এসপি’র সঙ্গে তর্কে জড়ালেন বিধায়ক
জেলা জুড়ে বেড়েছে নারী নির্যাতনের ঘটনা। কিন্তু পুলিশ অধিকাংশ ঘটনা লঘু করে দেখতে চাইছে। এমনই বেশ কিছু অভিযোগে শুক্রবার মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীরের কাছে স্মারকলিপি জমা দিল জেলা কংগ্রেস।
তবে জেলা পুলিশের, বিশেষত পুলিশ সুপারের উপরে ক্ষোভ উগরে দিতে ওই সভায় হাজির ছিলেন খোরজুনা ও ফুলশিখর গ্রামের কয়েকশো মহিলা। তা নিয়ে যে সকাল থেকেই তঠস্থ ছিলেন তাঁরা, এসপি অফিস কার্যত দুর্গে পরিণত করে তারই প্রমাণ রাখল জেলা পুলিশ। শুধু জেলা থেকেই নয়, এসপি’র ‘নিরাপত্তায়’ পড়শি জেলা থেকেও নিয়ে আনা হয়েছিল পুলিশ। নামানো হয়েছিল র্যাফও। তবে স্মারকলিপি দেওয়ার কাজ নির্বিঘ্নেই মেটে। নওদার কংগ্রেস বিধায়ক আবু তাহেরের সঙ্গে পুলিশ সুপারের সামান্য বিতণ্ডা বাধে।
মুর্শিদাবাদে গত ১৩ দিনে চারটি ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। তিনটি ক্ষেত্রে ধর্ষণের পরে খুন করা হয়েছে। গত রবিবার বড়ঞার খোরজুনা গ্রামে এক মহিলার দেহ উদ্ধারের পরে প্রকাশ দাস নামে গ্রামের এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ ওঠে ওই মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার আগেই পুলিশ সুপার রীতিমতো ‘ঘোষণা’ করে দিয়েছিলেন, ধর্ষণ নয়, ওই মহিলা স্বেচ্ছায় ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। একই ভাবে এর আগে গত ১১ জুন রানিতলার সোনাডাঙায় কিশোরী খুনের ঘটনার পরেও ধর্ষণের সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেন, পুলিশ সুপার। গত ১৯ জুন ভরতপুর থানার সালারের ঘটনাও ধর্ষণ বলতে আপত্তি ছিল তাঁর।
খোরজুনার ঘটনায় জেলা পুলিশ সুপার জানান, ধৃত যুবক জেরায় জানিয়েছে, ওই মহিলার সঙ্গে তার ‘পুরনো সম্পর্ক’ ছিল। ওই মহিলা স্বেচ্ছায় ওই যুবকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল বলেও দাবি করেন তিনি। পুলিশ সুপারের ওই বক্তব্যে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন খোরজুনার বাসিন্দারা। খোরজুনার পাশেই ফুলশিখর গ্রামে ওই মহিলার বাপের বাড়ি। ‘গাঁয়ের মেয়ের’ চরিত্র নিয়ে মন্তব্য করার অভিযোগে পুলিশ সুপারকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে মহিলারা গত কয়েক দিন ধরেই গ্রামে মিছিল করছেন। এ দিন স্মারকলিপি দিতে তাই তাঁরাও এসেছিলেন।
জেলা পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে নিরাপত্তা বেষ্টণী। নিজস্ব চিত্র।
এদিন ক্যান্টনমেন্ট রোডে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে কংগ্রেস আয়োজন করেছিল ধিক্কার সভার। সেখানে হাজির ছিলেন ফুলশিখর ও খোরজুনার কয়েকশো বাসিন্দা। ফুলশিখরের বাসিন্দা জ্যোত্‌স্না বাগদি, আশাপূর্ণা দাসেরা জানান, তাঁরা কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন। কিন্তু কোনও প্রমাণ ছাড়াই এসপির ‘কুরুচিকর’ ওই মন্তব্যের প্রতিবাদ জানাতেই তাঁরা এসেছেন। দিনান্তে ফিরে যাওয়ার আগে তাঁরা বলেন, “এসপি আমাদের সঙ্গে দেখাও করলেন না। পুলিশ দিয়ে গোটা এলাকা ঘিরে রাখলেন।” ওই মহিলার দাদা অবশ্য বলেন, “বোনের চরিত্র নিয়ে কটাক্ষ করায় এ দিন এসপি ক্ষমা চাইবেন বলে অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু নিরাশ হলাম।”
এদিন বিকেলে পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি জমা দিতে যান কংগ্রেসের ন-জন বিধায়ক। স্মারকলিপি জমা দেওয়ার সময়ে নওদার বিধায়ক কংগ্রেসের আবু তাহেরের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন এসপি। আবু তাহের ‘খোরজুনার ঘটনায় এক মাসের মধ্যে চার্জশিট জমা দেওয়ার দাবি তুলতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন পুলিশ সুপার। তাঁকে বলেন, “আপনার কাছ থেকে তদন্ত শিখতে হবে?”
পুলিশ সুপার খোরজুনার ঘটনা নিয়ে কংগ্রেস জলঘোলা করছে বলেও অভিযোগ করেন। বিধায়করা তার প্রতিবাদ করেন। শেষে পুলিশ সুপার বলেন, “খোরজুনায় ঘটনায় ময়নাতদন্তের পরে ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। ফরেন্সিক রিপোর্ট আসার পরেই চার্জশিট জমা দেব।”
তার আগে কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকার বলেন, “বিষয়টি যদি আমাদের সাজানো ঘটনা হয়, তাহলে আপনি তদন্তে খোরজুনা চলুন।” এসপি বলেন, “আপনারা এবং সংবাদমাধ্যম যে ভাবে গ্রামবাসীদের খেপিয়ে তুলেছে, তাতে গ্রামে যাওয়ার পরিস্থিতি নেই।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.