রিপোর্টে তুলোধোনা রাজ্যকে
ধুঁকছে প্রসূতি পরিষেবা, সাহায্য বন্ধের হুঁশিয়ারি
ক হাসপাতালে সপ্তাহে মাত্র দু’টো দিন সন্ধ্যার পরেও প্রসূতিদের ‘সিজার’ করা হয়। বাকি দিনগুলোয় অন্যত্র ‘রেফার’ করা হয় রোগীদের। অন্য হাসপাতালে ডাক্তারের অভাবে ২৪ ঘণ্টা ‘সিজার’ করা যাচ্ছে না। সেখানকার রোগীদেরও ‘রেফার’ করা হচ্ছে। ‘গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন’-এর টাকা পেয়েও পশ্চিমবঙ্গে এমন বহু সরকারি হাসপাতালে মা ও শিশু-স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়েছে অভিযোগে রাজ্যকে ভর্ৎসনা করেছে কেন্দ্রের ‘ষষ্ঠ কমন রিভিউ মিশন’-এর পরিদর্শক দল। সম্প্রতি প্রকাশিত তাদের রিপোর্টে প্রসূতি-পরিষেবার প্রশ্নে রাজ্যকে তুলোধোনা করা হয়েছে। প্রায় হুমকির সুরে জানানো হয়েছে, কাজ ঠিকঠাক না হলে বন্ধ হতে পারে স্বাস্থ্য মিশনের অর্থ সাহায্য।
মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পরিষেবা সরেজমিনে দেখতে ২০১২ সালের নভেম্বরে রাজ্যে এসেছিল কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দল। কী দেখেছেন তাঁরা?
মঙ্গল-বুধ বাদ দিয়ে সপ্তাহের অন্য দিন সন্ধ্যা ৬টার পরে কোনও প্রসূতির ‘সিজার’ হয় না পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। কারণ, হাসপাতালে ডাক্তারের অভাব। হাসপাতালে মাত্র এক জন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, এক জন অ্যানাস্থেটিস্ট আর এক জন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। এই পরিকাঠামো দিয়ে হাসপাতাল চালানো যায় না বলে স্বাস্থ্যভবনে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত দু’মাস দীঘার হাসপাতালের অ্যানাস্থেটিস্টও উচ্চশিক্ষার জন্য ছুটিতে ছিলেন। ফলে, সব ‘সিজার কেস’ পাঠানো হয়েছে কাঁথি হাসপাতালে। কিছু দিন হল সেই অ্যানাস্থেটিস্ট কাজে যোগ দিলেও চলতি মাসেই তিনি পড়াশোনার জন্য বাইরে চলে যাবেন। ফলে, ফের হাসপাতালে ‘সিজার’ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং হাসপাতালে আবার মাত্র দু’জন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। নিয়ম থাকলেও তাই ওই হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা ‘সিজার’ করা যাচ্ছে না। রাতের দিকে অধিকাংশ ‘সিজার কেস’ অন্যত্র ‘রেফার’ করা হচ্ছে। এমন উদাহরণ আরও পেয়েছেন পরিদর্শকেরা।
কেন্দ্রের ওই পরিদর্শক দলের নেতৃত্বে ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রকের ডেপুটি কমিশনার ডি বাসওয়াল এবং জয়েন্ট ডিরেক্টর এ বর্মা। সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্টে তাঁরা লিখেছেন রাজ্যে গ্রামস্তরে সাধারণ প্রসবের জন্য ৩৮০টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শয্যার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। যাতে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য কোনও সরকারি কেন্দ্রে পৌঁছতে প্রসূতিকে তাঁর বাড়ি থেকে ৫ কিলোমিটার বেশি দূরত্বে যেতে না-হয়। খাতায়-কলমে এর মধ্যে চালু হয়েছে ২৬৩টি। কিন্তু এর ৫৪টিতে মাসে ১০-এর বেশি ডেলিভারি হয় না। স্বাস্থ্য-কর্তারাই স্বীকার করছেন, সংখ্যাটা খুবই কম।
‘সিজার’-এর জন্য গোটা রাজ্যে ১৪১টি কেন্দ্র চালু হওয়ার কথা ছিল। লক্ষ্য ছিল, যাতে কোনও প্রসূতির ‘সিজার’ করাতে হলে তাঁকে বাড়ি থেকে ২৫ কিলোমিটারের বেশি দূরে যেতে না হয়। এখনও পর্যন্ত এই রকম ১১১টি কেন্দ্র চালু হয়েছে এ রাজ্যে। কিন্তু মাত্র ১২টিতে কাজ চালানোর মতো ‘ব্লাড স্টোরেজ ইউনিট’ চালু হয়েছে! অর্থাৎ, বাদবাকি ৯৯টি কেন্দ্রে ‘সিজার’ হয়তো করা যাবে, কিন্তু অস্ত্রোপচারের সময় প্রসূতির রক্তের প্রয়োজন হলে তা পাওয়া যাবে না। তাতে প্রসূতির প্রাণসঙ্কট অবধারিত।
প্রসূতি-পরিষেবায় এই সব ত্রুটি নিয়ে কেন্দ্রের অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী। বলেছেন, “সিজারের জন্য নির্দিষ্ট কেন্দ্রগুলির অনেকগুলিতেই অ্যানাস্থেটিস্ট ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ জোগাড় করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন হাসপাতালে প্রসব প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় টেবিলের ঘাটতি রয়েছে প্রায় হাজারখানেক। প্রসূতির মৃত্যুর কারণ জানতে আলাদা অডিট চালুর কথা ছিল। সেটা করা যাচ্ছে না। কারণ, অডিট কমিটির বৈঠকের জন্য প্রশাসনিক কর্তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাও পরিষেবার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
কেন্দ্রে গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের কর্তাদের একাংশ যা শুনে বিরক্ত। তাঁদের ধারণা, পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা কার্যত হাত তুলে দিয়ে বলেছেন, আর বেশি কিছু তাঁদের পক্ষে করা সম্ভব নয়। গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনে কেন্দ্রে পশ্চিমবঙ্গের উপদেষ্টা অনুভব শ্রীবাস্তবের কথায়, “পশ্চিমবঙ্গ জানিয়েছিল, তাদের পক্ষে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসব করানো সম্ভব নয়। মেনে নিয়েছিলাম। শর্ত ছিল, যে সব প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শয্যা রয়েছে সেখানে স্বাভাবিক প্রসব করতে হবে। আর নির্দিষ্ট কয়েকটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র তথা গ্রামীণ হাসপাতালে ‘সিজার’ ঠিকঠাক চালাতে হবে। সেটুকুও ওরা পারছে না। এটা বরদাস্ত করা হবে না।”
যদি এর পরেও পশ্চিমবঙ্গ কাজ করতে ব্যর্থ হয়, তা হলে?
গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা অনুরাধা গুপ্তের উত্তর, “আমরা পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব রাজ্যকে খুব স্পষ্ট করে জানিয়েছি, মা ও শিশু-র স্বাস্থ্য পরিষেবার মান ও দায়বদ্ধতা নিয়ে আপস করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গে মায়েরা সন্তানের জন্ম দিতে হাসপাতাল যেতে সরকারি গাড়িও পাচ্ছেন না। এটা হবে না। গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনে প্রসূতি এবং শিশুস্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য কেন্দ্র ৭৫ শতাংশ টাকা দেয়। সে টাকা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া, যে রাজ্য খুব ভাল কাজ করবে তাদের উৎসাহ-ভাতা বাবদ একটা বড় অঙ্কের টাকা দেওয়া হবে এ বছর থেকে। যে সব রাজ্য ভাল কাজ করবে না তারা সেই ভাতা থেকেও বঞ্চিত হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.