তমোঘ্ন হালদার (‘রাষ্ট্র ভুল পথে চলছে, মাওবাদীরাও’, ৫-৬) স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মহেন্দ্র কর্মার অপকর্মের কথা এবং তার প্রতি রাষ্ট্রীয় পক্ষপাতের কথা। শ্রীহালদারের কথায় মনে পড়ে গেল বীজপুরের এস পি-র কথোপকথনের টেপ, এবং তারই সঙ্গে সালওয়া জুড়ুমের অত্যাচারের খবর প্রথম প্রকাশকারী সাংবাদিক কমলেশ পেকড়ার কথা। সি আর পি দিয়ে কমলেশের বসতবাড়ি গুঁড়িয়ে সেখানে সি আর পি-দের খেলার মাঠ তৈরি করা হয়। তাঁর দাদাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। মনে পড়ে শঙ্কর গুহ নিয়োগীর হত্যার কথা। বিনায়ক সেনকে ‘মাওবাদী’ বলে জেলে ভরার কথা। গাঁধীবাদী হিমাংশু কুমারের বনবাসী চেতনা আশ্রমকে কয়েক ঘণ্টার নোটিসে বুলডোজার চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা।
তমোঘ্নবাবু প্রশ্ন তুলেছেন, “অত্যাচারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ও ‘মাথা চাই’ মর্মে বন্দুক তুলে নেওয়া ছাড়া আর কি সত্যিই কোনও রাস্তা নেই?” এই প্রশ্ন আরও বহু প্রশ্নের জন্ম দেয়। মন চায় অন্য রাস্তা তৈরি হোক। যে পথের কথা লেখক বলেছেন, সেই পথেই সমাধান হোক সমস্যার। কিন্তু কিছু প্রশ্নের উত্তর যে পাওয়া যায় না। পস্কো এবং কুড়ানকুলাম আন্দোলন কি পারল সরকারি বকলমে কর্পোরেট আগ্রাসন ঠেকাতে? দু’জায়গাতেই সরকারি বাহিনী বিক্ষোভকারীদের উপর মাঝে মাঝে হামলা চালিয়েছে। নানা ভাবে বিক্ষোভকারীদের ঐক্য ভেঙে দিয়ে জমি দখল করেছে। মনে করা যাক নর্মদা বাঁধের কথা। উচ্ছেদ হওয়া আদিবাসীরা পুনর্বাসন পাননি, সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়নি, সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিল আদিবাসীদের পুনর্বাসনের ব্যাপারটা দেখতে। মণিপুরের অগ্নিকন্যা ইরম শর্মিলা চানু এক দশকেরও বেশি সময় অনশনে রয়েছেন, অহিংস প্রতিবাদ জানিয়ে। কী লাভ হচ্ছে? আট-নয় বছর হল মনোরমা থাংজাম সেনাবাহিনীর হাতে ধর্ষিতা ও নিহত হয়েছেন। সরকার তদন্ত রিপোর্ট চেপে রেখে দিয়েছে। বিচার করার কোনও ইচ্ছাই সরকারের নেই।
এই সমস্ত ঘটনা দেখেশুনে কি মনে হয় সরকার সমস্যার সমাধান করতে, শান্তি বজায় রাখতে আগ্রহী? হিমাংশু কুমারের উক্তি মনে পড়ে, “এই শহরবাসীরা আরামে আছেন। এঁরা শান্তি চান, যাতে এঁদের আরামটা নিরবচ্ছিন্ন হয়। কিন্তু যাঁরা আক্রান্ত, তাঁদের কাছে ন্যায়বিচারই সর্বাগ্রে কাম্য।”
২০০৫ সালে ছত্তীসগঢ় সরকার টাটা এসার-এর সঙ্গে মউ স্বাক্ষর করে। এর পরেই ধনী জমিদার একদা সিপিআই পরে কংগ্রেস মহেন্দ্র কর্মা সালওয়া জুড়ুম তৈরি করে টাটা এসার অর্থ সাহায্য করত জুড়ুমকে। এরই দু’এক মাস আগে-পরে মনমোহন সিংহ ঘোষণা করেন, “Maoists are the gravest internal security threat.” আর সরকারের ভূমিকায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বলতে বাধ্য হন যে, ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছে ‘মাওবাদী’ নাম দাও আর নিকেশ করো।
‘শান্তির ললিতবাণী’ এই অবস্থায় ‘ব্যর্থ পরিহাস’ বলে মনে হয় না কি?
স্বপন মজুমদার। হিন্দমোটর, হুগলি
|
কলকাতা পুরসভার ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডে কালিকাপুর মেন রোডে গীতাঞ্জলি পার্কে পনেরো বছর ধরে বাস করছি। ১৬ ফুট চওড়া ও ১৭৬ ফুট দীর্ঘ রাস্তায় নিকাশির ব্যবস্থা নেই। বর্ষায় অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে। আলোর জন্য খুঁটি পোঁতা আছে, আলোর ব্যবস্থা হয়নি। বাড়িতে জলের লাইনও দেওয়া হয়নি। পুর কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার আবেদন করেও কোনও ফল হয়নি।
দুলু নস্কর ও অন্যরা। কলকাতা-৯৯
|
শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখায় বারাসত অতিব্যস্ত জংশন স্টেশন। অগণিত যাত্রী, পাঁচটি প্ল্যাটফর্ম। তিনটি মাত্র সিঙ্গল শেড, প্রায় সবই হকারদের দখলে। বিশেষত ৪ এবং ৫ নং শেড হকারদের রান্নাঘরে রূপান্তরিত। দাঁড়াবার পরিসর নেই বললেই চলে। গ্রীষ্মের দাবদাহ, সশব্দ স্টোভের প্রচণ্ড উত্তাপ, ফাস্ট ফুডের উগ্রগন্ধে তাপ ও দূষণ সহ্যসীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। ঝড়-জলে শেডের বাইরে দাঁড়িয়ে যাত্রিসাধারণ কাকভেজা ভিজছেন।
প্রভাস রায়। বামনগাছি, উত্তর চব্বিশ পরগনা
|
নন্দীগ্রামে গুলিচালনার পর বামপন্থী স্থিতাবস্থার অবসান চেয়েছিলেন যে মানুষেরা, তাঁদের মধ্যে আমিও এক জন ছিলাম। ঠিক তিন বছর আগে এই পত্রিকায় এক প্রবন্ধে লিখেছিলাম, ‘তৃণমূলকেও দায়িত্ব পেলে দায়িত্বশীল হতে হবে, নইলে বিপরীত পরিবর্তনের ঝড় ওত পেতে অপেক্ষা করবে।’ পরিবর্তনকারী আমার মনে এই সংশয়ও ছিল, এ বদলে কি শুধু বদলাই হবে, ‘শুধু বধ্য-ঘাতকের স্থান বিনিময়’ হবে? (‘জনসংযোগ কমান...’, ২৩-৬-১০)
পরবর্তী তিন বছরে আমার মনে সংশয় তীব্রতর হয়েছে। নারী নির্যাতন ও অন্যান্য অপকর্মে, পশ্চিমবঙ্গ মনে হয় যেন, দুর্বৃত্তদের মুক্তাঞ্চল। তবু বর্তমান ও অন্যান্য শাসনকালে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে একই দিনে চোদ্দো জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাননি, আরাবুলরা সত্ত্বেও ২০০৩ সালের তুলনায় এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কম প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বহু ক্ষেত্রেই অপরাধের পর সম্ভাব্য অপরাধীরা গ্রেফতার হয়েছে, দ্রুত বিচারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, বারাসতের একটি থানা ভেঙে চারটে থানা অবিলম্বে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠলেই ইদানীং অন্তত ‘সাজানো’ ঘটনা, তুচ্ছ ঘটনা বলার প্রবণতা কমেছে। এ সব ইতিবাচক দিক।
কিন্তু বর্তমান রাজ্য সরকারের প্রধানের ও তাঁর অনুগামীদের প্রধান নেতিবাচক দিক হল গণতন্ত্রবিরোধী অসহিষ্ণুতা। স্মারকলিপি না নেওয়া, শান্ত ভাবে মুখোমুখি আলোচনায় না বসা, অন্যদের বক্তব্য শুনতে না চাওয়া, প্রশ্ন করলে, আপত্তি করলে, প্রতিবাদ করলেই তর্জনী আস্ফালন করে প্রশ্নকারীকে, প্রতিবাদীকে মাওবাদী বলে দেগে দেওয়া, ধমকানো, হেনস্তা করা নিত্য ঘটছে। আর ধর্ষিতার, নিহতের বাড়িতে বিলম্বে বা অবিলম্বে চলে গিয়ে দু’বস্তা চাল পাঠিয়ে, চাকরি ও টাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, যেন উৎকোচ দিয়ে, মুখ বন্ধ করানোর চেষ্টার যে হৃদয়হীনতা, সেটা এই দেশ গরিবের দেশ বলেই সম্ভব হয়। শাসকের অনুভূতিহীনতায় স্তব্ধ হয়ে যাই আর গরিব মানুষ যখন প্রলোভন প্রত্যাখ্যান করেন তখন গর্ব বোধ করি।
বিরুদ্ধ পক্ষও অবশ্য নিহত সুদীপ্তর শোকার্ত বাবাকে দিয়ে সভায়, মিডিয়ার সামনে বেহালা বাজিয়ে নেয়! ক্ষমতা পেলে সব পক্ষই সমান উদ্ধত, সমান সংবেদনহীন। ক্ষমতাদর্পই অনুভূতিহীনতার উৎস।
অশ্রুকুমার সিকদার। শিলিগুড়ি-৪ |