বাজার কিন্তু ব্যাজার নয়

সোনাঝুরির মাঠে
একখানা মিঠে ঠান্ডা শনিবার দেখে, শান্তিনিকেতন থেকে তিন কিলোমিটার মতো এগিয়ে যাও। প্রথমে পাবে শ্যামবাটী ক্যানাল। তারই পাশ দিয়ে একটা রাঙামাটির রাস্তা। ব্যস্, সিধে এগিয়ে গেলেই পাবে একটা সবজে গালচে আর সুন্দর একটা আকাশ। ওইখানেই বসেছে মেলা বলো মেলা, বা হাট বলো হাট। কিন্তু বাজারের প্লাস্টিকের ছাউনি, ছাই-ধুলো, প্যাকেট-আবর্জনা কিচ্ছুটি পাবে না। কারণ, এই বাজারের থিম প্রকৃতি। হাতে বানানো জিনিস বিক্রি করতে হবে এবং পরিবেশকে এক ফোঁটাও বিরক্ত করা চলবে না। এই হল এই হাটের কানুন। ঘাসের ওপর ঝিলমিল করছে কাঠ, পুঁতি বা মাটির গয়না, হাতে বোনা সুদৃশ্য ঝোলা, মোম স্ট্যান্ড, দেওয়ালে টাঙানোর ছবি, বন্ধুকে দেওয়ার গ্রিটিংস কার্ড আর কত্ত বাজনা। বাঁশি, একতারা, দোতারা! যাঁরা বিক্রি করছেন তাঁরা স্থানীয় শিল্পী আর কলাভবনের ছাত্রছাত্রী। আর কিনছেন যাঁরা? হাটুরের বেশে এ তো আমাদের পার্ক স্ট্রিট বা ওদের ক্যালিফোর্নিয়ার লোকরা।
যাঁরা পাশেই বাড়ি করে থাকেন বা উইক-এন্ড-এ ঘুরতে এসেছেন। আরে, বেজায় মজা পাচ্ছ দেখছি, তা একবার স্বচক্ষে দেখেই এসো না কাণ্ডকারখানা!
বাজার কি ওড়ে?
জবাব, কা ফারোশি! পুল-এ-কিহশ্তি কে পিছে! ঠিক ধরেছেন জাঁহাপনা, আমরা এখন কাবুলে ঘুরছি। চার দিকে ভুরভুর করছে পুরনো দিনের গন্ধ। সরু গলির তস্য গলি, গাড়ি কেন রিকশাও ঢোকে না যেখানে। তারই ভেতরে ইটের ইমারত, ঘেঁষাঘেঁষি খাঁচার পরে খাঁচা। তারই ভেতরে এক নাম সার্থক বাজার বসেছে। কান ঝালাপালা গান ধরেছে পুঁচকে বুলবুল, কাবলি টিয়া। দীর্ঘচঞ্চু বাঁকিয়ে ফুঁসছে যুদ্ধবাজরা। ঝগড়াটে কাউক, মানে তিতির-ভারুইগুলো ঝুঁটি লোম ফোলাচ্ছে। যত রকম পায়রা, তত রকম বকমবকম। কেউ পাখিদের নিয়ে যাচ্ছে আদর করে, কেউ লড়াই দেখাবে বলে দর করছে। এই চত্বরেই তো ফি শুক্কুরবার বসে খেলার আসর। তিতিররা বেদম লড়ে, মানুষেরা তাদের ওপর বাজি ধরে। ঝিকমিক চোখের খরগোশছানাও পাবে ক’খানা। পাখির খাঁচাগুলোও দিব্যি দেখবার জিনিস। এমন এক বিচিত্র বাজার কিন্তু আমাদেরও আছে। কিন্তু রোসো, নিজের মুলুক হলেও গ্যালিফ স্ট্রিটের রবিবারের পোষ্য বাজারকে হালকা নিয়ো না। শোনা যায়, সেখান থেকে বাজিলেয়ো বেড়াল কিনে এক কাকু তাকে স্নান করাচ্ছিলেন, এমন সময় কার্নিশ থেকে মাছচোর কালীচরণ ঝাঁপ মেরেই, প্রবল মিঁয়াওকিঁয়াও। কারণ, খুদেটা তারই খোয়া যাওয়া ছোটখোকা। ভয় পেয়ো না, ভয় পেয়ো না। দেখেশুনে নিলে, ওরা তোমায় ঠকাবে না।

জলে ভাসে? রেলে চড়ে?
আলবাত। ওই ব্যাংককে একটা বাজার বসে না, খালের ওপরে, যেখানে নৌকোয় ভেসে ভেসে বেসাতি আর খরিদ্দারি করতে হয়? তারই একটু দূরে এক গজব সব্জি বাজারও বসে, ট্রেনরাস্তার ওপর।
ঢাকুরিয়ায় যারা থাকো, বা যারা ছোট লাইনের ট্রেনে চড়েছ, কখনও কখনও এ দৃশ্য চাক্ষুষ করে থাকবে। তবে, তাইল্যান্ড-এর মেকলং আরও বড় খতরো কে খিলাড়ি।
সেখানে কিন্তু রেললাইন আর বাজারের মধ্যিখানে এক মিলিমিটারও ফাঁক নেই। ট্রেন আসা-যাওয়ার সময়টা ওদের মুখস্থ।
সময় হলে, সিগনাল দেখলে, ফল-সব্জি-মাছ-মাংস প্লাস্টিকের চাদর চাপা দিয়ে দে দৌড়! ট্রেন চলে গেলে, আবার হইহল্লা মাছের বাজার শুরু। রোজ এমনিই চলছে।
গল্প আছে, এক বার নাকি কোনও এক স্টলে দরাদরি মাঝরাস্তায়, এমন সময় ট্রেনের টাইম হয়ে গেল। দোকানওয়ালা কিছুতে ব্যবসা ছাড়ল না। ট্রেনকে ‘এইয়ো রোককে’ বলে দাঁড় করিয়ে, খদ্দেরকে থলে ভরে রওনা করে, তবে সে হাত দেখাল। ট্রেনও তাকে একটা ভোঁঁওওও সেলাম দিয়ে, কেঁচোর মতো ল্যাগব্যাগ করে এগোল!

একঠো ভূত মাংগতা
সোওওজা চলে যাও দক্ষিণ আমেরিকা। ওদের ইনকাপট্টিতে ভূত-প্রেত-দত্যি-দানোর রমরমা কারবার। বলিভিয়ার রাস্তাতেই বসে ডাইনিবিদ্যার বাজার। রাস্তা জুড়ে আলখাল্লা জোব্বা পরা কারা বসে বসে স্ফটিকের ওপর হাত বুলিয়ে ভবিষ্যৎ বলে। মাথায় পালকপরা ওঝারা বিদ্যে ফলায়। তাঁবুর ভেতর জাদুগরনি মায়ার খেলা দেখায়। কোথাও আবার ছোরা ছুড়ে কামাল দেখায় জাগলার ছোকরা। দেদার বিকোয় পেঁচার পালক, অদ্ভুতম্ পাথরের আংটি। হ্যালোয়িনের সময় সেখানে জমজমাট কাণ্ড !
আফ্রিকাও যেতে পারো। টোগো দেশে লোম বলে এক লোমখাড়া করা শহর আছে। সেখানকার বাজারে মেলে চিতার মুণ্ডু, শিম্পাঞ্জির হাত, ঘোড়ার কলজে, হাতির থাবা। ওরে বাবা! নির্ঘাত ওগুলো খোনা গলার কারা মস্ত বালতিতে নেড়েচেড়ে ঝোল বানায়। তবে ওরা বলল, সে সব না! জায়গাটা ভুডু পণ্ডিতদের আস্তানা। তাঁরা পশুদের দেহের নানা প্রত্যঙ্গ থেকে বিশেষ উপায়ে ওষুধ বানান। যাক্, তবে ভাল কাজেই লাগে ওগুলো। আর এই যে, অনেক গল্প তো হল, আমি কিন্তু এ বার একটু জিরোব, রোববার বলে কথা! তোমরা বরং এখন অঙ্ক করো গে যাও। কেমন!

(সোনাঝুরির হাটের তথ্য: সুখেন্দু দাশ)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.