ফুটবলে মন নেই, অবহেলার বিরুদ্ধে পথে ব্রাজিল
ফুটবল-পাগল দেশটা হঠাৎ এমন ক্ষেপল কেন, তা নিয়ে এখন চিন্তিত তামাম দুনিয়া।
আসলে টেলিভিশনের পর্দায়, ইন্টারনেটে, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে সর্বত্র টানা দু’সপ্তাহ ধরে ‘অন্য ব্রাজিল’কে দেখছে বিশ্ব। শুনছে, ব্রাজিলেরই আম বাসিন্দার স্লোগান, “নেইমারের থেকে এক জন শিক্ষক ঢের বেশি মূল্যবান।” একের পর এক ফুটবল বিশ্বকাপ জিতে নেওয়া দেশেরই বাসিন্দারা বলছেন, ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের আয়োজন করতে গিয়ে জলের মতো ডলার খরচ করছে ব্রাজিল সরকার। হিসেব বলছে, প্রায় পনেরোশো কোটি ডলার বরাদ্দ হয়েছে এই খাতে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে চলতি কনফেডারেশন কাপের বিপুল খরচ। এ ছাড়াও রয়েছে ২০১৬ সালের অলিম্পিকের প্রস্তুতি। অথচ দেশের বাসিন্দাদের উন্নয়নের নামে চলছে প্রহসন। মূল্যবৃদ্ধি লাগামছাড়া, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের হাল করুণ, দুর্নীতিও প্রশাসনের সব স্তরেই জাঁকিয়ে বসেছে। সে সব দিকে অবশ্য নজর নেই সরকারের। অগত্যা তাই রাস্তায় নেমেছে ব্রাজিল।
অন্তত তেমনই মনে হয়েছিল গত বৃহস্পতিবারের জমায়েত দেখে। বড়-ছোট শহর মিলিয়ে সে দিন রাস্তায় নেমেছিলেন এক লক্ষেরও বেশি মানুষ। সেই প্রতিবাদ বিক্ষোভের জের রইল শনিবারও। কোথাও শান্তিপ্রিয় প্রতিবাদ, কোথাও বা চলল ব্যাপক ভাঙচুর, লুঠপাট, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ। সরকারি সূত্রে খবর, শনিবার সব চেয়ে বড় জনতার ঢল নামে ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্ব শহর বেলো হরিজোন্টেতে। প্রায় সত্তর হাজার ব্রাজিলীয় জড়ো হয়েছিলেন সেখানে। প্রত্যেকের মুখে ছিল একটাই স্লোগান, ‘কীসের জন্য বিশ্বকাপ?’ মেক্সিকো-জাপানের খেলা চলাকালীন মিনেইরাও স্টেডিয়ামের সামনে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষও হয় জনতা-পুলিশের। পাঁচ পুলিশ অফিসার-সহ জখম অন্তত ২৫ জন। গ্রেফতার হয়েছেন ২২ জন বিক্ষোভকারী।
সাও পাওলোর ছবিটা অবশ্য ছিল অন্য রকম। সেখানেও পথে নেমেছিলেন প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার মানুষ। তবে কারণ ছিল অন্য। সম্প্রতি সংবিধান সংশোধন করে স্বাধীন সরকারি আইনজীবীদের অপরাধের তদন্ত করার ক্ষমতা সঙ্কুচিত করার চেষ্টা করছে সরকার। সাও পাওলোর বাসিন্দাদের দাবি ছিল, এ রকম হলে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনের বাড়বাড়ন্ত সুনিশ্চিত। রিও ডি জেনেইরো এবং ব্রাসিলিয়াতেও সংঘর্ষে ইতিমধ্যে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। ‘ইউনিভার্সিটি টাউন’ সান্টা মারিয়াতেও জড়ো হন তিরিশ হাজার মানুষ। হাতে ছিল ব্যানার। তাতে লেখা ‘সান্টা মারিয়া থামবে না। আমাদের লড়াইয়ের কারণ অগুনতি।’ এই সান্টা মারিয়ার এক ডিস্কোতেই জানুয়ারি মাসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ২৪২ জন। কিন্তু তার পরেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রায় ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে রয়েছে প্রশাসন। প্রতিবাদ চলছেই।
আমি এক জন ব্রাজিলীয় এবং দেশকে ভালবাসি। আমার পরিবার, বন্ধুরাও এই দেশেই থাকে। সে জন্য আমিও এমন এক ব্রাজিল চাই যা অনেক বেশি নিরাপদ, স্বাস্থ্যবান এবং সৎ।
নেইমার
অথচ সপ্তাহ দুয়েক আগে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল কিন্তু নিতান্তই সাধারণ কারণে, বাসভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে। কিন্তু ক্রমেই সেই প্রতিবাদ বাড়তে থাকে আকারে। লাতিন আমেরিকার অন্যতম পিছিয়ে পড়া দেশ কেন এত জাঁকজমক করে আয়োজন করছে আগামী ফুটবল বিশ্বকাপের, তা নিয়ে সরকারের কাছে জবাব চাইতে শুরু করেন বাসিন্দারা।
পরিস্থিতি সামাল দিতে শুক্রবার রাতেই দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তৃতা দেন প্রেসিডেন্ট দিলমা রোউসসেফ। জানান, সাধারণ মানুষের ক্ষোভ দূর করার সব রকম চেষ্টা করবে সরকার। কিন্তু একই সঙ্গে দেন হুঁশিয়ারিও— বিক্ষোভের নামে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, কিংবা লুঠতরাজ কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়া একসময়ের গেরিলা নেত্রীর কাছ থেকে এ হেন প্রতিক্রিয়া পেয়ে কারও কারও প্রতিক্রিয়া, “দিলমা টেলিভিশনের পর্দায় বসে আমাদের বোকা বানান।” কেউ বা আবার বলছেন, “দিলমা, আপনি যদি দুর্নীতিগ্রস্তদের না তাড়ান, তা হলে আমরা আপনাকে তাড়াব।”
এ হেন অবস্থায় দেশবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছেন ব্রাজিলের উঠতি ফুটবল তারকা নেইমার। ফেসবুকে বলেছেন, “আমি ব্রাজিলীয় এবং দেশকে ভালবাসি। আমার পরিবার, বন্ধুরাও এই দেশেই থাকে। তাই আমিও এমন এক ব্রাজিল চাই যা অনেক বেশি নিরাপদ, স্বাস্থ্যবান, ও সৎ।” প্রতিবাদ-বিক্ষোভকে সমর্থন জানিয়েছেন রোমারিও-র মতো প্রাক্তন ফুটবলারও।
তবে পেলের মন্তব্য শুনে হতবাক ব্রাজিলীয়দের একাংশ। সম্প্রতি দেশবাসীকে তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন, বিক্ষোভের রাস্তা ছেড়ে কনফেড কাপের ম্যাচ উপভোগ করাই শ্রেয়। ফুটবল-পাগল দেশবাসী অবশ্য মানেননি। উল্টে সমালোচনার জেরে মন্তব্য বদলাতে হয়েছে কিংবদন্তি ফুটবলারকেও।
সব দেখে ধারণা, উল্টো স্রোতের জোয়ার আসছে ব্রাজিলে। তাই হয়তো, কনফেড কাপে দেশ একের পর এক ম্যাচ জেতা সত্ত্বেও টেলিভিশনের পর্দায় নজর নেই ব্রাজিলবাসীর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.