নারী নিগ্রহ বন্ধে বিশিষ্টদের সাহায্য চান মমতা
নারী নির্যাতন রুখতে এ বার শিল্পী, সাহিত্যিক, সংবাদমাধ্যমের সাহায্য চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কামদুনি-কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতার রাজপথে বিশিষ্ট জনদের ডাকা মিছিলের ঠিক পরের দিন।
শনিবার বাঁকুড়ার খাতড়ায় পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারসভায় কলকাতার মিছিলের কথা উল্লেখ না-করলেও মমতা বলেন, “মেয়েদের উপরে নির্যাতন হলে আমরা স্ট্রং অ্যাকশন নিচ্ছি। আমার যেমন দায়িত্ব রয়েছে, সিনেমা-সাহিত্য-নাটকে আপনাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। আমি অনুরোধ করব নাটক, গল্প, সিনেমা, চ্যানেলগুলোয় যাঁরা আছেন, আপনারা মানুষের মধ্যে একটু জাগরণ করুন। এটা যে খারাপ কাজ, তা সামাজিক ভাবে বোঝানোর জন্য আপনাদের সকলের সাহায্য চাইব।”
তবে সরাসরি না বললেও বিশিষ্ট জনদের আপাতত তিনি কী চোখে দেখছেন, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “দু’-এক জন একটা মিছিলে হাজির থেকে বলছেন, তাঁরা পরিবর্তন এনেছেন। আমি ২৬ দিন অনশন করেছিলাম। ক’জন ছিলেন? মহাশ্বেতাদি (দেবী) এসেছিলেন। তাঁর কাছেও আমি কৃতজ্ঞ। যাঁরা পরিবর্তন নিয়ে আসার দাবি করছেন, তাঁদের বলি এটা ৩৪ বছরের লড়াই। এক দিনে হয়নি। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আগে বানতলা-ধানতলা, ২১ জুলাই-ভিখারি পাসোয়ান হয়েছে। আমি ছিলাম।”
তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য মিছিলে যোগদানকারীদের অবস্থান নিয়ে সোজাসুজিই প্রশ্ন তুলেছেন। এ দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের চকফুলডুবি বাজারে গিয়ে তিনি বলেন, “শুক্রবার কলকাতায় যাঁরা মিছিল করলেন, তাঁরাই কি শুধু বিদ্বজ্জন? আমরা কি শিক্ষিত নই? মিছিলের সামনে-পিছনে অন্য দলের নেতা-কর্মীদের দেখা গিয়েছে।”
বৃষ্টি মাথায় নিয়েই খাতড়ার সভায় তৃণমূল সমর্থকরা। —নিজস্ব চিত্র
বাম আমলের শেষের দিকে বিশিষ্ট জনেদের অনেকেই তৃণমূলের হয়ে মুখ খুলেছিলেন। তাঁদের সমর্থন মমতার বাংলা জয়ের পথ খানিকটা হলেও প্রশস্ত করেছিল বলে অনেকের মত। কিন্তু তিনি যে সেটা মনে করেন না, তা এ দিন স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “সবাই এমন বলছে, আমাকে যেন খাইয়ে দিয়েছে। আর আমি খেয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গেলাম। আমাকে তো বেশি খাটতে হচ্ছে। না হলে বেঁচে যেতাম। অন্য কেউ দায়িত্ব নিত। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মুটের মতো খাটব, আবার গালাগালও খাব! হতে পারে না।” টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে যাঁরা সরকারের সমালোচনা করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ বজায় রেখে মমতা এ দিনও বলেন, “মাথায় রাখবেন, সব খবর রাখি। বলি না, ভদ্রতা করে।” রাজ্যে নারী-নিগ্রহের ঘটনা বাড়ছে, এই অভিযোগ অস্বীকার করে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “একটা ক্রাইম রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলা না কি ধর্ষণে প্রথম! কেরল, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ের রিপোর্ট ওঁরা দেখুক। আমাদের রাজ্য বড়, জনসংখ্যাও বাড়ছে।”
পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে যাওয়া মমতা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনা এবং বিরোধীদের বিরুদ্ধে ‘সর্বনাশা জোট’ তৈরির অভিযোগও তুলেছেন। দাবি করেছেন, কিষাণ ক্রেডিট কার্ড করায় ব্যাঙ্কগুলি বাধা দিচ্ছে। দলের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে চাষিদের নিয়ে ব্যাঙ্কগুলির বাইরে ধর্না শুরু করতে। এ দিনও তিনি বিরোধী দলগুলি ও মাওবাদীদের বিরুদ্ধে তাঁকে খুন করার চক্রান্ত জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু অবশ্য পুরুলিয়ায় বলেন, “উনি (মমতা) নিজে এত দিন মাওবাদীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। কিষেণজি নিজে মমতাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। আর এখন উনিই এ সব বলছেন?” আর বর্ধমানের কাঁকসা এবং অন্ডালে জনসভায় বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রর মন্তব্য, “সমাজবিরোধীদের যে ভাবে নামিয়েছেন, ভাবছেন তৃণমূল বলে আপনারা নিরাপদে থাকবেন? এরা আপনাদেরও ছাড়বে না। এখনও সময় আছে। কলকাতায় যে সব মিছিল বেরোচ্ছে, সেখানে হাঁটুন।”
শুক্রবার মানবাজারে সভায় আসা কিছু লোক মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার মাঝেই বেরিয়ে গেলেও এ দিন খাতড়ায় বৃষ্টির মধ্যেও সভায় আসা জনতাকে ছাতা মাথায় টানা বসে থাকতে দেখা যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বর্ষার মধ্যে ভোট করায় আমি দুঃখিত। আদালত ও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ভোট হচ্ছে। আমরা চাই ভোট হোক।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.