রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ১...
আমার এই এক বছর
মি পিঙ্কি প্রামাণিক। নাম শুনেছেন হয়তো অনেকেই। আমাকে ট্র্যাকে দৌড়তে না দেখে থাকলেও, পোডিয়ামে ভারতের জন্যে মেডেল নেওয়ার ছবি না মনে থাকলেও, গত বছর ঠিক এই সময়ের কয়েকটা ছবি নিশ্চয়ই খুব ভাল করে মনে আছে। টিভি-র পরদায় নিশ্চয়ই দেখেছেন কী ভাবে আমাকে হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে লক-আপে বা জেলে বা কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খবরের কাগজের পাতায় নিশ্চয়ই দেখেছেন, কী ভাবে আমার শরীর নিজের হাতেই মেপে দেখার চেষ্টা করছে পুলিশ। জেলে থাকার সময় বুঝতে পারিনি বাইরে কত হইচই হচ্ছিল। যখন আমায় ভ্যানে করে কোর্টে বা হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হত, রাস্তার লোকে আমায় দেখে খুব হইহই করত। অবাক হতাম, ভাবতাম, পুলিশ ভ্যানে কাউকে দেখে মানুষ তো এত উত্তেজিত হয় না। প্রথম বার এসএসকেএম থেকে ফিরে পরের দিন জেলে একটা খবরের কাগজ দেখতে পাই। একটা ছবিতে দেখি, মানুষ এসএসকেএম-এ আমায় দেখার জন্যে গাছে উঠে দাঁড়িয়ে আছে। সেই দিন বুঝলাম, আমাকে নিয়ে মানুষের কী কৌতূহল! ক্রিকেট মাঠে যে ভাবে সাততলা বাড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে মানুষ খেলা দেখে, ঠিক ওই ভাবে আমার মতন এক জন ‘উদ্ভট’ জীবকে দেখতে ভিড় হয়েছিল।
জেলে আমায় ছেলেদের ভাগের একটা আলাদা সেলে রাখা হয়। প্রথম যে দিন জেলে গিয়েছি, চুপ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম। পাশের সেল-এর কয়েদিরা তখন আমায় এসে এসে দেখে যাচ্ছে। আমায় ঘুমন্ত ভেবে জোরে জোরে আলোচনাও করছে আমার লিঙ্গ নিয়ে। আদ্ধেকেই রসিকতা করছে। ‘ছেলে না মেয়ে, না কি দুটোই?’ ‘এত দিন কি তা হলে মেয়ে সেজে খেলাধুলো করল?’ এক জন পুলিশ আমায় সরাসরি জিজ্ঞেস করেছিল, ‘ট্রেনে যাদের দেখা যায়, তুমি কি তা-ই?’ ভদ্রতা করে ‘ছক্কা’ শব্দটা ব্যবহার করেনি হয়তো।
আদালত যখন উপচে পড়ত ভিড়ে, বুঝতে পারতাম, আমার লিঙ্গ-নির্ধারণ পরীক্ষার ফল হাতে আসার আগেই মিডিয়া নিশ্চয়ই ঝড় তুলে দিয়েছে স্রেফ এটা আন্দাজ করে যে, রিপোর্টে কী থাকতে পারে। তার সমস্ত ডিটেলে বিশ্লেষণ আপনারা নিশ্চয়ই শুনেছেন বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠানে। আমার শরীরটা ঠিক কী রকম, তা আপনাদের অনেকটাই জানা। না-জানার কোনও কারণ তো নেই। রমরম করে বিলোনো হয়েছিল একটা এমএমএস। আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তোআমি মেয়ে না ছেলে, সেই উত্তরটা নিশ্চিত ভাবে জেনে ফেলতে উৎসাহ ভরে জোগাড় করেছিলেন সেটা।
জানি না, তাতে মিটেছে কি না আপনাদের কৌতূহল। শুধু জানি, যে দিন জেলে বসে এই এমএমএস স্ক্যান্ডাল-এর কথা আমার কানে এল, যে দিন বুঝলাম কত কোটি লোকের সামনে আমি উলঙ্গ, সে দিন আমার মনের অবস্থা কী হয়েছিল। বাঁচার ইচ্ছে চলে গিয়েছিল। অনেক ভেবে, জুতোর ফিতে দুটো খুলে ফেলেছিলাম, কিন্তু ওই দুটোকে জুড়ে কত বড় আর দড়ি হয়?
আমি অন্য রকম বলে অনেক কিছুই সহ্য করে বেঁচে থাকতে হয়েছে এত দিন। আমি জানতাম, আমার অনেক সহ্যশক্তি। তবু এই এক বছরে কখনও কখনও অবাক হয়েছি নিজের সহ্যশক্তি দেখে। উমা মেডিকালে যখন হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আমার হুঁশ আসে, তখন দেখি, যে হাসপাতাল-স্টাফ আমার ট্রলি ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে, সে কারও অর্ডার মেনে আমায় বিবস্ত্র করার চেষ্টা করছে। আমি প্রতিবাদ করায় আমায় একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হল দোতলায়। পুলিশকে তখন বললাম, আমার বাবা-মাকে খবর করতে। তারা শুনল না। আমি প্রতিবাদ করছি বলে আমায় স্যালাইন দেওয়ার নাম করে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় আর পুলিশের আদেশে ক্রেপ-ব্যান্ডেজ দিয়ে হাত-পা বেঁধে দেওয়া হয়। আমি ঘুমিয়ে পড়ি। যখন ঘুম ভাঙে, দেখি আমার হাত-পা বাঁধা, আর ডাক্তার, পুলিশ, ট্রলি নিয়ে আসা স্টাফ, সকলে মিলে আমার উলঙ্গ শরীর খুঁটিয়ে দেখছে।
এক বার নয়, বার বার লিঙ্গ নির্ধারণ পরীক্ষা করা হয়েছে আমার। যেখানে প্রথম দিন থেকেই এটা পরিষ্কার যে, আমার পক্ষে ধর্ষণ করা সম্ভব নয়, সেখানে বার বার আমায় পাঠানো হয়েছে মেডিকাল টেস্টের জন্য। পরীক্ষা করার আগে এমন কথাও আমাকে এক জন বলেছে, ‘আমার এখানে কোনও লজ্জা পেয়ো না। এখানে অনেক ডেডবডি আসে, পোস্টমর্টেমের সময় তাদের সব কিছুই আমি দেখি।’ আমি যে ডেডবডি নই, সেটা হয়তো তার ঠিক মনে ছিল না। যখন পরীক্ষা হত, যে পুলিশদের সেখানে কোনও কাজ নেই, আমি তাদের সরে যেতে বলতাম। এক জন দু’জন ঠিক থেকে যেত। ঘুরে ঘুরে এসে তারিয়ে তারিয়ে দেখে যেত আমায়।
এগুলো কি এক রকমের ধর্ষণ নয়? আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি নিজেকে মেয়ে মেনে। ডানপিটে হতে পারি, চালচলন আলাদা হতে পারে, জোরে বাইক চালাতে পারি, কিন্তু তাতেই তো ছেলে হয়ে গেলাম না। পুলিশের হাজতে, ডাক্তারের টেবিলে, মিডিয়ায়, অফিসে বাসে ট্রামে বৈঠকখানায় মুুখরোচক গল্পে হাসিতে মজায়, ‘রেপ’ করা হয়েছে আমাকে, সবার সামনে। আজও হয়ে চলেছে। এখনও নিয়মিত কোর্টে হাজিরা দিতে হয় আমাকে। আমার সামনেই চর্চা হয় আমার মেডিকাল রিপোর্ট নিয়ে। আমার শরীরে ঠিক কোথায় কী আছে, তা দিয়ে কতটা কী করা সম্ভব, সেটা নিয়ে আদালতে যখন বাক্বিতণ্ডা চলে, আমায় চুপ করে তা হজম করতে হয়।
প্রথম দিন থেকে অপেক্ষা করেছিলাম, কবে মেডিকাল রিপোর্ট বেরোবে আর সব সত্যি সামনে এসে যাবে। কিন্তু মেডিকাল রিপোর্টের এমন বিকৃত ব্যাখ্যা প্রচার করবে মিডিয়ার একটা অংশ, বুঝতে পারিনি। ধৈর্য ধরে বসেছিলাম এই ভেবে, পুলিশ চার্জশিট জমা করলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে যে আমি ধর্ষক নই। কিন্তু, কী অভিসন্ধি নিয়ে আমার নামে এ রকম মিথ্যে অভিযোগ করা হল, জানি না। জানি, কোনও এক দিন সত্যিটা বেরবেই, আর আমার জয় হবে ।
এমএমএস-ক্লিপ’টা নাকি একটা টিভি চ্যানেল অবধি দেখিয়েছিল। তাই এত কিছুর পর যখন জামিন পাই, আর আবার চাকরি করতে শুরু করি, তখন রাস্তায় বেরোতেই লজ্জা করত, সিঁটিয়ে যেতাম। যখন খুব মনের জোর করে রাস্তায় বেরোই, চিড়িয়াখানার জন্তু দেখার মতোই ভিড় হয় আমায় দেখতে। বোধ হয় সবাই নিজের চোখে যাচাই করে নিতে চায়: আমি পুরুষ না মহিলা। কলকাতার বাড়িতে কখনও মা এসে থাকে, কখনও আমি একাই থাকি। একা থাকলে, বাড়িতে রান্না নিজেই করি। এক দিন আর রান্না করতে ইচ্ছে করল না, খাবার আনতে দোকানে গেলাম। সেখানে খাবার নিতে এক মহিলা আর দু’জন লোক দাঁড়িয়েছিল। তারা আমাকে দেখে হেসে গড়িয়ে পড়ে আর ফিসফিস করে, ‘বল্ তো, এটা ছেলে না কি মেয়ে?’ আমি বললাম, ‘আমাকে বলছেন?’ তখন ‘না না, অন্য কথা বলছি’ বলে সরে পড়ল। বনগাঁ থেকে ফুটবল ম্যাচে প্রাইজ দিয়ে ফিরছি, পাশের গাড়ি থেকে একই প্রশ্ন, একই রকম হাসি, বিদ্রুপ। রোজ শিয়ালদহ স্টেশনের প্লাটফর্মের সামনে দাঁড়িয়ে যখন টিকিট চেক করি, কম করে পাঁচ-সাত জন যাত্রী হাঁ করে চেয়ে থাকে। কেউ কনুই দিয়ে গুঁতো মেরে অন্যকে দেখায়, কেউ একদম কাছে এসে ওপর-নিচ মেপে দেখে। কেউ কেউ সরল মনে প্রশ্ন করেই ফেলে। যেমন এক ঠাকুমা আমায় জিজ্ঞেস করেন ‘মা, একটা কথা জিজ্ঞেস করব? তুমি আমার মা না বাবা?’ আমি বললাম, ‘ঠাকুমা, তোমার যা মনে হয় তা-ই আমায় বলো।’
কখনও ব্যাপারটা আরও কুৎসিত। দিঘার কাছে গেছি একটা শুটিং-এর কাজে, হোটেলে ঢুকছি। কিছু মাঝবয়সি লোক সেই হোটেলেই উঠেছে, আমায় দেখেই তাদের চোখমুখ পালটে গেল। এক জন আর এক জনকে চেঁচিয়ে বলল, ‘এই সেই মালটা না? এইটাই রে! ওই যে বডি-তে কী আছে। মেয়েও নয়, ছেলেও নয়। মহা ক্রিমিনাল। একটা মেয়েকে রেপ করল। এটাই সেই পিঙ্কি প্রামাণিক। অ্যাক্কেবারে শিয়োর!’ আমার বন্ধু সঙ্গে ছিল, সে আর থাকতে না পেরে চিৎকার করে উঠল। তাতে থেমে যাওয়া তো দূরের কথা, লোকগুলো এগিয়ে এসে বন্ধুকে জিজ্ঞেস করল, ‘বলুন না, এ কি সে-ই?’ তখন আমি বললাম, ‘আপনাদের মতন তো আমরা ভদ্র নই, তাই আপনাদের সাথে ভদ্র ভাবে কথা বলতে পারব না।’
আপনাদের অনেকেই নিশ্চয়ই আমাকে জিজ্ঞেস করতে চান আমার বাবা-মা একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে প্রতিযোগিতাতে নামিয়েছে কি না। জানতে চান আমি ঠকিয়েছি কি না। আসলে আমি কে, বা আসলে আমি কী। আমিও আপনাদের কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই। সব কাজ ফেলে আমায় দেখতে ভিড় করার সময়, আমার দিকে আঙুল দেখিয়ে হাসার সময়, আমার নামে জোরে জোরে জঘন্য কথা বলে আমায় অপমান করে মজা পাওয়ার সময়, আপনাদের এক বারও মনে হয় না, এ একটা মানুষ? এ একটা কুকুর নয়, বেড়াল নয়? এর একটা মন আছে? সেখানে আপনাদের হাসিগুলো দগদগে ঘা করে দিচ্ছে? এর কতগুলো অধিকার আছে? সেগুলো আপনার অধিকারের সঙ্গে সমান? এর শরীরটাকে উলঙ্গ দেখার দাবি আর আপনার শরীরটাকে উলঙ্গ দেখার দাবি একই?
এখন নিজেকে অন্য রকম করে গড়ে তুলছি। কে কী বলে, কতটা হাসে, তাতে আমার যায়-আসে না। আমি পিঙ্কি প্রামাণিক। এইটেই আমার পরিচয়। ‘ছেলে’, ‘মেয়ে’, এ সব তো মানুষের দেওয়া নাম। এই নিয়ে মাথাব্যথা করি না। ঠিক যেমন মাথাব্যথা করি না মানুষের অসীম কৌতূহল দেখে। আমার এই ছাব্বিশ বছরের জীবনে আমি অনেক কিছুর মধ্যে দিয়ে গেছি। বারো বছর বয়সে প্রথম কলকাতা আসি। সেই থেকেই আমি স্বাবলম্বী। ২০০২ সালে প্রথম ভারতের বাইরে পাড়ি দিই, তার পর একের পর এক বিদেশ সফর। যত ঘুরেছি তত শিখেছি। জেনেছি, আমার গ্রামের বাইরে কত বড় একটা পৃথিবী রয়েছে। কখনও সফলতা দেখেছি, কখনও ব্যর্থতা। সাফল্য আমার মাথা ঘুরিয়ে দেয়নি, আর ব্যর্থতা পারেনি আমায় রুখতে।
আমি জানি আমি দুর্লভ। আমাদের মতন কাউকে সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না বলেই সকলের আমাদের নিয়ে এত কৌতূহল। তাই তো আমার অনন্যতাকে যাচাই করে দেখতে এক দল ক্ষমতাশালী মানুষ আমায় তুলে নিয়ে গিয়ে কী না করল! জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আমি যখন সাহায্যের জন্যে ছুটে বেড়াচ্ছি, এক বড় নেতা আমায় বলেন, ‘আইন আইনের কাজ করবে, এটাই তো নিয়ম।’ আমি মেনে নিলাম। আইন তো আইনের কাজ করবেই। এবং আইন সকলের বেলাতেই সমান। আমি দোষ করে থাকলে যেমন আমার শাস্তি প্রাপ্য, আমার সঙ্গে অন্যায় হলে, যে বা যারা অন্যায় করেছে, তাদেরও নিশ্চয়ই শাস্তি পাওয়া উচিত। পুলিশ আমায় অন্যায় ভাবে ধরে নিয়ে গেল, উমা মেডিকাল-এ জোর করে আমার শারীরিক পরীক্ষা করা হল, পরে আমার গোপন মেডিকাল রিপোর্ট সাংবাদিকদের হাতে তুলে দেওয়া হল অথচ এদের কারও কোনও শাস্তি হল না! আমার বিরুদ্ধে যে নালিশ করেছে, সে এমএমএস বিলিয়ে দিল, তা নিয়েও কেউ কিছু বললেন কই?
এখনও আগের বছরের কথা মনে পড়লে কান্না আসে। ট্র্যাকে দৌড়ে কিছু স্বীকৃতি পেয়েছিলাম। এই কলঙ্কময় মিথ্যে অভিযোগ সেই স্বীকৃতিকে নষ্ট করে দিয়েছে। কিছু দিন আগে স্টকহোমে, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি-র মেডিকাল কমিশনের চেয়ারম্যান আমার গবেষক-বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেন আমার কথা। এ কথা কানে আসায় খুব কষ্ট হল। এক কালে স্বপ্ন দেখেছিলাম অ্যাথলেটিক ট্র্যাকে দক্ষতা দেখিয়ে সারা পৃথিবীতে নাম করব। অথচ আজ মিথ্যে অভিযোগের ফলে আমার শরীরকে নিয়ে যে হইচই, তার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার মানুষ আমায় নাকি চিনে গেছে। এমন স্বীকৃতি আমি চাইনি।
১৩ জুন, ২০১২ রাত্তিরে আমায় পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। সেই দিন থেকে আমার জীবনটা যেন পুরোপুরি পাল্টে গিয়েছে। চাপা কষ্টে ভুগেছি দিনের পর দিন। ক্যামেরার সামনে হাসিমুখে থেকেছি, আড়ালে কেঁদেছি। মানুষের ওপর সব ভরসা হারিয়েছিলাম। জেল থেকে বেরিয়ে তাই একটি কুকুর পুষতে শুরু করি। সে-ই আমার সারা ক্ষণের সঙ্গী। অবশ্য এটা বলা দরকার, এই ঘটনার সময় অনেকেই আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তার মধ্যে মিডিয়ার কয়েক জনও আছেন। তবে আমাকে নিয়ে লেখালিখি কমতে থাকলে অনেকেই ভুলে যান আমার কথা। কিন্তু কাগজের হেডলাইনে না-থাকা মানে তো এই নয় যে, আমি আবার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছি। প্রত্যেক দিন স্ট্রাগ্ল করে চলতে হয় আমাকে। কয়েক জন মানুষ যদি এই দুঃসময়ে পাশে না থাকতেন, বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে উঠত। তাঁদের মধ্যে আমার পরিবারের বাইরেও রয়েছেন কেউ কেউ। পয়োষ্ণী, দেবলীনাদি, পারমিতাদি, স্যাফো ফর ইকুয়ালিটি-র কিছু সদস্যা, যেমন মালবিকাদি ও উজ্জয়িনী, আমার অফিসের বন্ধুরা এবং আমার স্যর শ্যামল বিশ্বাস এঁদের থেকে অনেক সাহায্য পেয়েছি। শিখেছিও অনেক কিছু। নিজেকে আবার ভালবাসতে শিখিয়েছেন এঁরা। বুঝিয়েছেন, আমি একা নই। আমার মতন আরও অনেকে আছেন যাঁরা নীরবে ভুগছেন। আজ এই চাপা রাগ, অভিমান, দুঃখ আমায় যে জেদ দিয়েছে, তা আমি কাজে লাগাতে চাই অন্যায়ের মোকাবিলা করতে। আঙুল তুলে দেখিয়ে দিতে চাই মানুষকে, অন্যায় হয়েছে এবং হচ্ছে। যারা এখনও আমায় রাস্তায় দেখে প্রশ্ন করে আমি মেয়ে না ছেলে, পালটে দিতে চাই তাদের ভাবনাকে। পালটে দিতে চাই এই সমাজকে, যেখানে প্রায় সকলে আমার অন্য রকম হওয়াকে ঘেন্না বা রসিকতার চোখে দেখে। আমার পর যেন আর কোনও মানুষকে এই হেনস্থার মধ্যে দিয়ে না যেতে হয়।
গত এক বছরে অনেক কিছু পালটেছে। অনেক কিছু হারানোর সঙ্গে সঙ্গে, দেখতে শুরু করেছি নতুন কিছু স্বপ্ন। সে পাহাড় চড়ার স্বপ্ন বা ট্র্যাকে দৌড়নোর স্বপ্নই হোক, কিংবা যৌন সংখ্যালঘুদের লড়াইয়ের অংশ হবার স্বপ্ন, বা ভালবাসার স্বপ্ন।
আজ ইচ্ছে করছে আবার ঘুরে দাঁড়াতে।

(কৃতজ্ঞতা স্বীকার: ড. পয়োষ্ণী মিত্র)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.