মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় বিতর্ক
বিশ্ববিদ্যালয় হবে, জানেই না খ্রিস্টান কলেজ
বাম আমলে হাত ছাড়া হয়েছিল। বাঁকুড়ার মানুষের সেই বিশ্ববিদ্যালয় না পাওয়ার হতাশাকেই পঞ্চায়েত ভোটের আগে কাজে লাগাতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার খাতড়ার জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাঁকুড়ায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে আমরা নিয়ে ফেলেছি।” মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যে খুশি শিক্ষানুরাগী থেকে ছাত্রছাত্রীরা। শুধু সিদ্ধান্ত নেওয়াই নয়, ক্লাস করানোর জন্য বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের সঙ্গে তাঁর সরকার যোগাযোগ শুরু করেছেন বলেও তিনি জানিয়ে গিয়েছেন। তাঁর কথায়, “বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের জায়গা রয়েছে। তারা ক্লাস করতে দেবে নাকি, তা নিয়ে আমাদের সরকার কথা বলা শুরু করে দিয়েছে। ওঁরা যদি রাজি থাকে, তা হলে এখানেই একটা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করে দেব।” যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, এ ব্যাপারে তাঁদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি।
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে ঘিরে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। তিনি নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করেছেন বলে দাবি করেছে সিপিএম। রবিবার শালতোড়ায় দলের সভায় বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র দাবি করেছেন, “নির্বাচনী বিধি চালু হওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী এ রকম কথা বলতে পারেন না।” সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের দাবি, “নির্বাচনী প্রচারে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণায় নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ হয়েছে। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সভার ভিডিও ফুটেজ-সহ নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাচ্ছি।”
বাম আমলের শেষের দিকে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। দুই জেলার সীমা লাগোয়া কোনও একটি জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি খোঁজার কাজও শুরু হয়। দলের পুরুলিয়া জেলা নেতৃত্ব যোগাযোগের সুবিধার জন্য পুরুলিয়া শহর বা লাগোয়া এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার দাবি তোলেন। তাঁরা পুরুলিয়ার জে কে কলেজের একটি জায়গা রয়েছে বলে নেতৃত্ব ও সরকারকে জানান। কিছুটা অভিমানেই বাঁকুড়ার সিপিএম নেতৃত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি থেকে সরে আসেন। দল ও সরকার পুরুলিয়ায় সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার দাবিতে শিলমোহর দিয়ে বাঁকুড়াকে পরে অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু তা পূরণ করার আগেই রাজ্যের ক্ষমতা হারায় বামফ্রন্ট তথা সিপিএম।
শুরু হয়ে গিয়েছে সিধো কানহো বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন। নতুন ভবন নির্মাণের কাজও চলছে। কিন্তু বাঁকুড়া জেলার কলেজগুলি এখনও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই রয়ে গিয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ তো বটেই পড়ুয়াদেরও প্রয়োজনে মাধেমধ্যে বর্ধমানে ছুটতে হয়। তাই পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় না পাওয়ার হতাশা এই জেলার মানুষ ভুলতে পারেননি। আর নির্বাচনের মুখে সেই ভাবাবেগকেই হাতিয়ার করতে চাইলেন মমতাএমটাই মত রাজনীতির কারবারিদের। পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে পাঠরতা সীমা বাউরি, অভিষেক দে, বিষ্ণুপুর রামানন্দ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের রিয়া চক্রবর্তীরা বলেন, “আমাদের জেলা শিক্ষাক্ষেত্রে এত ভাল, তবুও এখানে বিশ্ববিদ্যালয় না হওয়াটাই অবিশ্বাস্য। আশা করব মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।” বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য তথা অর্থনীতি বিভাগের প্রধান সুবিকাশ চৌধুরী বলেন, “বাঁকুড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার দাবি অনেকদিনের। জেলায় বিএড কলেজ-সহ মোট ৩০টি কলেজ আছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় নেই। বিশ্ববিদ্যালয় হলে জেলার শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়ন ঘটবে।” কিন্তু খ্রিস্টান কলেজের অধ্যক্ষ রিচার্ড রবীন্দ্রনাথ বাজপেয়ী বলেন, “টিভিতে মুখ্যমন্ত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির ঘোষণার কথা শুনেছি। তবে সরকারের তরফে এখনও আমাদের কাছে ওই প্রস্তাব আসেনি। আমাদের কলেজ চার্চের অধীনে থাকায়, এ ব্যাপারে চার্চের সঙ্গেই কথা বলতে হবে।” তবে তিনিও এই জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযোজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
মমতার এই অস্ত্রের মোকাবিলা কী ভাবে সিপিএম করবে? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র বলেন, “প্রত্যেক জেলাতেই বিশ্ববিদ্যালয় হবে বলে ইউজিসি নির্দেশ দিয়েছে। তাই আমাদের বাঁকুড়াতেও হবে। বাম জমানাতেই পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার জন্য একটি ইউনিভার্সিটি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু নানা সমস্যার কারণে আমরা বাঁকুড়ার জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় চেয়েছিলাম।” তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা কো-চেয়ারম্যান তথা আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলাপরিষদের প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “বামেরা উন্নয়ন করেনি। এখন মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের কাজেও তারা বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। তবে ওরা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কাজ আটকাতে পারবে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.