৩৬/১ সাউথ এন্ড পার্ক। কলকাতা ২৯।
কলকাতায় এই ঠিকানাতেই ছিল শচীন দেব বর্মনের বাড়ি। রাহুলদেবের স্কুলজীবন কেটেছে এখানেই। তাঁর মা মীরা দেববর্মন মুম্বই যাওয়ার আগে থাকতেন এই বাড়িতেই।
পঞ্চাননতলা থেকে ঢাকুরিয়া ব্রিজের পাশ দিয়ে একটু এগোলেই ডান দিকে সাউথ এন্ড পার্কের চওড়া গলি। গলির মুখ থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দুটো যমজ বাড়ি। তার একটায় থাকতেন দেববর্মণ পরিবার। অন্যটায় নির্মল দাশগুপ্তের পরিবার। নির্মলবাবু ছিলেন শচীনদেবের বাল্যবন্ধু। যদিও সম্পর্কে শ্বশুরমশাই। তাঁর দিদির মেয়ে মীরার সঙ্গে শচীনদেবের আলাপ নির্মলবাবুর সূত্রেই। নির্মলবাবু ছিলেন মীরার মণিমামা। রাহুল ডাকতেন মণিদাদু। |
দিন কতক আগে সাউথ এন্ড পার্কে গিয়ে দেখা গেল, দেববর্মন পরিবারের সেই পুরনো বাড়ি এখন প্রায় ভগ্নস্তূপের চেহারা নিয়েছে। সামনের দিকটায় হামলে পড়েছে জংলা গাছ। এধারে ওধারে দেওয়াল বেয়ে উঠেছে বট-অশ্বত্থ। বড় বড় ফাটল চারদিকে। নির্মলবাবু আজ আর বেঁচে নেই। কিন্তু ওঁর বাড়িটা আছে। দিব্যি আছে।
নির্মলবাবুর বাড়ির সূত্রেই শোনা গেল, রাহুলদেব মারা যাওয়ার বছর কয়েক আগে সাউথএন্ড পার্কের বাড়িটি বিক্রি করে দেন। কেনেন অবাঙালি এক ভদ্রমহিলা। তিনি এখানে বেশি দিন থাকেননি। এখন একজন কেয়ারটেকার বাড়ির দেখভালের দায়িত্বে।
এ পাড়াতে আসার আগে হিন্দুস্থান রোডে ভাড়াবাড়িতে থাকতেন শচীনদেব আর তাঁর পরিবার। সঙ্গে থাকতেন নির্মলবাবু আর তাঁর দুই বোনের পরিবার।
১৯৪৪ সালে জমি কিনে বাড়ি দুটি তৈরি শুরু করেন নির্মলবাবু আর শচীনদেব। দুটি পরিবারই এখানে চলে আসেন ১৯৪৮য়ে। বাড়ির দোতলায় বারান্দা লাগোয়া দুটো ঘর। দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের ঘরটিতে থাকতেন মীরাদেবী আর শচীনকর্তা। আর দক্ষিণ-পূর্ব দিকেরটায় থাকতেন রাহুলদেব। রাহুলদেব তখন পঞ্চম নয়, বাড়ির আদরের টুবলু। টুবলু বাঁশি বাজায়। ব্রজেন বিশ্বাসের কাছে তবলা শেখে, উস্তাদ আলাউদ্দিন খানের কাছে সরোদের তালিম নেয়। গান গায়। মাউথ অর্গান বাজায় আর চুটিয়ে দুষ্টুমি করে বেড়ায় পাড়াময়। সঙ্গী ছ’বছরের ছোট, অথচ সম্পর্কে মামা রানা (অভিজিৎ দাশগুপ্ত)। নিমর্লবাবুর পুত্র। |
মীরাকে নিয়ে শচীনকর্তা মুম্বই চলে যাওয়ার পরও রাহুলদেব আর তাঁর দিদিমা থাকতেন এই সাউথএন্ড পার্কেই। এখান থেকেই রাহুলদেবের প্রথমে বালিগঞ্জ গভর্মেন্ট হাই স্কুল, পরে তীর্থপতি ইনস্টিটিউশনে পড়তে যাওয়া। অ্যান্ডারসন ক্লাবে সাঁতার কাটা, ওয়াটার ব্যালে শেখা, ব্যাডমিন্টন খেলতে যাওয়া, স্কেটিং করতে করতে পাড়া বেপাড়া তোলপাড় করা, দিনে দুপুরে এয়ার গান নিয়ে অভিযানে বেরিয়ে গ্যাসবাতির ম্যান্টন ফাটানো।
স্কুলবেলার শেষে টুবলু মুম্বই চলে যায় ওঁর বাবা-মায়ের কাছে। কিন্তু কলকাতায় এলে এ বাড়িই ছিল রাহুলদেবের ঠিকানা।
দেববর্মন পরিবারের অসংখ্য স্মৃতি বয়ে আজ কঙ্কালসার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৩৬/১ সাউথ এন্ড পার্ক। |