উপরতলার নির্দেশে শো-কজ প্রদীপকে
পরওয়ালার নির্দেশেই কামদুনি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ মুখোপাধ্যায়কে শো-কজ করেছেন বলে দাবি করলেন উত্তর ২৪ পরগনা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন মীনা ঘোষ। কে সেই উপরওয়ালা, তা অবশ্য স্পষ্ট করে বলতে চাননি তিনি। কামদুনিতে কলেজ ছাত্রীর ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে এলাকায় মিছিল করেছিল ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। এর পর শনিবার স্কুলের প্রধান শিক্ষককে শো-কজ করা হয়। বলা হয়, মিছিল সংগঠন করে হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করেছেন তিনি।
মধ্যমগ্রামে নিজের বাড়িতে প্রদীপ মুখোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।
রবিবার মধ্যমগ্রামে নিজের ফ্ল্যাটে বসে প্রদীপবাবু বলেন, “আমি আইন ভাঙিনি। মিছিল স্কুল ছুটির পর। মিছিল আয়োজন করেন গ্রামের লোকেরাই, যাঁরা ছাত্রছাত্রীদেরই অভিভাবক। রাজনৈতিক মিছিলে যোগ দেওয়া নিয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু দিদির খুনের প্রতিবাদে ভাই-বোনেরা মিছিলে হাঁটতে পারবে না, এ কথা কে বলেছে!” প্রদীপবাবুর দাবিতে সায় দিচ্ছে কামদুনিও। মিছিলে যোগ দেওয়া এক ছাত্রের অভিভাবকের কথায়, “স্কুল মিছিলে যেতে বলবে কেন! আমরাই বাচ্চাদের নিয়ে গিয়েছিলাম। ভবিষ্যতেও নিয়ে যাব।’’ সোমবার বেলা তিনটের মধ্যে শিক্ষা সংসদ ভুল স্বীকার না-করলে আন্দোলনে নামবেন বলে হুমকিও দিয়েছেন কামদুনিবাসী।
প্রদীপবাবুর পাশে রয়েছেন তাঁর সহকর্মী এবং তৃণমূলের স্থানীয় নেতারাও। এ দিন নিহত ছাত্রীর এক আত্মীয় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী গ্রাম থেকে ফিরে নানা অপবাদ দিয়েছেন। এ বার মাস্টারমশাইকেও হেনস্থা করা হচ্ছে!”
শুধু গ্রামের মাস্টারমশাই নন, নিজেকে কামদুনির এক জন বলেই ভাবেন প্রদীপবাবু। গ্রামের ওই প্রাথমিক স্কুলের সরস্বতী পুজোয় পৌরোহিত্য করার পাশাপাশি গ্রামের ছেলেমেয়েদের হাতেখড়ি-ও দেন তিনি। কথায় কথায় প্রদীপবাবু জানান, তেরো বছর আগে তিনি যখন কামদুনি স্কুলে যোগ দেন, তখনও ক্লাসঘরে বেঞ্চি আসেনি। মাটিতেই বসতো ছাত্র-ছাত্রীরা। “ওই মেয়েটা আমার টেবিলের ঠিক বাঁ দিকে চট বিছিয়ে বসত। সেই ছোট্ট মুখটা এখনও মনে পড়ে।”বলতে বলতে চোখের কোণ চিকচিক করে ওঠে মাস্টারমশাইয়ের।
ঘটনার দিন দশেক আগেই স্কুলে যাওয়ার পথে ওই ছাত্রীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল প্রদীপবাবুর। “হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করেছিল, মাস্টারমশাই ভাল আছেন? ৭ জুন গভীর রাতে খবরটা পেলাম। অত রাতে আর যেতে পারিনি কামদুনি। পরের দিন সকালেই ছুটে গিয়েছিলাম। তখন তো সব শেষ।” বললেন প্রদীপবাবু।
তপন সিংহের ‘আতঙ্ক’ সিনেমায় খুনের দৃশ্য দেখে ফেলা শিক্ষক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে গুন্ডারা বলেছিল, “মাস্টারমশাই, আপনি কিন্তু কিছুই দেখেননি।” পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে সেই ঘটনার কথা কাউকে বলতে পারেননি মাস্টারমশাই-রূপী সৌমিত্র। সিনেমাটি জুড়ে তাঁর অভিব্যক্তি জুড়ে ছিল এক পাপবোধ। অভিযোগ, কামদুনিতে সে ভাবেই মাস্টারমশাইকে কড়া চোখ দেখিয়ে চুপ করাতে চাইছে প্রশাসনের একাংশ। কিন্তু সিনেমার সৌমিত্র হতে নারাজ প্রদীপবাবু। কেন?
কামদুনির মাস্টারমশাই বলছেন, “আমি শিক্ষক। অন্যায় দেখলে ভবিষ্যতেও প্রতিবাদ করতে পিছপা হব না। তিরস্কারের পরোয়া না করেই।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.