উত্তরাখণ্ড থেকে ফিরলেন ২৭
বিপদের চক্রব্যূহ থেকে স্বস্তির ফেরা
ঙ্গে থাকা খাবার শেষ। আশ্রমের লঙ্গরখানায় লাইন দিয়ে খাবার জোগাড় হলেও, সেখানকার রসদও শেষ হয়ে আসছিল। পানীয় জলেরও আকাল। অথচ বিপন্ন দেবভূমি থেকে বের হওয়ার রাস্তা নেই। ধসে বন্ধ রাস্তা। ঘরে নেই বৈদ্যুতিক আলো। বাইরে নাগাড়ে বৃষ্টি। পদে পদে আতঙ্ক।
বিপদের চক্রব্যূহের মধ্যে ১০ দিন আটকে থেকে বেঁচে ফেরার আশা অনেকেই ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেই সময় দেবদূতের মতো কয়েকজন সেনাকর্মী এসে জানিয়েছিলেন, চপারে চেপে ধসের ওপারে নিয়ে যাবেন। শুনে হাঁফ ছেড়েছিলেন সোনামুখী ও কোতুলপুরের ২৭ জন পুণ্যার্থী। কিন্তু তারপরেও বাড়ি ফেরা সহজ হয়নি।
বৃষ্টি আর ধসে বিপর্যস্ত বদ্রীনাথ থেকে বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি ফেরেন ওই ২৭ জন। কিন্তু শুক্রবার নিজেদের বাড়িতেও তাঁদের চোখে-মুখে ফুটে উঠছিল সেই সব আতঙ্কের মুর্হূত।
মা ও দুই মাসিকে নিয়ে ৫ জুন চারধাম রওনা দিয়েছিলেন সোনামুখীর লালবাজারের যুবক বিজয় ঘোষাল। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বিজয় জানান, গঙ্গোত্রী-যমুনোত্রী ঘুরে ১৪ জুন তাঁরা কেদারে পৌঁছন। পরের দিন তাঁরা বদ্রীনাথে যান। সে দিন থেকেই নামে সেই ভয়াবহ বৃষ্টি। ফুলে ওঠে অলকানন্দা। বিজয়দের দলের ২৭ জন হোটেল বন্দি হয়ে পড়েন। সঙ্গে করে তাঁরা রান্নার চাল, ডাল ইত্যাদি নিয়ে গিয়েছিলেন।
বাড়িতে বিজয় ঘোষাল ও তাঁর মা লক্ষ্মীদেবী। —নিজস্ব চিত্র।
প্রথমদিকে খাবারের সমস্যা না হলেও প্রকৃতি সদয় না হওয়ায় একে একে নতুন নতুন সমস্যা তৈরি হতে শুরু করে। বিজয়ের কথায়, “বিদ্যুৎ না থাকায় রাতে মোমবাতি জ্বালাতাম। কিন্তু তা আর কত দিন চলবে? হোটেলে খাবারের জলও ফুরিয়ে এল। বাজার থেকে জল কিনতে গিয়ে দেখি রাতারাতি ১০ টাকার জলের বোতল ২৫ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টির বিরাম নেই।”
এক দিন খাবার ফুরিয়ে গেল। পাশের একটি আশ্রমে লঙ্গরখানা খোলা হয়েছে শুনে তাঁরা সেখানে যান। কিন্তু সেখানে খাবার পাওয়া সহজ ছিল না। ওঁদের কথায়, “অন্তত হাজার তিনেক লোক আমাদের মতোই খাবারের জন্য সেখানে জড়ো হতেন। মনে হত সারা ভারতবর্ষ যেন ওই দেবভূমিতে আটকে পড়েছেন। ওই আশ্রম থেকেই মেপে জল দেওয়া হত। বাঁচিয়ে খেতে হত।” তাঁরা জানান, বিপদের মধ্যে অনেক রকমের গুজব শোনা যাচ্ছিল। তাতে আতঙ্ক বাড়ছিল বই কমেনি। প্রতিদিন তাঁরা অপেক্ষা করতেন, কবে উদ্ধারকারী দল এসে পৌঁছাবে। এক দিন হঠাৎ কিছু সেনাকর্মী এসে খবর দেন তাঁদের নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকার চপার পাঠাচ্ছে।
সোনামুখীর পুরপ্রধান কুশল বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুই জেঠতুতো ভাই তুষার বন্দ্যোপাধ্যায় ও মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায় ওই দলে ছিলেন। তুষারবাবু বলেন, “সবাই মিলে হেলিপ্যাডে গিয়ে দেখি লম্বা লাইন পড়েছে। চপারে ৮ জনের বেশি লোক তুলবে না বলেছিল। খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। তিন দিন হেলিপ্যাডের মাটি কামড়ে পড়েছিলাম। মঙ্গলবার শেষে আমাদের চপারে ওঠার সৌভাগ্য হয়।” বদ্রীনাথ থেকে চপারে তাঁদের তুলে আনা হয় গোচরে। বিজয়ের মা লক্ষ্মী ঘোষাল ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। গোচরের মিলিটারি ক্যাম্পে মায়ের চিকিৎসা করাতে বিজয় দু’দিন থেকে যান।
দলের কয়েকজন আলাদা গাড়িতে ফেরার জন্য রওনা দেন। কিন্তু রুদ্রপ্রয়াগে ধসে রাস্তা আটকে যাওয়ায় তাঁরা ফিরে আসেন। সেখান থেকে দলের সবাই হৃষিকেশ, হরিদ্বার হয়ে গাড়িতে দেহরাদূন ফেরেন। সেখান থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ চার্টার্ড বিমানে তাঁরা বৃহস্পতিবার কলকাতায় ফেরেন। রাজ্য সরকারের ব্যবস্থাপনায় একটি বাস তাঁদের বাড়িতে ছেড়ে যান।
এখনও ধকল সামলাতে পারেননি দলের অনেকেই। সোনামুখীর রথতলার বাসিন্দা সুনীল সেনের তত্ত্বাবধানে এলাকার ১৪ জন তীর্থ ভ্রমণে গিয়েছিলেন। সুনীলবাবুর ছেলে তরুণ সেন বলেন, “বাবা ওখানেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এখনও সেরে ওঠেননি।” ওই দুর্যোগ থেকে সকলকে নিয়ে ফিরে আসায় আমরা স্বস্তিতে।” কিন্তু স্বস্তি ফেরেনি বাঁকুড়া শহরের রবীন্দ্র সরণির বিশ্বাসবাড়িতে। গৃহকর্তা তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি ব্রজবাসী বিশ্বাস ও তাঁর স্ত্রী মণিকা বিশ্বাস উত্তরাখণ্ডে তীর্থদর্শনে গিয়েছিলেন। তাঁদের কোনও খবর এখনও মেলেনি। ব্রজবাবুর ছেলে পদ্মনাভ বলেন,, “১১ জুন মা ও বাবা চারধামের উদ্দেশ্যে বের হয়। ১৬ জুন বাবা ফোনে জানিয়েছিল, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের আশ্রমে জল ঢুকতে থাকায় তারা কেদাননাথ মন্দিরে আশ্রয় নিতে যাচ্ছে। তারপর থেকে আর বাবা-মা’র সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।” সেনাপতির জন্য উদ্বেগে রয়েছেন তাঁর দলের কর্মীরাও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.