২৬ বছর পর ভোটাধিকার
পঞ্চায়েতে সদস্য দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চায় হামিদপুর
ঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে হামিদপুর চর। ভোট হলে ২৬ বছর পরে ফের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এখানকার ১০১৪ জন বাসিন্দা।
পঞ্চায়েত থেকে নিজেদের চর এলাকায় রাস্তা, পানীয় জল, আইসিডিএস সেন্টার, সেতু, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যের অধিকার আদায় করতে এবার ওই হামিদপুর চরের চার জন মহিলা প্রথম পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়িয়েছেন। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম ও নির্দল প্রার্থী হিসেবে ওঁরা দাঁড়িয়েছেন। চরের পাড়ায়-পাড়ায় প্রচার শুরু করেছেন চারজনেই। প্রতিশ্রুতি সকলেরই এক, চরের জন্য সুযোগ সুবিধে আদায় করা।
দীর্ঘ আড়াই দশক পরে পঞ্চায়েত ভোট দিতে পারার আনন্দে এখন হামিদপুর চরের অনেকেই উচ্ছ্বসিত। আশি বছরের বৃদ্ধ কুলেশ মন্ডল বলেন, “১৯৮৭ সালে শেষ পঞ্চায়েত ভোট দিয়েছিলাম। গঙ্গা ভাঙনে ভিটেমাটি তলিয়ে যাওয়ার পরে চরে গিয়ে বসবাস শুরু। তখন ‘ঝাড়খন্ডের লোক’ বলে আমাদের ভোটাধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়। বহু আন্দোলনের পর ২০১১ সালে আমরা আমাদের ভোটাধিকার ফিরে পেয়েছি। এতদিন পরে ফের পঞ্চায়েত ভোট দিতে পারব ভেবে আনন্দ হচ্ছে।” এবার ওই চরেই ভোটগ্রহণ কেন্দ্র হচ্ছে। মালদহের জেলাশাসক গোদালা কিরণকুমার বলেন, “চরের বাসিন্দাদের যাতে ভোট দানে কোনও অসুবিধা না হয়, সেই কারণে চরের মধ্যেই ভোট গ্রহণ কেন্দ্র করা হয়েছে।”
হামিদপুরের চরে ঝুঁকি নিয়ে গ্রামবাসীদের নিত্য যাওয়া-আসা। মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
নাগরিকত্ব প্রমাণ হলেও, নাগরিক সুযোগ সুবিধে কিছুই মেলেনি হামিদপুর চরের বাসিন্দাদের। কাতলামারি গ্রামের বৃদ্ধ মঞ্জুর আলম ও জানকী সরকারটোলার বিকাশ মন্ডলরা জানান, চরে ৪৫১ টি পরিবার বাস করে। মাস ছয়েক আগে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে উঠলেও চরে কোনও রাস্তাঘাট নেই। কোনও উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র বা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র নেই। পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা নেই। আসেনি বিদ্যুৎ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝড় জল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে প্রতিদিন চরে বাসিন্দাদের নৌকায় চেপে গঙ্গা পারাপার হয়ে স্কুলে যেতে হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য মোথাবাড়ি কিংবা বাঙাটোলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হচ্ছে। মঞ্জুর আলম বললেন, “এতদিন আমাদের কোনও প্রতিনিধি পঞ্চায়েতে না থাকায় আমাদের সমস্যার সমাধান হয়নি। এবার চরের প্রতিনিধিকে সামনে রেখে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হবে।”
মালদহ থেকে ২৫ কিলোমিটার পঞ্চানন্দপুর। সেখান থেকে বাঁধের উপর লালমাটির মোরামের উপর দিয়ে চার কিলোমিটার পথ পেরোনোর পর ৮ নম্বর বাঁধ। বাঁধ শেষ হতেই সামনে গঙ্গা। নৌকায় গঙ্গার খাঁড়ি পার হয়ে পৌঁছতে হয় হামিদপুর চরে। ৭ কিলোমিটার লম্বা, ৫ কিলোমিটার চওড়া হামিদপুর চর। আশির দশক থেকে নব্বই দশকের মাঝে বিধ্বংসী গঙ্গা ভাঙনে মালদহের কালিয়াচক ২ নম্বর ব্লকের কাঁকড়িবাঁধা ঝাউবোনা নামে একটি গ্রাম পঞ্চায়েত পুরোটাই তলিয়ে গিয়েছে। তার পরে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাঙন দুর্গতরা গঙ্গার বুকে জেগে ওঠা বিভিন্ন চরে আশ্রয় নেয়।
সর্বস্ব হারিয়ে ওই হামিদপুর চরে বসবাস শুরুর পরে কালিয়াচক ২ নম্বর ব্লকের এক সময়ের স্থায়ী বাসিন্দারা হারিয়ে ফেলেন সমস্ত অধিকার। চরে বসবাসকারী বাসিন্দাদের ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা বলে তাঁদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। সমস্ত সরকারি সূযোগ থেকেও চরের বাসিন্দাদের বঞ্চিত করা হয়। এর পরে বাসিন্দারা নিজেদের ভোটাধিকার ও মৌলিক অধিকারের দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। অবশেষে ২০১১ সালে রাজ্যপাল ও নিবার্চন কমিশনের হস্তক্ষেপে হামিদপুর চরের বাসিন্দারা ভোটাধিকার পান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.