|
|
|
|
|
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে জলের বোতল তুলুন
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় জেরবার? নিয়ম মেনে ওয়ার্ক আউট হতে পারে
নীরোগ জীবনের চাবিকাঠি। পরামর্শ দিলেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায় |
|
শরীর নিয়ে মাঝবয়সের সমস্যায় জেরবার অনেকেই। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের মতো অসুখ জীবনকে নিষ্প্রভ করে দেয়। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
এক্সারসাইজ আর ওজন নিয়ন্ত্রণ করলে ৫৮% ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। উচ্চ রক্তচাপ আর কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেও এক্সারসাইজ বড় ভূমিকা নিতে পারে।
হাঁটা বা এক্সারসাইজ
অফিস থেকে ফেরার সময় এক ঘণ্টা হেঁটে রোজ বাড়ি ফেরেন, এমন অনেকেই আছেন। উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টেরল বেশি হলেও হাঁটার ফর্মুলাতেই ঢুকে পড়েন বেশির ভাগ। হাঁটা-জগিং হল কার্ডিওভাসকুলার এক্সারসাইজ। হাঁটা বা জগিংয়ে শেখানোর কিছুই নেই। তাই এটাই বেছে নেন নব্বই শতাংশ মানুষ। শক্তি বাড়ানোর এক্সারসাইজের নাম, কায়দা, কৌশল আর তা বেশি বয়সে শুরু করা যায় কি না বা ছেড়ে দিলে কী হবে, এই ভয়ে সবাই স্ট্রেংথ ট্রেনিং এড়িয়ে যেতেই পছন্দ করেন।
রোগ থাকলেও সোনালি রেখা
ডায়াবেটিসে ভুগেও ক্রিকেট মাঠ কাঁপিয়েছেন পাকিস্তানের ওয়াসিম আক্রম, নিউজিল্যান্ডের ক্রেগ ম্যাকমিলানরা। টেনিসে বিলি জেন কিংও ডায়াবেটিসকে হারিয়ে বছরের পর বছর টেনিস কোর্ট দাপিয়েছেন। অসুখটা তাই কোনও বাধাই নয়। আপনিও পারবেন। শুধু কোন এক্সারসাইজ কী ভাবে করতে হবে সেটা জেনে, দীর্ঘমেয়াদি ভাবে চালিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করুন।
ওয়ার্ক আউটের ব্লু-প্রিন্ট
হাঁটাহাঁটি, জগিংয়ের মতো কার্ডিওভাসকুলার ওয়ার্ক আউট করলে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে যে ফল পাওয়া যায়, স্ট্রেংথ ট্রেনিং করলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে তার বেশি ভাল ফল পাওয়া সম্ভব। তবে ওয়ার্ক আউট শুরু করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের অনুমতি নিতে ভুলবেন না।
প্রথম দিকে সপ্তাহে চার দিন করে শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম নিশ্চিন্তে শুরু করুন। শক্তি বাড়ানোর ওয়ার্ক আউট বা স্ট্রেংথ ট্রেনিং যে কোনও বয়সে শুরু করা যায়। কোনও বিশেষজ্ঞ ট্রেনারের সাহায্য নিতে পারেন এক্সারসাইজ টেকনিকের নামগুলো রপ্ত করার জন্য। সপ্তাহে দু’দিন করুন শরীরের উপরের অংশের আর দু’দিন করুন শরীরের নীচের অংশের ওয়ার্ক আউট। প্রথম দু’তিন সপ্তাহের জন্য বেছে নিন ৪-৫টা এক্সারসাইজ। পরে সেটা বাড়িয়ে ৬-৭টায় নিয়ে যেতে পারেন। সপ্তাহে দু’দিন করুন কার্ডিওভাসকুলার ওয়ার্ক আউট। এক দিন বিশ্রাম নিন।
শরীরের উপরের অংশের ওয়ার্ক আউটের কয়েকটি নমুনা
১. পুশ-আপ আর রোটেশন: পুশ আপ দিয়ে উপরে উঠে একটা হাত তুলে পাশাপাশি ঘুরে সিলিং দেখার চেষ্টা করুন। মোট ১০ টা পুশ আপ দিতে হবে। রোটেশন না পারলে শুধু পুশ আপ দিতে হবে।
২. প্রোন রো: ডাম্বেল বা দু’লিটার জলের বোতল দু’হাতে ধরে উপুড় হয়ে একটা বেঞ্চে শুয়ে হাত দু’টো মেঝের দিকে নিন। আবার বগল চেপে টেনে পিঠের দিকে টেনে আনুন।
৩. অল্টারনেট শোল্ডার প্রেস: ডাম্বেল বা দু’লিটার জলের বোতল ধরে এক একটা হাত পর্যায়ক্রমে কাঁধের সামনে থেকে সোজা মাথার উপর তুলুন আবার নামান। ১০ বার করতে হবে।
এক্সারসাইজ করুন ঠিকঠাক
পরপর ৫টা এক্সারসাইজ করবেন। দু’টো এক্সারসাইজের মধ্যে বিরতি নিন ১০-২০ সেকেন্ড। খুব ভাল হয় যদি আরও কম বিরতি নেন। এই সার্কিট সিস্টেম পদ্ধতিতে ওয়ার্ক আউট করলে হার্ট রেট বেশ উঁচুতে ওঠে। একই সঙ্গে স্ট্রেংথ ট্রেনিং আর কার্ডিওভাসকুলার দুটোই হয়। ৫টা এক্সারসাইজ করে দু’মিনিট বিশ্রাম নিন। এই সার্কিটটা রিপিট করুন তিন বার। রক্তচাপ যাদের বেশি, তারা শুরুর দিকে হালকা ওজন নিয়ে নিশ্চিন্তে এক্সারসাইজ করুন।
হাঁটাহাঁটির বদলে কার্ডিও
সপ্তাহে দু’দিন করে কার্ডিওভাসকুলার ওয়ার্ক আউট করুন। সুগার কমাতে লম্বা হাঁটা বা জগিংয়ে হাঁটু, গোড়ালির অত্যধিক ব্যবহারে ইনজ্যুরি আসতে পারে। দীর্ঘ হাঁটাহাঁটি স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা বাড়িয়ে শরীরে ক্লান্তি ডেকে আনে। এতে অবসাদ বাড়তে পারে। তার থেকে ভাল বিরতিমূলক কার্ডিও।
যেমন:
১. বল বাউন্সিং স্পট রানিং: আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে স্পট রানিং করুন। আর একই সঙ্গে একটা হালকা ফুটবলের আকারের বলকে ড্রপ খাওয়ান। যত জোরে স্পট রান করবেন, তত দ্রুত বল ড্রপ খাওয়াতে হবে। বল নিয়ে না পারলে শুধু স্পট রান। করুন ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট।
২. সাইডওয়েজ আর স্টেপিং: ঘরের এক দেওয়াল থেকে অন্য দেওয়ালে পাশাপাশি দ্রুত চার বার যাতায়াত করুন। এর পর পরই একটা কাঠের পিঁড়ি বা সিঁড়িতে দু’পা মিলিয়ে ১০ বার ওঠানামা করুন। আবার পাশাপাশি চলুন। প্রক্রিয়াটা করুন ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট।
দু’টো ড্রিলই দু’মিনিট বিশ্রাম নিয়ে ৫ বার করে রিপিট করতে পারেন। এ রকম মোট ৪টে ড্রিল এক দিনে করুন। তার বেশি নয়।
সতর্ক থাকুন
একটু সতর্ক থাকবেন। ওয়ার্ক আউটের তীব্রতা বেশি হলে হাইপোগ্লাইসোমিয়া আসতে পারে। তাই ওয়ার্ক আউটের আগে হালকা কিছু খেয়ে নেবেন। সঙ্গে চিনি মেশানো জল রাখলে ভাল।
মাথা ঝিমঝিম করলে বা খুব ক্লান্ত লাগলে এক্সারসাইজ বন্ধ করে একটু বিশ্রাম নিন।
এ ভাবেই বদলে নিতে পারেন আপনার জীবন। অসুখ তো থাকবেই। কিন্তু সুস্থতাও তো আপনারই হাতে। |
|
|
|
|
|