মাওবাদীদের জনবিচ্ছিন্ন করার ডাক দিলেন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। দিলেন সেই বলরামপুরে, যা পুরুলিয়ায় মাওবাদীদের আঁতুড়ঘর হিসাবেই পরিচিত। হিংসা-রক্তপাতকে দূরে ঠেলে জঙ্গলমহলে শান্তি চিরস্থায়ী করার আহ্বানও জানালেন সাংসদ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বলরামপুর বাসস্ট্যান্ডের ছোটমাঠের ভাষণে শুভেন্দু বার বার মনে করিয়ে দেন, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরেছে। তাঁর কথায়, “বাঘমুণ্ডি, বলরামপুর, রাইপুর, সারেঙ্গা, সিমলাপাল, বেলপাহাড়ি, লালগড়, শালবনি, নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর, জামবনিতে কী অবস্থা ছিল! মাওবাদীদের নাম করে, মুখে গামছা জড়িয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করতে মানুষকে খুন করা হত। একটা তালিবানি অবস্থা চলত। সূর্য ডুবলে এই বলরামপুর বাজার নিস্তব্ধ হয়ে যেত। যানবাহন চলত না সন্ধ্যার পরে। এখন অবস্থা বদলেছে।” |
শুভেন্দু মনে করিয়ে দেন, এখন জঙ্গলমহলে খুনোখুনি বন্ধ। মাওবাদীদের ডাকা বন্ধ নেই। গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরেছে। বলেন, “মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা মাওবাদীদের জনবিচ্ছিন্ন করব। ওদের মোকাবিলা করব।”
এই বলরামপুরেই গত কয়েক বছরে মাওবাদীদের হাতে ২৪ জন খুন হন। তার মধ্যে এক সময়ে মাওবাদীদের ‘খাসতালুক’ ঘাটবেড়া-কেরোয়ায় খুন হন ১২ জন। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে ওই এলাকা থেকেই মাওবাদীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। ২০১১-র নভেম্বরে ঘাটবেড়ায় বর্ষীয়ান তৃণমূল কর্মী জিতু সিংহ সর্দার খুন হন। দু’সপ্তাহের মধ্যে অযোধ্যা পাহাড়ের নীচে খুনটাঁড় গ্রামে মাওবাদীরা খুন করে এক তৃণমূল কর্মী রাজেন সিংহ সর্দারের বাবা অজিত সিংহ সর্দার ও ভাই বাকু সিংহ সর্দারকে। পর পর খুনে ঘাটবেড়া যখন কার্যত মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছিল, তখন ৪ ডিসেম্বর খুনটাঁড় থেকে কুমারডি মোড় পর্যন্ত পদযাত্রা করেন শুভেন্দু অধিকারীই। সেটাই ছিল দীর্ঘদিন পর এলাকায় কোনও শীর্ষ নেতার রাজনৈতিক কর্মসূচি।
শুভেন্দু এ দিন বলেন, “এ নিয়ে এখানে পাঁচ বার এলাম। অনেক রক্তের পথ পেরিয়ে, অস্ত্রের প্রতিযোগিতার পরে যে শান্তি ও গণতন্ত্র ফিরেছে, তাকে রক্ষা করার আবেদন নিয়ে আমি এসেছি।” ২০১০-এ মাওবাদীদের হাতে নিহত হন তৃণমূলের ঘাটবেড়ার অঞ্চল সভাপতি রাজেন মাহাতো। তাঁর স্ত্রী মণিকাদেবী এ বার তৃণমূলের প্রার্থী। ইতিমধ্যেই ঘাটবেড়া-কেরোয়া-সহ পুরুলিয়ার একাধিক এলাকায় মাওবাদীদের নতুন করে যাতায়াত করতে শোনা যাচ্ছে বলে খবর রয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে। এই পরিস্থিতিতে শুভেন্দুবাবুর আশা, গ্রামের মানুষই মণিকাদেবীর মতো প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেবেন। |