“সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বসে থেকে থেকে আমি ক্লান্ত। দয়া করে আমার বেতন ফেরত নিন।” রাজ্য সরকারের কাছে এমনই আর্জি স্বাস্থ্য দফতরের এক বিশেষ সচিবের।
কাগজে-কলমে তিনি রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলির পরিকাঠামো নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছেন। অথচ, তাঁর ঘরে কোনও ফাইল আসে না। কোনও বৈঠকেও ডাকা হয় না। স্বাস্থ্য ভবনে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজর অধ্যক্ষেরা জড়ো হন পরিকল্পনা সংক্রান্ত নানা আলোচনায়। কিন্তু সেখানেও তাঁর কোনও ভূমিকা নেই। একটি টেবিল আর তিনটি চেয়ার নিয়ে প্রতি দিন আট ঘণ্টা স্বাস্থ্য ভবনে তাঁর সময় কাটে।
কাজ না করে বসে থেকে থেকে ক্লান্ত, হতাশ ওই বিশেষ সচিব প্রদীপ ঘোষ এ বার স্বাস্থ্য-কর্তাদের তাঁর বেতন ফেরত নেওয়ার আবেদন জানালেন। তাঁর কথায়, “দফতরের অনেক বাড়তি টাকা থাকতে পারে। সেই টাকা কী ভাবে খরচ হবে, তা দফতরের কর্তাদের মাথা ব্যথা, তার দায় আমি নেব কেন? আমি নীতি মেনে চলি। শুধু বসে থাকার জন্য মাসান্তে মোটা বেতন নিতে পারব না।”
স্বাস্থ্য-কর্তারা জানান, বিভিন্ন কারণে ওই বিশেষ সচিবকে নিয়ে তাঁরা তিতিবিরক্ত। এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “ওঁর আচরণেই অন্যেরা উত্ত্যক্ত হন। এ বার আরও উত্ত্যক্ত করতেই তিনি বেতন ফেরতের পন্থা বেছেছেন।”
স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “ওঁকে নিয়ে বহু দিন ধরেই সমস্যা চলছে। উনি আইনের পথে যাচ্ছেন, সেটা জেনেছি। আমরাও আইনের ভাষাতেই জবাব দেব।” |
প্রদীপবাবু এর আগে ছিলেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ। পাঁচ মাস আগে ছুটিতে পুরী বেড়াতে যান। অভিযোগ, ফিরে এসে কাজে যোগ দিতে গিয়ে দেখেন, তাঁর চেয়ারে অন্য এক জন বসে রয়েছেন। কী ব্যাপার? স্বাস্থ্য ভবন থেকে জানানো হয়, অধ্যক্ষ পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই পদে নিযুক্ত হয়েছেন অন্য এক জন। প্রদীপবাবুকে বদলি করা হয়েছে স্বাস্থ্য ভবনে, মেডিক্যাল কলেজগুলির পরিকাঠামো সংক্রান্ত পরিকল্পনা বিভাগের অধিকর্তা পদে। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, ওই পদটি আগে ছিলই না। প্রদীপবাবুকে দিয়েই সেটির সূচনা।
প্রদীপবাবুর কথায়, “রাজ্যে মেডিক্যাল শিক্ষার উপরে এত জোর দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। মেডিক্যাল কলেজগুলিতে আসন বাড়ছে। মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই) ঘন ঘন এ রাজ্যে পরিদর্শনে আসছে। এই পরিস্থিতিতে পরিকাঠামো নির্মাণের পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কথা। কিন্তু এ রাজ্যে সেটাই প্রহসন হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমার ঘরের সঙ্গে কোনও শৌচাগারও নেই। এক তলায় সাধারণ শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়। কর্তাদের কেউ আমার সঙ্গে ভাল করে কথাও বলেন না। এ ভাবে দিনের পর দিন থাকা যায় না কি?”
প্রশ্ন হল, তা হলে পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ কি থমকে রয়েছে? স্বাস্থ্য-কর্তারা জানান, তা নয়। দফতরের বিভিন্ন শাখার আধিকারিকেরা আগে যেমন ওই কাজ ভাগ করে সামলাতেন, এখনও সে ভাবেই চলছে। তা হলে ওই বিশেষ পদটি সৃষ্টির অর্থ কী? তার উত্তর কারও কাছেই পাওয়া যায়নি। |