সম্পাদকীয় ২...
বৃথা আস্ফালন
ত দিন ব্রিটিশ ভূমিতে ভারতীয়দের ‘পাকি’ বলিয়া গালি দিলে তাঁহারা রাগিয়া বলিতেন যে প্রকৃতপক্ষে ‘পাকি’ অর্থ পাকিস্তানি, এবং ভারতীয় ও পাকিস্তানির মধ্যে সাদৃশ্য সাপ ও গোসাপের মতোই। এ দিকে এ বার স্বয়ং ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় ও পাকিস্তানিদের (এবং বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নাইজিরিয়া ও ঘানাকে) একই বন্ধনীতে ফেলিয়া আইন প্রণয়ন করিতে প্রস্তুত হইয়াছে, দাবি করিতেছে এই দেশগুলির নাগরিকরা সর্বাধিক বেশি অভিবাসন আইনকে কলা দেখাইয়া ইউ কে-র মাটিতে গাঁড়িয়া বসিয়া যান, তাই প্রস্তাব আসিতেছে যে এ বার হইতে এই দেশগুলির ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি ভিসা প্রদানের কড়াকড়ি বিশেষ ভাবে বাড়ানো হউক, এবং কড়াকড়ির অন্যতম পথ হউক ভিসার জন্য তিন হাজার পাউন্ডের বন্ড স্বাক্ষর। বিলাতের পার্লামেন্টে প্রস্তাবটি উঠিবামাত্র ভারতে ক্ষোভবহ্নি জ্বলিয়া উঠিয়াছে। জাতীয়তাবাদের অভিমান ফুঁসিয়া উঠিতেছে। কিন্তু অভিমান দিয়া চলিবে না, কূটনীতি কিংবা অর্থনীতির ক্ষেত্রে অভিমানের মূল্য শূন্য। তাহার ঊর্ধ্বে ভারত কী অবস্থান লইবে, তাহাই আসল প্রশ্ন।
প্রস্তাবটি অপমানজনক সন্দেহ নাই। ভারত হইতে যে বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী, পর্যটক, ব্যবসায়ী প্রতি বত্‌সর ইংলন্ড-অভিমুখী হন, তাঁহাদের অনেকেই সে অপমান কিঞ্চিদধিক অনুভব করিবেন। ইহাও সত্য যে উভয় দেশের ব্যবসাবাণিজ্যে ব্রিটেনের আর্থিক ও পারমার্থিক লাভও কম নহে। তবে ব্রিটেনের দিক হইতে ভাবিতে বসিলে সন্দেহ নাই যে, অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি যথেষ্ট গুরুতর। সে দিক দিয়া সিদ্ধান্তটিকে ঠিক জাতিবিদ্বেষমূলক বলা চলে না। তবে, পরিসংখ্যান-হারের দিক দিয়া ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের অভিবাসন আইন-অমান্য এক গোত্রেই পড়ে কি না, সে বিচারও জরুরি। ব্রিটেনে ইতিমধ্যেই বিতর্কের ঝড় উঠিয়াছে, বোঝা যায় যে সেই বিচারের অনুপুঙ্খ তথ্যাদি না দর্শাইলে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এই বিল পাশ করিতে পারিবে না। তবে মাঝখান হইতে ভারতের অনর্থক জাতীয়তাবাদী আস্ফালন দেখাইয়া লাভ কী? একটি আত্মসম্মান-বিশিষ্ট দেশের পক্ষে এই পরিস্থিতিতে দরকার শীতল যুক্তির বিচার, অভিমান/আস্ফালন নহে। উপলব্ধি দরকার যে, জনসংখ্যার এই বিস্ফোরণ ঘটিতে থাকিলে এই অপমান অবশ্যম্ভাবী। ভারত বরং এটুকু দাবি করিতে পারে যে, গোত্রভুক্ত অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতও ‘হাই-রিস্ক’ গোত্রে পড়িবার উপযুক্ত কি না জানিবার লক্ষ্যে ব্রিটেনের অভিবাসন-আইন অমান্যকারী ভারতীয়দের সংখ্যাটি জানানো হউক। হট্টগোল পাকাইলে সম্মান বাড়িবে না। এমনিতেই তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের বৃহত্‌ দেশগুলির মধ্যে সর্বদা এক প্রকার উত্‌কণ্ঠা কাজ করে, এই বুঝি ক্ষুদ্র দেশগুলির সহিত তাহাকেও অকিঞ্চিত্‌কর পর্যায়ে ফেলিয়া দেওয়া হইল! সেই উত্‌কণ্ঠা বা অভিমানে কাজ হইবে না। সমস্যাটি স্বীকার করিয়া সমাধানের চেষ্টা করা দরকার। আস্ফালনের বদলে একটু বিবেচনা ও সহযোগিতা দরকার, তবেই কোনও দিন এই ‘অবাঞ্ছিত’ গোত্র হইতে উত্তরণ সম্ভব হইতে পারে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.