পেটের রোগ ছড়াল দুবরাজপুরের কান্তোর গ্রামে। সরকারি হিসেবে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪০। কিন্তু সেই সংখ্যা অনেক বেশি বলে দাবি বাসিন্দাদের। আক্রান্তদের অনেকেই সিউড়ি সদর এবং দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সিউড়ি সদর মহকুমাশাসক চন্দ্রনাথ রায়চৌধুরী বলেন, “যতটা ভয়াবহ বলে মনে হয়েছিল, ততটা নয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।”
এ দিকে, গ্রামের পুকুরের জল দূষিত হাওয়ার কারণে এই রোগ ছড়িয়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীরা। বুধবার রাতেই এলাকায় গিয়েছিলেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা ও চিকিৎসকদের একটি দল। বৃহস্পতিবার ফের ওই গ্রামে মেডিক্যাল টিম যায় এসিএমওএইচ (সিউড়ি সদর) অনিমেষ দত্তের নেতৃত্বে। অনিমেষবাবু জানান, খুব সম্ভবত পুকুরের জল দূষিত হওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ছে। গ্রামের পুকুরগুলিতে ওষুধ দিয়ে দূষণ মুক্ত করার জন্য জেলা থেকে আরও একটি দল আসছে। ওষুধপত্র দেওয়া ছাড়াও সচেতনতা বাড়নোর চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, দিন কয়েক ধরে পেটের রোগে আক্রান্ত হচ্ছিলেন দুবরাজপুরের যশপুর পঞ্চায়েতের মসজিদ পাড়ার বাসিন্দাদের কেউ কেউ। ইতিমধ্যেই দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হন। মঙ্গলবার থেকে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। বুধবার সংখ্যাটা বাড়ে। রোগ ছড়িয়ে পড়ে পূর্বপাড়া, মাঝপাড়ায়ও। |
বৃহস্পতিবার সকালে দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি থাকা সহিমা বিবি, আনারা বিবি, কাজী আসরাফুল, তালেব মোমিনেরা বললেন, “আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতেই কেউ না কেউ এই অসুখে আক্রান্ত। কারও কারও বাড়ির প্রত্যেক সদস্যই হাসপাতালে ভর্তি। তবে চিকিৎসা কারানোর পর কিছুটা সুস্থ।” আবার এ দিন সকাল সাড়ে নটা নাগাদ দেখা গেল, বেশ কিছু আক্রান্তকে ওই গ্রাম থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন গ্রামবাসী ও পরিবারের সদস্যরা। তবে সমস্যা একটাই গ্রাম থেকে ৭-৯ কিলোমিটার দূরে হাসপাতালে নিয়ে আসার গাড়ি পাওয়া। কারণ, গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে প্রায় কিছুই নেই। ভরসা মোটরবাইক বা সাইকেল। কিছু রোগীকে বাইকের পেছনে বয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হলেও কেউ কেউ অত্যন্ত নিস্তেজ হয়ে পড়ায় সেটা সম্ভব হচ্ছিল না। আবার বাড়িতে পুরুষ না থাকায় এ দিন সকাল থেকে পেটের রোগে আক্রান্ত হয়েও চিকিৎসা করাতে দুবরাজপুরে আসতে পারছিল না নূরমিনা, তুহিনা এবং রিম্পা খাতুনরা। বাড়ির বাইরে বসে ছিল যশপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই তিন ছাত্রী। তার একটু পরে গ্রামে চিকিৎসকদের একটি দল আসায় খানিকটা স্বস্তি পেল তারা।
বাসিন্দাদেরও দাবি, পুকুরের জল থেকেই রোগ ছড়াচ্ছে। কেন না কাপড় কাচা, বাসন মাজা, স্নান যে পুকুরে করেন সেই পুকুরেই মুরগি খামারের বর্জ্য ফেলা হয় বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ বাড়িতে শৌচাগার না বসানোর জন্যও জল দূষিত হয়ে থাকতে পারে। গ্রামের ‘কুড়ি’ পুকুরের পার্শ্ববর্তী ঘরের বাসিন্দারাই প্রথম এই রোগে আক্রান্ত হন। সকালে মেডিক্যাল ক্যাম্প থেকে ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি রোগ সারাতে জল ফুটিয়ে খাওয়ার পরমর্শই দিচ্ছিলেন চিকিৎসকেরা। |