেপি নেতৃত্ব তাঁদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন মুণ্ডেকে। দলের বক্তব্য, মাত্র ৪০ লক্ষ টাকায় যে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার করা সম্ভব নয় তা সব দলই জানে। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব যেখানে ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে কালো টাকার প্রশ্নে সরব, সেখানে লোকসভা নির্বাচনে ওই বিপুল অর্থ খরচের কথা জনসমক্ষে স্বীকার করে দলকে বেকায়দায় ফেলার কী প্রয়োজন ছিল মুণ্ডের। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের নিয়ম উপেক্ষা করার কথা স্বীকার করে মুণ্ডে অযথা বিরোধী দলের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন বলেই মনে করছে দল।
আর ওই সুযোগ থেকেই যথাসম্ভব রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কংগ্রেস শিবির। মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস সাংসদ সঞ্জয় নিরুপম দাবি করেছেন, “নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ না মানায় তাঁর লোকসভা সদস্য পদ বাতিল করা হোক।” এনডিএ থেকে সদ্য বিচ্ছেদ হওয়া আর এক শরিক জেডিইউয়ের সাংসদ শিবানন্দ তিওয়ারিও আজ মুণ্ডের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ করেন। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব মুণ্ডের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হলেও প্রকাশ্যে আজ দলের মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন দাবি করেন, “নির্বাচনে প্রচার ছাড়াও আরও যে অন্যান্য খাতে খরচ থাকে সে বিষয়ে বলতে গিয়ে মুণ্ডে ওই বিপুল পরিমাণ টাকার কথা বলেছেন। আমাদের দল নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মেনেই কাজ করে।”
তবে একই সঙ্গে বিজেপি মুখপাত্র এ-ও বলেন যে, “ওই পরিমাণে অর্থে যে লোকসভা ভোটের প্রচার সম্ভব নয় সে বিষয়ে দলগুলি বহু দিন ধরেই আপত্তি জানিয়ে আসছে। প্রকাশ্যে মন্তব্য করে সেই বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন মুণ্ডে।” কমিশনও জানে, ওই পরিমাণ অর্থে বড় দলের প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তবু কমিশনের দাবি, নির্বাচনকে স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত ও কালো টাকার ব্যবহার রুখতে ও সব প্রার্থী যাতে নির্বাচনে সমান সুবিধা পান, সে কারণেই খরচের এই সীমারেখা। কমিশনের এক কর্তার বক্তব্য, “বড় দলগুলির প্রার্থীদের অর্থের অভাব নেই। কিন্তু ছোট দলের বা নির্দল প্রার্থীদের পক্ষে ওই পরিমাণ অর্থ খরচ সম্ভব নয়। তাই সমতা বজায় রাখতেই নির্দিষ্ট অঙ্কের বেশি অর্থ খরচে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কমিশনের।” |
|
|
|
|
|