|
এক ঝলকে... |
পৃথিবী
১৬ জুন - ২২ জুন |
|
বিশ্বকাপ চাই না, বাঁচতে চাই |
• রিও ডি জেনেইরো • ফেসবুকের দুনিয়ায় গত কয়েক দিন ধরে একটা ছবি প্রবল ভাবে ঘুরছে একটি মেয়ে, তার হাতে একটা পোস্টার। সেই পোস্টারে লেখা, ‘আমরা ওয়ার্ল্ড কাপ চাই না। শিক্ষা, স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা চাই। আর সবার আগে, আমাদের সম্মান দাও’।
ছবিটি ব্রাজিলের। গত এক সপ্তাহ ধরে দেশটি উত্তাল হয়ে আছে ক্ষোভে। প্রেসিডেন্ট ডিলমা রসেফ-এর ওপর মানুষ বেদম চটে গিয়েছেন। ক্ষোভের আগুন ধিকিধিকি জ্বলছিলই, বিস্ফোরণ হল সপ্তাহের শুরুতে। দুই প্রধান শহর, রিও ডি’জেনেরো আর সাও পাওলোতে বাস ও মেট্রোর ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষিত হতেই মানুষ প্রতিবাদে রাস্তায় নামলেন। ক্রমে জুড়ে গেল অন্য রাগের কারণগুলোও প্রবল দুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, অর্থনীতির বেহাল অবস্থা। বৃহস্পতিবার রাতে দশ লক্ষ মানুষ রাস্তায়। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ চলছে, ছুটকোছাটকা লুঠপাটের খবরও আসছে। |
দেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্য বেশ কিছু কাল ধরেই খারাপ। প্রেসিডেন্ট নানান ভাবে সেই খারাপ স্বাস্থ্য চেপে রেখেছিলেন কৃত্রিম ভাবে জিনিসের দাম কমিয়ে রেখেছিলেন, রাজকোষ থেকে প্রচুর টাকা ব্যয় করছিলেন, যাতে মানুষের হাতে টাকা থাকে। ফলে জনপ্রিয়ও ছিলেন। এই মার্চ মাসেই দেশের ৭৯ শতাংশ মানুষ তাঁর পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু আলমারিতে লুকিয়ে রাখা কঙ্কাল এ বার বেরোতে আরম্ভ করেছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে আগামী ফিফা বিশ্বকাপের প্রস্তুতি। মাইনে বাড়ছে না, জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া হচ্ছে। এ দিকে সরকার বিশ্বকাপ আয়োজনে ব্যস্ত। সব মিলিয়ে, ব্রাজিলের মানুষ মর্মান্তিক চটেছেন। বিক্ষোভের প্রাবল্য দৃশ্যতই নেতাদের নাড়া দিয়েছে, আগামী বছরের ভোটের কথা ভেবে তাঁরা ভীত। প্রেসিডেন্ট রসেফ কয়েক দফা সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। তার আগেই অবশ্য গণতান্ত্রিক পথে বিক্ষোভ করার জন্য দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছিল তাঁর পার্টি। আর হ্যাঁ, বাসভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তটিও নাকচ হয়েছে।
|
• দোহা • কাতারের রাজধানী দোহায় ঝকঝকে প্রাসাদোপম নতুন অফিস-বাড়ি খুলল। তালিবান অফিস। হ্যা।ঁ প্রথম ও একমাত্র। অফিস খুলেই তারা ডাক দিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের। ওয়াশিংটন ডি সি-র চটপট জবাব: হ্যাঁ, অবশ্যই বৈঠক হবে, তবে তালিবানকেও হিংসাত্মক কাজকর্ম বন্ধ করতে হবে। তবে প্রেসিডেন্ট ওবামা কিন্তু একটা বিষয়ে নমনীয়তা দেখিয়েছেন, বলেছেন, এই শর্তপূরণের জন্য দ্বিপাক্ষিক কথাবার্তার সূচনা বন্ধ থাকবে না। |
কেবল আলোচনা যদ্দিন চলবে, তার মধ্যে তালিবানকে এই অভীষ্ট লক্ষ্যে এগোতে হবে। আপত্তিতে মুখিয়ে উঠেছে আফগানিস্তান। মার্কিন-আফগান বৈঠক বন্ধ হতে বসেছে মার্কিন-তালিবান আলোচনার প্রস্তাব আসতেই! আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই রেগে কাঁই: নতুন অফিসে না কি তালিবানের পরিচয় দেওয়া হয়েছে ‘ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তান’!
|
রাষ্ট্রপুঞ্জে তাঁর দেশের প্রতিনিধিত্ব করার কাজটা তাঁর নিজের পক্ষে খুব সুখকর নয় নিশ্চয়ই। সিন সন-হো, রাষ্ট্রপুঞ্জে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত, প্রত্যাশিত ভাবেই প্রবল রক্ষণাত্মক থাকেন সাধারণত। একে তো তাঁর দেশ সেই ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময় থেকে মার্কিন-বিরোধী গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত, এখনও তার বিরুদ্ধে মার্কিন বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা জারি। এই দেশ এক কালের ‘সোভিয়েত-ব্লক’-এর সদস্য, তার পর সোভিয়েত ইউনিয়ন দেশটি উঠে যাওয়ার পর সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার সবেধন নীলমণি বৃহৎশক্তি রিপাবলিক অব চিন-এর ঘনিষ্ঠ। অথচ দিনকাল যা দাঁড়িয়েছে, চিনও এখন উত্তর কোরিয়ার উপর মোটেও প্রীত নয়। বিশেষত মাস-দুয়েক আগে যখন দেখা গেল, দুই কোরিয়ার মধ্যে প্রায় যুদ্ধ লাগার জোগাড়, দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সোল-এর পায়ে পা লাগিয়ে সংঘর্ষকে উত্তপ্ততর করার চেষ্টা চলছে, সব নিষেধাজ্ঞার মুখে ছাই দিয়ে পরমাণু-অস্ত্রের পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে পুরোদমে, এবং একের পর এক মিসাইল টেস্ট চালানো হচ্ছে বেঁকে বসল চিনও। খুব করে ‘বোঝানো’ চলল যাতে পিয়ংইয়ং পিছু হটে। সমর-আহ্বানে ভাটা পড়ল কিছুটা।
এই পরিস্থিতিতেই হঠাৎ সিন সন-হো’র নাম ভেসে উঠল খবরে। রাষ্ট্রপুঞ্জের চত্বরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দিলেন, এসো, কথা বলি, চলো দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করি! বলে কী কোরিয়া? আমেরিকা-উত্তর কোরিয়া দ্বিপাক্ষিক বৈঠক? বাঘে-গরুতে দানিয়ুব-ঘাটে জলপান?
অবশ্যই সিন সন-হো আমেরিকা যে ষাট বছর ধরে লাগাতার উত্তর কোরিয়া-বিরোধিতা চালিয়ে যাচ্ছে, সেই ‘অন্যায়’-এর কথাও বলতে ছাড়েননি। আর বলেছেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অন্যান্য দেশকে এগিয়ে আসতে তাঁর দেশের সঙ্গে সম্পর্কস্থাপনে। পশ্চিমী দেশগুলির প্রতি কোরিয়ার এই উদাত্ত আহ্বান আগে কখনও শোনা যায়নি। প্রতিক্রিয়া যা-ই হোক, সিন সন-হো’র কথা মন দিয়ে শুনছেন পশ্চিমী নেতারা। তবে কি অন্য রকম ভাবছে কোরিয়া? |